এগরার সভা থেকে নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোপ । তৃণমূলনেত্রী বললেন, “নন্দীগ্রামে এবার আমি প্রার্থী,এক ইঞ্চি জমি ছাড়বো না।” পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, “আমিই সব কেন্দ্রের প্রার্থী। জোড়া ফুলে ভোট দিলে আমিই আবার ক্ষমতায় আসবো। আপনাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রেশন সব বিনা পয়সায় পাবেন। তাই প্রার্থী দেখবেন না। জোড়া ফুলে ভোট দিন। তাহলেই আমি আবার ক্ষমতায় আসবো। আপনারা সব পাবেন।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, “বিজেপি মানে বিসর্জন, তৃণমূল মানে উন্নয়ন। এমনভাবে খেলতে হবে ২৭ তারিখ, যাতে কোনওদিন আর বিজেপি খেলতে না পারে। এই ভোটটা নিছক ভোট নয়। এই বিজেপি নিছক বিজেপি নয়। এটা দস্যুর দল, অত্যাচারীর দল।”
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “আপনাদের জেলা থেকে এবার আমি নন্দীগ্রামের প্রার্থী। নন্দীগ্রামের আন্দোলনের সঙ্গে আমি জড়িত। আমায় অনেকে বলেছিলেন, তুমি এতো দূর থেকে প্রার্থী হলে? আমি বলেছি গোটা বাংলাটাই আমার ঘর।” তিনটি সভা থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনিই প্রার্থী, সেই কথা ঘোষণা করে একটা সুর বেঁধে দেন। এছাড়া সব সভা থেকেই রাজ্যের মানুষের জন্য একাধিক প্রতিশ্রুতির কথা ঘোষণা করেন তৃণমূলনেত্রী।
এগরার সভা মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাম না করে এদিন শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করে বলেন, “কেউ যদি মনে করে গদ্দারী করবে, আমি অনেক ভালোবাসা দিয়েছি। এবার আর এক ইঞ্চি জমি ছাড়বো না। বিজেপিকে একটি ভোট ও দেবেন না। সিপিএমকে ভোট দেবেন না। ওরা বিজেপিতে যাচ্ছে। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি হচ্ছে জগাই,মাধাই, গদাই। আপনারা প্রার্থী দেখবেন না। জানবেন আমি প্রার্থী। তৃণমূল জিতলে আমি এসব। তখন সব কিছু পাবেন। সব স্তরের মানুষ সুবিধা পাবেন। চাকরি পাবেন। আগে যে সব গদ্দার ছিল তারা অনেক গোলমাল করেছে। এবার সোজাসুজি কাজ হবে। গদ্দাররা আজ বিজেপি-র প্রার্থী। পুরনোরা বাদ, ঘরে বসে কাঁদছে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা, পটাশপুর ও মেছেদা, এই তিন জায়গার তিনটি সভায় এদিন শুধুই প্রতিশ্রুতি ছিল। তিনি তিনটি সভাতেই তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণে তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তেহারের সারাংশ তুলে ধরেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরেন এদিনের সভায় তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে। তিনি বলেন, “মা, বোনেরা কন্যাশ্রী পাচ্ছেন তো ? বছরে দু’বার দুয়ারে সরকার করবো। কারও কাছে যেতে হবে না। সব আপনার বাড়িতে পৌঁছে যাবে। কাস্ট সার্টিফিকেট করতে আগে ৬ মাস লাগতো। এখন সেটা দুয়ারে সরকারের পর দ্রুত হয়ে যাচ্ছে। রেশন পৌঁছে দেব বাড়িতে। কৃষকদের খাজনা মকুব করা হয়েছে। পানের বরজের ক্ষতি হলে বিমা দিচ্ছি। কৃষকরা বছরে ৬ হাজার টাকা করে পান। আগামী দিন সরকারে এসে এই টাকা ১০ হাজার করে দেব। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ৫ লক্ষ টাকার চিকিৎসার সুবিধা দিচ্ছি। পরিবারের মহিলাদের সাহায্যের জন্য সব মহিলাদের ৫০০ টাকা করে হাত খরচ দেব।
