ভোট গণতন্ত্রের উৎসব ৷ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করার দিন কিন্তু, সেই উৎসবই যখন তাজা প্রাণ কেড়ে নেয়, উৎসবের রঙে তখন শুধু লেগে থাকে রক্তের ছিটে ৷ আর স্বজনহারা কান্না ৷ আজ সেই ছবি কোচবিহারের শীতলকুচিতে ৷ চারপাশে শুধু কান্নার রোল। স্বজনহারা কান্না ৷
শনিবার শীতলকুচি বিধানসভা এলাকায় জোরপাটকিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয় চারজনের ৷ আজ সেই চারজনের মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে গ্রামে এসে পৌঁছায় ৷ মৃতদেহ পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবারের লোকেরা ৷ তৃণমূলের পতাকায় মুড়ে তাঁদের শ্রদ্ধা জানানো হয় ৷
প্রসঙ্গত, শনিবার ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিচ্ছিলেন ভোটাররা ৷ কিন্তু হঠাৎই গুলির শব্দ ৷ ঝরে পড়ে চার চারটে তাজা প্রাণ ৷ আহত হন অনেকে ৷ অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রীয় বাহিনী জওয়ানের গুলিতেই মৃত্যু হয় তাঁদের ৷ কিন্তু বারবার প্রশ্ন উঠছে, কী কারণে গুলি করল তারা ৷ গুলি যদি করলই তো পায়ে কেন গুলি করল না?
নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া পর্যবেক্ষককে দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, শীতলকুচি বিধানসভা এলাকার ওই জোরপাটকিতে সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ টহল দিচ্ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ ৷ কিন্তু ওই সময় প্রায় ৫০-৬০ জন গ্রামবাসী কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। যারা আক্রমণ করে তারা ভোটারদের বুথে যেতে বাধা দিচ্ছিল বলে অভিযোগ ৷ সেই সময় একটি শিশু পড়ে যায় ৷ আহত হয় ৷
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয় ৷ বাহিনীর গাড়ি ভাঙচুর করা হয় ৷ পরে সিআইএসএফ-এর একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন ৷ তখন শূন্যে ৬ রাউন্ড গুলি চালানো হয় ৷ তখন জওয়ানরা ও পুলিশ সেখান থেকে সরে আসে ৷ তার পর পরিস্থিতি শান্ত হয় ৷
কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ৷ ভোটকর্মীদের মারধর করা হয় ৷ আশাকর্মী, হোমগার্ডদের হেনস্থা করা হয় ৷ সেই পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে দু’রাউন্ড গুলি চালানো হয় শূন্যে ৷ তখন ঘটনাস্থলে যায় সিআইএসএফ-এর কুইক রেসপন্স টিমও ৷ এই অবস্থায় পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যায় ৷ আর নিজেদের বাঁচাতে ৭ রাউন্ড গুলি ছোঁড়েন জওয়ানরা ৷ তাতেই চারজনের মৃত্যু হয় ৷ আহত হন কয়েকজন ৷
অন্যদিকে, পরিবারের লোকেরা জানাচ্ছেন, শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট হচ্ছিল ৷ হঠাৎই গুলি চালায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ৷ যদিও, আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ জানিয়েছেন, এটা গণহত্যা ৷ বুকে লক্ষ্য করেই গুলি চালানো হয় ৷ এই নিয়ে আজ মমতার সঙ্গে নিহতের পরিবারের ভিডিয়ো কলে কথা হয় ৷ কারও বাড়িতে তিনবছরের বাচ্চা রয়েছে, কারও স্ত্রী আবার অন্তঃসত্ত্বা ৷ কিংবা বাড়িতে শুধু বৃদ্ধ মা-বাবা ৷ আজ মমতার সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা বলতে বলতে তাদের দৈন্যতা ও অসহায়তার কথাই তুলে ধরেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা ৷ তখন নিহত পরিবারের গলায় শুধু দলা পাকানো কান্না ৷ পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
Be the first to comment