শুক্রবার রাতে ঘণ্টাখানেকের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় হোয়াট্স অ্য়াপ, ইনস্টাগ্রাম ৷ আর তাতেই গেল গেল রব ওঠে বিশ্বজুড়ে ৷ দিনভর যাঁরা বুঁদ হয়ে থাকেন এইসব ভার্চুয়াল সোশাল প্ল্য়াটফর্মে, তাঁদের কার্যত নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় হয় এই ঘটনায় ৷ শনিবার সেই প্রসঙ্গ উঠে এল নরেন্দ্র মোদীর ভাষণেও ৷ শুক্রবারের ওই ঘটনাকেও ‘বাংলার অনুন্নয়নের’ সঙ্গে মোক্ষমভাবে জুড়ে দিলেন আমাদের টেকসেভি প্রধানমন্ত্রী ৷
মোদি জমানায় ভারতে গুরুত্ব বেড়েছে জিজিটাল দুনিয়ার ৷ টাকার লেনদেন থেকে সরকারি ভর্তুকি প্রদান হোক, কিংবা সরকারি চাকরি বা স্কুল-কলেজে ভর্তির ফর্ম ফিলআপ, সবকিছুই এখন হচ্ছে অনলাইনে ৷ এহেন মোদী যদি হোয়াটস অ্যাপ বা ইনস্টা বিভ্রাটের প্রসঙ্গ তোলেন, তবে তা অভাবনীয় নয় মোটেই ৷ কিন্তু মোদী যেভাবে এই ঘটনার সঙ্গে বাংলার অনুন্নয়নের ইতিহাসকে জুড়ে দিলেন, তা নিঃসন্দেহে নজরকাড়া ৷
এদিন খড়গপুরের জনসভার মঞ্চ থেকে মোদী বলেন, ‘‘৫০-৫৫ মিনিটের জন্য হোয়াটস অ্য়াপ, ইনস্টাগ্রাম ডাউন হয়ে গিয়েছিল ৷ আর তাতেই সবাই ভাবল এ কী হল ? অথচ বাংলায় তো গত ৫০-৫৫ বছর ধরে বিকাশ, স্বপ্ন, সঙ্কল্প, সব ডাউন হয়ে রয়েছে ৷’’ অর্থাৎ এই একটিমাত্র প্রসঙ্গ ব্য়বহার করে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত শাসককেই (এখনও পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় থেকেছে) কার্যত ব্য়র্থতার এক লাইনে দাঁড় করিয়ে দেন মোদী ৷
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অভিযোগ, কংগ্রেস, বামফ্রন্ট থেকে তৃণমূল, স্বাধীনতার পর ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলার উন্নয়নে কোনও পক্ষই ব্রতী হয়নি ৷ মোদীর আবেদন, ‘‘একবার শুধু বিজেপিকে সুযোগ দিন ৷ আর দেখুন আমরা কীভাবে ‘আসল পরিবর্তন’ করে দেখাই বাংলায় ৷’’
এদিন ফের একবার ডাবল ইঞ্জিন সরকারের পক্ষে আওয়াজ তোলেন মোদি ৷ উপস্থিত জনতাকে ডাবল ইঞ্জিনের সুবিধা বোঝাতে রীতিমতো গল্প বলার ধাঁচে প্রশ্ন করেন, ‘‘কোনও গাড়ি যদি গাড্ডায় পড়ে যায় বা আবর্জনায় ফেঁসে যায়, তাহলে সব যাত্রীকেই নেমে এসে একসঙ্গে একদিকে সেই গাড়িকে ঠেলতে হবে ৷ অর্ধেক যাত্রী যদি একদিকে ঠেলেন, আর বাকি অর্ধেক যদি উল্টোদিকে ঠেলেন, তাহলে কি সেই গাড়ি গাড্ডা থেকে তোলা যাবে ?’’ প্রধানমন্ত্রীর বার্তা, বাংলাকে অনুন্নয়নের গাড্ডা থেকে তুলতে হলে কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয় জরুরি ৷ তারজন্য শুধুমাত্র নয়াদিল্লিতেই নয়, নবান্নতেও বিজেপির সরকার থাকতে হবে ৷
মোদীর অভিযোগ, ডাবল ইঞ্জিনের সরকার না থাকাতেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি বাংলায় রূপায়ণ করতে বাধা দিচ্ছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ৷ গোটা দেশ যখন ব্য়বসায়ী, উপভোক্তাদের স্বার্থে সিঙ্গল উইন্ডো পরিকাঠামোর দিকে এগোচ্ছে, ঠিক তখনই বাংলাতে এক অন্য ধরনের সিঙ্গল উইন্ডো তৈরি করেছে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সরকার ৷
মোদীর কটাক্ষ, সেই জানালার নাম ‘ভাইপো উইন্ডো’ ৷ যে কোনও কাজের জন্যই এই একটি উইন্ডো পেরোতে হয় বঙ্গবাসীকে ৷ প্রসঙ্গত, ভোটপ্রচারে নেমে বারবার ‘পিসি-ভাইপো’কে টার্গেট করেছেন বিজেপি নেতারা ৷ ভাইপোর বিরুদ্ধে তুলেছেন তোলাবাজির অভিযোগ ৷ এদিন মোদীর ‘ভাইপো উইন্ডো’ মন্তব্য সেই আক্রমণেই নতুন মাত্রা যোগ করল ৷
Be the first to comment