তফসিলিদের জন্য এক হাজার টাকা দেব । ১২ ক্লাসে উঠলে ১০ হাজার টাকা, মাদ্রাসা, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সাইকেল দেব প্রতি বছর। কন্যাশ্রী আছে তাও ছাত্র ছাত্রীদের পড়ার জন্য ১০ লক্ষ টাকার ক্রেডিট কার্ড করে দিচ্ছি। এই টাকায় তারা পড়তে পারবে। ক্ষুদ্র শিল্পে ১ লক্ষ টাকা করে বিনিয়োগ করবো। লক্ষ লক্ষ ছেলে, মেয়ের চাকরি হবে। অনুর্বর জমিতে চাষ করার ফলে ২৫ হাজার মানুষের কাজ হবে।
দিঘায় তাজপুরে গভীর বন্দর হবে। বহু মানুষের কাজ হবে। দিঘায় ল্যান্ডিং স্টেশন হচ্ছে। বহু মানুষের চাকরি হবে। দিঘায় আগে রাস্তা ঘাট ছিল না। প্রচুর মানুষকে ঘর দিয়েছি। আগামী দিনে ২৫ লক্ষ বাড়ি করে দেওয়া হবে। চাকরি পেতে এর পর আর গদ্দার-এর হাত থাকেবে না। সোজাসুজি চাকরি হবে। দ্বিগুন শিক্ষক নিয়োগ হবে।”
পাশাপাশি নারীর সম্মান নিয়ে হাতরাসের কথা উল্লেখ করে বিজেপিকে এদিন তীব্র আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, “একটা মেয়েকে ধর্ষণ করলো, তাঁর বাবাকে গুলি করে মারলো। উত্তরপ্রদেশে এসব হচ্ছে । বিজেপি ওপরে বলে হরি হরি, ভিতরে চুরি করি। ৫০০ টাকা চুরি করলে দেখতে পাচ্ছে। যারা রেল, ব্যাংক বিক্রি করে দিচ্ছে তারা কী করছে ?”
মমতা বলেন, আমি আমার পায়ের অনেক যন্ত্রণা নিয়ে এসেছি, কারণ বিজেপি আসলে আপনাদের যন্ত্রনা আরও বাড়বে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি ওপরে বলে হরি হরি, আর ভিতরে ভিতরে মানুষ মারছে। আমি বলি বাংলা ওদের জায়গা নয়। এগরা এগরায় থাকবে, নন্দীগ্রাম নন্দীগ্রামে থাকবে, পটাশপুর পটাশপুরে থাকবে। আমি চাইনা কোনও দাঙ্গা হোক। এনপিআর নিয়ে আমি আন্দোলন করেছিলাম। আমিই একমাত্র রাজ্য, যেখানে এনপিআর করতে দিইনি। অটো চালক, শিক্ষক, কৃষক সবাই হলেন বাংলার অহংকার। আপনারাই থাকবেন। বহিরাগত গুন্ডা আমরা চাই না। মীরজাফর আমরা চাই না।”
ইভিএম প্রসঙ্গে দলের কর্মীদের এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ইভিএম-এ টেস্ট হয়। তারপর ইভিএম চালু হয়। ইভিএম পাহারা দেবেন, ছাড়বেন না। ভোট বাক্স পাহারা দেবেন। সেন্ট্রাল পুলিশ, রাজ্য পুলিশ যদি বলে চলে যান, যাবেন না। আপনারা যদি আমাকে চান, জোড়া ফুলে ভোট দিন। ভুল করেও বিজেপিকে ভোট দেবেন না। বিজেপি কেরোসিন কম দিচ্ছে। গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যাঙ্ক, বিমা, রেল বিক্রি করে দিচ্ছে । চাষীদের জমি লুঠ করে নেবে। আমরা বলেছি আমরা চাষীদের কাছ থেকেই ফসল কিনবো। এবার বিজেপি বাইরের গুন্ডাদের নিয়ে এসে ভোট লুঠ করতে চাইবে। মা,বোনেরা গুন্ডারা আসলে ঠাসিয়ে থাপ্পড় দিয়ে দেবেন। হাতা, খুন্তি নিয়ে বাধা দেবেন। ওরা অনেক মিথ্যা কথা বলবে, বিশ্বাস করবেন না।”
Be the first to comment