সরস্বতী পুজোর দিন অভিনব কায়দায় বিক্ষোভ দেখালেন মাদ্রাসার শিক্ষক ও কয়েকজন শিক্ষামিত্ররা। মঙ্গলবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির পিছনের দিকে আদিগঙ্গায় নেমে পড়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। ঘটনাস্থলে যান পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র৷ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ নিরাপত্তায় মোড়া জায়গায় কীভাবে আন্দোলনকারীরা প্রবেশ করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷
মঙ্গলবার সকালে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির পিছনের দিকে আদিগঙ্গায় আচমকা নেমে পড়েন কিছু মাদ্রাসা শিক্ষক ও পাঁচ শিক্ষামিত্র। তাঁদের মধ্যে এক মহিলাও ছিলেন। তাঁরা বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে না দিলে কোনওমতেই আদিগঙ্গা থেকে উঠবেন না।
এদিন মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানান, ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন যে সংখ্যালঘুদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারে রাজ্যের ১০,০০০ মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেওয়া হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে খুব কম সংখ্যক মাদ্রাসা অনুমোদন পেয়েছে। তা নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে সরব হয়েছেন অনুমোদনহীন মাদ্রাসার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা। অনশনও হয়েছে। মিলেছে প্রতিশ্রুতি। কিন্তু আখেরে কোনও লাভ হয়নি। এমনকী মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করার চেষ্টা করা হয়েছে। কোনওবারই সেই অনুমতি দেয়নি পুলিশ। শিক্ষামিত্রদের দাবি, দীর্ঘদিন তাঁদের বকেয়া ভাতা দেওয়া হয়নি। বাড়ানো হয়নি ভাতা। তাই বাধ্য হয়ে এই পন্থা বেছে নিয়েছেন তাঁরা৷
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন পুলিশ কমিশনার। পরে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ওই শিক্ষামিত্র এবং বেসরকারি মাদ্রাসার শিক্ষকদের আদিগঙ্গা থেকে তোলার চেষ্টা করা হয়। এদিকে, ওই আদিগঙ্গায় নৌকা চলাচলে নিষেধ রয়েছে৷ এছাড়া, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির মতো কড়া নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে কীভাবে পুলিশের চোখ এড়িয়ে ওই পাঁচজন চলে এলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবস্থান এক মাস পেরিয়ে গেলেও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগে সরব হয়েছে বামেরা। বিধাননগরে ওই অনশন-অবস্থান চলাকালীন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বেশ কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। কলকাতায় কযেক বার মিছিলও করেছেন তাঁরা।বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নিজের দফতরের খতিয়ান দেওয়ার সাহসটুকু নেই। মাদ্রাসা দফতরের পূর্ণমন্ত্রী হয়ে মাদ্রাসা ব্যবস্থাকে কোমায় নিয়ে গিয়েছেন, শিক্ষাব্যবস্থাকেও রাস্তায় নামিয়ে এনেছেন!’’
তাঁর অভিযোগ, ‘‘যেখানে অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৩৪টা দিন রাস্তার উপরে শুয়ে আছেন, সেখানে রাজ্য সরকারের তরফে এখনও কোনও আধিকারিক না পাঠানো চরম অমানবিকতার নিদর্শন। সংখ্যালঘু শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে এটা এক ধরনের স্বৈরাচার।’’
Be the first to comment