‘আগে সিপিএম মারত, এখন বিজেপি মারে ৷’’ বুধবার ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরে নির্বাচনী জনসভার মঞ্চ থেকে এভাবেই বাম-বিজেপিকে একসঙ্গে তোপ দাগলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ৷ এদিন এই জেলায় পর পর দু’টি সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ প্রথমটি করেন ঝাড়গ্রামে, দ্বিতীয়টি লালগড়ে ৷ দু’টি সভাতেই আগাগোড়া বিজেপির বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত ছিলেন তিনি ৷ সভায় বামেদের নিয়ে তেমন কোনও বাক্য খরচ না করলেও তারা যে বিজেপিরই বি-টিম, কার্যত সেই বার্তাই দেন মমতা ৷
সম্প্রতি নন্দীগ্রামের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর ফেরার পথে গুরুতর জখম হন তৃণমূলনেত্রী ৷ তাঁর পায়ে আঘাত লাগে ৷ হাসপাতালে চিকিৎসার পাট চুকিয়ে আপাতত হুইল চেয়ারে চড়েই সারা রাজ্য় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো ৷ বুধবার ঝাড়গ্রামে জোড়া সভার কাজও সেইভাবেই সামাল দেন মমতা ৷
নন্দীগ্রামে মমতার আহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই জলঘোলা হয়েছে বিস্তর ৷ হয়তো সেই কারণেই সরাসরি তাঁর উপর হামলা প্রসঙ্গে নন্দীগ্রামের নাম উচ্চারণ করেননি মমতা ৷ কিন্তু, উপস্থিত জনতাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, তাঁর উপর আক্রমণ নতুন নয় ৷ বাম জমানাতেও বারবার হামলার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে ৷ হতে হয়েছে ক্ষতবিক্ষত ৷ কিন্তু তবুও তাঁকে থামিয়ে রাখা যায়নি ৷
এর আগে মমতা দাবি করেছিলেন, তাঁকে ভোটের ময়দান থেকে সরিয়ে রাখতেই তাঁর উপর হামলা চালানো হয় ৷ তাঁর পা ভেঙে দেওয়া হয় ৷ কিন্তু এভাবে তাঁকে আটকানো যাবে না ৷ প্রয়োজনে ভাঙা পা নিয়ে হুইল চেয়ারে চড়েই সারা বাংলায় প্রচার চালাবেন তিনি ৷ যা ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ৷
বুধবার গোপীবল্লভপুরের সভামঞ্চে ফের একবার স্মৃতি রোমন্থন করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ সকলকে মনে করান, কীভাবে এক-একটা হামলার পর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৷ কীভাবে তিনি বাধ্য হয়েছেন অস্ত্রোপচার করাতে ৷ আর এই প্রেক্ষিতে বিরোধী বাম ও বিজেপিকে এক সূত্রেই বেঁধে দিয়েছেন তিনি ৷ মমতার কথায়, ‘‘আগে সিপিএম মারত, এখন বিজেপি মারে ৷’’ অর্থাৎ রাজনীতির লড়াইয়ের মঞ্চে তিনি যে বাম-বিজেপি, কোনও পক্ষকেই তিনি যে রেয়াত করছেন না, মমতার এই মন্তব্য থেকেই তা স্পষ্ট ৷
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, কংগ্রেস ও ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-কে নিয়ে জোটবদ্ধ বামেরাও বিজেপি-তৃণমূলকে এক পঙক্তিতেই এনে খাড়া করেছে ৷ তাদের বক্তব্য়, তৃণমূল এবং বিজেপি, দু’জনেই সমান শত্রু ৷ এদিন বামেদের তারই জবাব দিলেন মমতা ৷ তাঁর স্পষ্ট বার্তা, বামেদের হয়ে যাঁরা একসময় হামলা চালাত, এখন তাঁরাই রং বদলে গেরুয়া হয়েছে ৷
প্রসঙ্গত, ঝাড়গ্রাম জেলায় বিধানসভা আসন রয়েছে মোট চারটি ৷ এগুলি হল ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রাম এবং বিনপুর ৷ ২০১৬ সালে এর সবক’টিতেই ফুটেছিল জোড়া ফুল ৷ কিন্তু উনিশের লোকসভা ভোটে জেলার একটিমাত্র আসন ছিনিয়ে নেয় বিজেপি ৷ সেই হিসাবে মাথায় রাখলে বর্তমানে জেলার চারটি বিধানসভা কেন্দ্রেই এগিয়ে রয়েছে গেরুয়াবাহিনী ৷ যদিও ইতিমধ্যে ঝাড়গ্রাম ও বিনপুরে কিছুটা হলেও জমি ফিরে পেয়েছে রাজ্য়ের শাসকদল ৷ অন্যদিকে, নয়াগ্রাম ও গোপীবল্লভপুরে এখনও দাপট রয়েছে বিজেপির ৷ তাই লড়াই হবে কাঁটায় কাঁটায় ৷
ঝাড়গ্রামের চারটি বিধানসভা আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন খগেন্দ্রনাথ মাহাত (গোপীবল্লভপুর), দুলাল মুর্মু (নয়াগ্রাম), দেবনাথ হাঁসদা (বিনপুর) এবং বীরবাহা হাঁসদা (ঝাড়গ্রাম) ৷ এদিন গোপীবল্লভপুর সভায় উপস্থিত ছিলেন খগেন্দ্রনাথ মাহাত ও দুলাল মুর্মু ৷ রাজ্য়ে ফের একবার তৃণমূলের শাসন কায়েম করতে দলের এই দুই প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জয় করানোর আহ্বান জানান মমতা ৷
Be the first to comment