ঘোষিত হল পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট । পশ্চিমবঙ্গে এবারের বিধানসভা নির্বাচন হবে আট দফায় । শুরু ২৭ মার্চ থেকে । ফলপ্রকাশ ২ মে । রাজ্যে বিশেষ পর্যবেক্ষক নিযুক্ত হলেন বিহারের প্রাক্তন সিইও অজয় নায়েক প্রাক্তন । থাকছেন দুই বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক মৃণালকান্তি দাস ও বিবেক দুবে । মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরার মতে অজয় নায়েক কমিশনের অন্যতম দক্ষ অফিসার । খরচ পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকছেন বি মুরলীকুমার ।
জঙ্গলমহল থেকেই এবার শুরু হচ্ছে বাংলার ভোটযুদ্ধ । ২৭ মার্চ পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার নির্বাচন । আট দফায় নেওয়া হবে ভোট । দ্বিতীয় দফা ১ এপ্রিল, তৃতীয় দফা ৬ এপ্রিল, চতুর্থ দফা ১০ এপ্রিল, পঞ্চম দফা ১৭ এপ্রিল, ষষ্ঠ দফা ২২ এপ্রিল, সপ্তম দফা ২৬ এপ্রিল এবং অষ্টম দফার ভোট হবে ২৯ এপ্রিল ।
এবারে বুথের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে বলে জানায় নির্বাচন কমিশন । করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত । ১ লাখ ১ হাজার ৯১৬ টি বুথে এবার ভোট নেওয়া হবে । শতাংশের হিসেবে যা ৩১.৬৫ শতাংশ বেশি । পাশাপাশি, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ভোটের সময় নির্ধারণের বিষয় জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা । প্রতিটি রাজ্যে স্পর্শকাতর বুথে সিআরপিএফ রেখেই যে ভোট হবে তাও এদিক স্পষ্ট করেছেন অরোরা । পশ্চিমবঙ্গ সহ প্রতিটি রাজ্যে ইতিমধ্যেই কয়েক দফায় সিআরপিএফ জওয়ানরা পৌঁছে গিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি ।
একইসঙ্গে বয়স্ক ও কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের জন্য বিশেষ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছে কমিশন, যাতে তাঁরা কোনওরকম সমস্যায় না পড়েন ।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ এবারে ভোট হচ্ছে অসম, কেরালা, তামিলনাড়ু ও পুদুচেরিতে ।
রাজ্যে ২৯৪ টি আসনে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামবেন । বাংলায় এবার মূলত লড়াই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির । দুই শিবিরই নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনের লড়াইয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে । জেলায় জেলায় ছুটে বেড়াচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী । গেরুয়া শিবিরও পিছিয়ে নেই । ভোটারদের টানতে বারবার দিল্লি থেকে উড়ে আসছেন শাহ-নাড্ডারা । নরেন্দ্র মোদিও সভা করে গিয়েছেন দু’বার । পিছিয়ে নেই বাম-কংগ্রেসও । রবিবার যৌথভাবে ব্রিগেড সমাবেশ করতে চলেছে তারা ।
তবে ভোটের প্রচারের ক্ষেত্রে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশিকা কঠোরভাবে মানা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার । তিনি জানিয়েছেন, মনোনয়ন জমার সময় প্রার্থী-সহ দু’জন উপস্থিত থাকতে পারবেন একসঙ্গে ।
আবার, বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার বা গাড়িতে প্রচার উভয় ক্ষেত্রেই একসঙ্গে পাঁচজনের বেশি যাওয়া যাবে না । আবার করোনার কারণে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন ।
ভোট পরবর্তী হিংসা রুখতে বিশেষ পদক্ষেপ করা হচ্ছে । এবার কোন বুথে কোন দল কত ভোট পেয়েছে, তা গণনার সময় বা পরবর্তীকালে জানা যাবে না । পাশাপাশি, একাধিক ইভিএম একসঙ্গে মিশিয়ে গণনা হবে বলেও জানিয়েছে কমিশন ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে যে তপ্ত বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, কমিশনের এই সিদ্ধান্ত তাকে ভোট পরবর্তী সময়ে অনেকটাই নমনীয় করতে সাহায্য করবে ।
বিগত বিধানসভা ভোটে কার্যত সবুজ ঝড় দেখা গিয়েছিল । ২৯৪ টি আসনের মধ্যে ২১১ টিতেই জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থীরা । কংগ্রেস পেয়েছিল ৪৪ টি আসন । বামেরা ২৬ টি আসন নিজেদের দখলে রাখতে পেরেছিল । অন্যদিকে বিজেপি পেয়েছিল ৩ টি আসন ।
তবে এখন ছবিটা অনেকটাই বদলেছে । বাম-কংগ্রেসকে ছাপিয়ে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি । বাংলা দখলের লড়াইয়ে এবার নিজেদের সর্বশক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে গেরুয়া শিবির । বারবার দিল্লি থেকে বিজেপি নেতা-নেত্রীরা রাজ্যে উড়ে আসছেন, সভা করছেন ।
এই পরিস্থিতিতে আসন্ন নির্বাচন কোনদিকে মোড় নেবে সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা ।
Be the first to comment