বিজেপি থেকে কি ফের তৃণমূলে ফিরছেন দুই দলত্যাগী বিধায়ক? সোমবার বিধানসভার ঘটনাক্রম থেকে সেরকমই জল্পনা বাড়ল রাজনৈতিক মহলে ৷ তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া দুই বিধায়ক সুনীল সিং এবং বিশ্বজিৎ দাসকে নিয়ে এই জল্পনা ছড়িয়েছে কারণ উত্তর চব্বিশ পরগণার দুই বিধায়কই এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে গিয়ে দেখা করে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন ৷
যদিও দুই বিধায়কই প্রকাশ্যে একে সৌজন্য সাক্ষাৎই বলে দাবি করেছেন ৷ দুই বিধায়কের মধ্যে বিশ্বজিৎ দাস বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক আর সুনীল সিং নোয়াপাড়ার বিধায়ক ৷ সুনীল সিং আবার সম্পর্কে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং-এর শ্যালক ৷
এ দিন বিধানসভায় প্রথমে বিশ্বজিতের সঙ্গে দেখা হয় মুখ্যমন্ত্রীর ৷ তাঁকে দেখেই মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘কেমন আছো?’ সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে এসে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রণাম করেন বিশ্বজিৎ৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে যান তিনি ৷ বিশ্বজিতের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে যান সুনীল সিং-ও৷ প্রায় বাইশ মিনিট মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা ৷
সুনীল এবং বিশ্বজিৎ বেশ কিছুদিন ধরেই শাসক দলের শীর্ষ স্তরের দু’ একজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন বলে খবর৷ কারণ বেশ কয়েক মাস আগে বিজেপি-তে গেলেও সেখানে তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ দুই বিধায়কের ৷ আবার বিশ্বজিৎ প্রকাশ্যে কখনওই দলনেত্রীর বিরুদ্ধে কোনও কটূক্তি করেননি৷ তাঁর মূল অভিযোগ ছিল উত্তর চব্বিশ পরগণার জেলা তৃণমূল সভাপতি এবং খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে ৷ এ দিন অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সহ উত্তর চব্বিশ পরগণার বেশ কয়েক জন তৃণমূল বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন ৷
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর বিশ্বজিৎ এবং সুনীল দু’ জনেই দাবি করেছেন, উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়েই কথা বলতে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন৷ কিন্তু নির্বাচনের দোরগোড়ায় হঠাৎ উন্নয়নমূলক খাতে খরচ করা নিয়ে কেন দুই বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলেন, সেই প্রশ্ন উঠছে৷ এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘর থেকে বেরিয়ে দুই আঙুলে ‘ভিক্ট্রি’ সাইনও দেখিয়েছেন সুনীল ৷ তবে কি সুনীল- বিশ্বজিতের তৃণমূলে ফেরা শুধুই সময়ের অপেক্ষা? প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।
তবে বিশ্বজিৎ দাস এবং সুনীল সিংকে নিয়ে যখন জোর জল্পনা চলছে তারমধ্যেই এদিন বিকেলে রাজ্য বিজেপির নির্বাচনী দফতর হেস্টিংসে এক সভায় উপস্থিত ছিলেন দুই বিধায়ক। প্রসঙ্গত, এদিন ডুমুরজলায় বিজেপিতে যোগদানকারীদের রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে সম্বর্ধিত করা হয়। তবে আজ বিশ্বজিৎ ও সুনীল সিংদের নিয়ে এমন গুঞ্জন ছড়ানোয় তৃণমূলের উদ্দেশে কটাক্ষ করেন শুভেন্দু অধিকারী। এদিন শুভেন্দু বলেন, উনি তো বলেছিলেন দলের থেকে সব নোংরা বার হয়ে গিয়েছে। ও তো বিধানসভার মধ্যে কথা বলেনি। কথা বলেছে বাইরে। মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বজিৎকে কেন জিজ্ঞাসা করলেন, কী রে বিশ্বজিৎ? কোনও সিদ্ধান্ত নিলি? এই তো বিশ্বজিৎ দাস আমার সঙ্গে বসে রয়েছেন।
বিশ্বজিতের তৃণমূলে যোগদানের সম্ভাবনায় জল ঢেলেছেন দিলীপ ঘোষও। তিনি বলেন, বিশ্বজিৎ দাস ও সুনীল সিং দলকে জানিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন।
অন্যদিকে, শুভেন্দুর মতোই একই সুর তৃণমূলত্যাগী বিজেপি নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। তিনি বলেন, এতো বড়ো পরিবারে মধ্যে এসে যে সম্মান পেয়েছি তাতে অভিনন্দন জানাই। ঝুঁকি আমরা নিয়েছি। কিন্তু কেন নিয়েছি? কারণ আমরা যে কাজ বাংলার জন্য করতে চাই, সেটা বাস্তবায়িত করার জন্য এসেছি। আমি চাই আগামী দিনে সত্যি কারের বাংলা তৈরী হোক। কেন্দ্রের সহযোগিতা থাকলে তবেই উন্নয়ন হবে।
রাজীব আরও বলেন, আমাদের মধ্যে মানসিকতা নেই। ব্যক্তি স্বার্থ নয়, রাজ্যের স্বার্থে ভাবতে হবে। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে, মানুষের জন্য কাজ করব। কালো পতাকা দেখাক, ঢিল ছুঁড়ুক, কুৎসা করুক। ফ্রাস্ট্রেশান থেকে করছে। আগামী দিনে কেন্দ্র-রাজ্য ডবল ইঞ্জিন সরকার থাকলে সুবিধা হবে। প্রত্যয়ী রাজীবের কথায়, ২০২১ নির্বাচনে বিজেপি আসছে। দরকারে রাজনীতি ছাড়ব। তাও বেকার যুবকদের, শ্রমিক-কৃষকদের জন্য কাজ করব।
Be the first to comment