মাদক বিক্রি করতে গিয়ে ধৃত বিজেপি-র রাজ্য স্তরের নেত্রী পামেলা গোস্বামী। শুক্রবার, নিউ আলিপুরের এনআর স্ট্রিটে রীতিমতো ফাঁদ পেতে তাঁকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ। তাঁর সঙ্গেই গ্রেফতার হয়েছে আরও এক বিজেপি নেতা প্রবীর কুমার দে-ও। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকার কোকেন। তাদের সঙ্গেই গাড়িতে ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া এক কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা কর্মীও। তাকে সঙ্গে নিয়েই মাদক বিক্রির কাজ চলছিল বলে দাবি করেছে পুলিশ।
পামেলা, বিজেপি যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক। বিধানসভা ভোটের আগে যখন রাজ্যে তৃণমূল-বিজেপি দ্বন্দ্ব চরমে, ঠিক সেই সময়ই বিজেপি-কে চরম অস্বস্তিতে ফেললেন তাদের রাজ্যস্তরের নেত্রী পামেলা। জানা গিয়েছে, পামেলা গোস্বামী ও তাঁর সঙ্গী প্রবীর কুমার দে, নিউ আলিপুরের এনআর স্ট্রিটে একটি কফি শপের বাইরে দীর্ঘদিন ধরেই মাদক সরবরাহ করতেন বলে খবর ছিল নিউ আলিপুর থানার কাছে।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা সেখানে এসে গাড়ি থামাতো। ব্যক্তিগত রক্ষীরা গাড়িটি ঘিরে ফেলতেন। এরপর, মাদক সংগ্রহকারীরা বাইক নিয়ে এসে তাদের কাছ থেকে মাদক নিয়ে যেত। এদিনও তারা আসবে বলে নির্দিষ্ট খবর ছিল পুলিশের কাছে। আগে থেকেই ওই এলাকায় আটটি গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল সাদা পোশাকের পুলিশ। তারা সেখানে উপস্থিত হতেই প্রায় বলিউডি কায়দায় গাড়িটিকে ঘিরে ফেলে পুলিশ। তারপর পামেলার ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে কোকেন মেলে। এরপর গাড়ির সিটের নিচেও তল্লাশি চালায় পুলিশ। সেখান থেকেও বেশ কয়েকটি পাউচে ভরা কোকেন পাওয়া যায়। সেই সব পাউচ সংগ্রহ করে লালবাজারে নিয়ে আসে পুলিশ।
মাদক বিরোধী বিভাগের বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে সেগুলি কোকেন বলে নিশ্চিত করার পরই পামেলা ও তাঁর সঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়। প্রায় ১০০ গ্রাম কোকেন ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, পামেলা গোস্বামী ও প্রবীর কুমার দে-র মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। তারা নিউটাউন এলাকায় অংশীদারীতে একটি বিউটি পার্লার খুলেছিলেন। তারপর ধীরে ধীরে তাদের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল। পামেলার রাজনৈতিক পরিচয়, সে রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক এবং হুগলি জেলা বিজেপি যুব মোর্চার পর্যবেক্ষক। তাঁর সঙ্গী প্রবীর কুমার দে-ও বিজেপি নেতা বলেই জানা গিয়েছে। তাঁরা নিজেরাও মাদক সেবন করে থাকেন বলে সন্দেহ পুলিশের।
গ্রেফতার করার পর আগামীকালই তাদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তারা কোথা থেকে মাদক সংগ্রহ করত, কাদের সেই কোকেন সরবরাহ করত – সেইসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর সঙ্গে সঙ্গে ঠিক কী কারণে তারা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পেত, এবং কীভাবে সেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীকে সঙ্গে নিয়েই তারা মাদক সরবরাহ করত, সেই বিষয়েও তদন্ত চালানো হচ্ছে।
বিজেপি-র পক্ষ থেকে সরকারিভাবে এখনও এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে বিজেপি নেতা শমিক ভট্টাচার্ষ বলেছেন, দোষী প্রমাণিত হলে আইন আইনেকর পথে চলবে। তবে, সত্যিই পামেলাদের সঙ্গে মাদক ছিল, না কেউ তাদের গাড়ি ও ব্যাগে ষড়ষন্ত্র করে মাদক রেখে দিয়েছিল, সেই বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি।
Be the first to comment