নন্দীগ্রামের বিরুলিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী সভা করে আসার পর বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকে বাইকবাহিনী সেখানে গিয়ে গুন্ডামি করেছে ৷ তৃণমূল কর্মীদের মারধর করেছে ৷ হাত ভেঙে দিয়েছে ৷ ঠাকুরচকের সভা থেকে এমনই অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
তাঁর দাবি, “বিজেপি বুঝতে পারছে যে ওরা হেরে বসে আছে, তাই ওদের গুন্ডামি করতে হচ্ছে ৷” বিজেপি কর্মীরা পুলিশের উর্দি পরে ভয় দেখানোর চেষ্টা করবে বলেও অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেত্রী ৷
সোমবার নন্দীগ্রামে রোড শো করার পর ঠাকুরচকের সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “নন্দীগ্রামের আন্দোলনের সময় সিপিএম-এর ক্যাডাররা পুলিশের ড্রেস পরে গুলি চালিয়েছিল ৷ হাওয়াই চটি পরে দেখা গিয়েছিল পুলিশকে ৷ আর আমার কাছে খবর আছে যে, এ বার বাজার থেকে পুলিশের ড্রেস কিনে গেস্ট হাউসে ক্যাডারদের পরিয়ে রেখেছে বিজেপি ৷ সেই ড্রেস পরেই উত্তরপ্রদেশ পুলিশ, বিহার পুলিশ সেজে গ্রামবাসীদের ভয় দেখাবে ওরা ৷ বলবে বিজেপিকে ভোট দিন ৷ একদম ভয় পাবেন না ৷”
বিজেপি বাইরে থেকে গুন্ডা নিয়ে এসে বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে মমতা বলেন, “বিরুলিয়ায় আমি কাল সভা করে আসার পর উত্তরপ্রদেশ ও বিহার থেকে বাইকে চড়ে গুন্ডাবাহিনী এসে হামলা চালায় ৷ একটি ছেলের হাত ভেঙে দিয়েছে ৷ সে নন্দীগ্রাম হাসপাতালে ভর্তি ৷ নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রতীক ৷ আর ওরা বুঝে গিয়েছে যে হেরে যাচ্ছে, তাই তারা গুন্ডামি শুরু করেছে ৷”
এ দিন ফের শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর পরিবারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন তৃণমূল নেত্রী ৷ নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় শুভেন্দু ও তাঁর পরিবার ছিল না বলে দাবি করে মমতা বলেছেন, “নন্দীগ্রামে ভূমি আন্দোলনে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল সিপিএম ৷ যাঁরা আক্রমণ করেছিল তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি ৷ কিন্তু দেখুন, ওই গদ্দারদের বিরুদ্ধে কিন্তু কোনও মামলা হয়নি ৷ কারণ ওরা কেউ নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়ে ছিল না ৷ সবাই আন্দোলন মিটে যাওয়ার পরে এসেছিল ৷”
তৃণমূলের জন্মলগ্নেও শুভেন্দুর পরিবার তাদের সঙ্গে ছিল না বলে মনে করিয়ে দেন মমতা ৷ বলেন, ১৯৯৮ সালে ১ জানুয়ারি তৃণমূল তৈরির পর ফেব্রুয়ারিতে কন্টাইতে দাঁড়িয়েছিলেন অখিল গিরি ৷ আমরাই জিতি ৷ আর গদ্দাররা তখন তিন নম্বর হয় ৷ এরপর অন্যান্য জায়গায় কয়েকবার গদ্দার হেরেছে ৷ তৃণমূল জেতার পর থেকে তাঁদের জেতা শুরু হল ৷ ওঁদের কত পদ দিয়েছি ৷ আমার দোষ ৷ আমি ভাবতেও পারিনি ৷ অনেক টাকা করে ফেলেছে ৷ আর সেই টাকা বাঁচাতে বিজেপিতে যোগ দিয়েছে ৷”
শুভেন্দু অধিকারী বিভিন্ন সভায় নিজেকে ভূমিপুত্র বলে দাবি করেন ৷ মমতার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “বাইরে থেকে যাঁরা উড়ে এসেছে, ভোট মিটলেই তাঁরা আবার উড়ে যাবে ৷ আমি থেকে যাব ৷” এই মন্তব্যের জবাব দিতেই তৃণমূল নেত্রী আশ্বাস দিয়ে বলেন, “আমি ভবানীপুরের বিধায়ক ৷ সেখানে আমার অফিস রয়েছে ৷ আমি না থাকলেও কেউ গেলেই তাঁর কাজ হয়ে যায় ৷ নন্দীগ্রামেও আমার অফিস থাকবে ৷ সেখানে এলেই কাজ হবে ৷ তবে নিজের কেন্দ্র ও অন্যান্য এত জায়গা থাকতেও নন্দীগ্রামের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানাতেই আমি এখান থেকে লড়ছি ৷”
এ দিন ফের দুয়ারে সরকার, স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী, কন্যাশ্রী-সহ নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী ৷ ঠাকুরচকের সভায় তাঁর লেখা ও সুর দেওয়া একটি গান গেয়ে শোনান সঙ্গীতশিল্পী শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সভায় উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী অদিতি মুন্সিও ৷
Be the first to comment