১০ এপ্রিল চতুর্থ দফায় ভোট শুরু হতে না হতেই কোচবিহারের শীতলকুচিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ১৮ বছরের আনন্দ বর্মনের। সেখানে থেকেই পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত জনতা-সেনা বাহিনী খণ্ডযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় আরও চার ভোটারের। পদ্মশিবির ও ঘাসফুল শিবির দোষারোপ পাল্টা দোষারোপের তিরে বিদ্ধ করতে শুরু করে একে অপরকে ৷ উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি।
ঘটনার পরের দিনই নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কিন্তু কমিশনের জারি করা নির্বাচনী বিধিনিষেধের জেরে শীতলকুচি যেতে পারেননি তিনি ৷ যদিও শিলিগুড়ি থেকে ফোনে কথা বলেন মৃতদের পরিবারের সঙ্গে। এরপর তাঁর প্রচারের উপরই নিষেধাজ্ঞা জারি করে কমিশন। অবশেষে বুধবার মাথাভাঙায় মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে দেখা করতে নারাজ ছিল আনন্দ বর্মনের পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, ছেলেকে মেরেছে তৃণমূল কর্মীরা ৷ খুনি কর্মীদের সরকারের সঙ্গে দেখা করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না ৷ সাহায্য নেওয়ারও না ৷ মৃত আনন্দ বর্মনের বাবা জগদীশ বর্মন বলেন, ‘যে সরকার আমার ছেলেকে কেড়ে নিল সেই সরকারের কাছ থেকে আমার টাকার কোনও প্রয়োজন নেই ৷ বরং যারা এই কাজ করেছে তাদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
যদিও বুধবার সকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পৌঁছনোর পর তাঁর সঙ্গে শেষ পর্যন্ত দেখা করেন আনন্দর দাদু। আনন্দ বর্মন ও তাঁর পরিবার বিজেপি সমর্থক হিসেবেই পরিচিত। আর সেই প্রতিহিংসা থেকেই ছেলেকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর বাবার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে বলেন, ‘রাজবংশী ঘরের ছেলে আনন্দ প্রথমবারের ভোটার ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও সহমর্মিতা নেই। অথচ জওয়ানদের গুলিতে নিহত সংখ্যালঘুদের জন্য তিনি বারবার সরব হচ্ছেন।’
মমতাও পাল্টা অমিত শাহকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিজেপি নিজেই নিজের কর্মীকে মেরেছে। আনন্দ বর্মনের বাবার কথায়, ‘ভোটের দিন কয়েক আগে আমার বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে গিয়েছিল তৃণমূল কর্মীরা ৷ তাই আমার বড় ছেলেকে না পেয়ে ছোট ছেলেকে মেরে ফেলেছে হার্মাদরা ৷’
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চার জনের মৃত্যুর পরই মমতা ছুটে যেতে চেয়েছিলেন শীতলকুচি। কিন্তু রবিবার থেকে ৭২ ঘণ্টা তাঁকে ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের শীতলকুচি যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে নির্বাচন কমিশন। এরই মাঝে সোমবার রাত আটটা থেকে মঙ্গলবার রাত আটটা পর্যন্ত তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী প্রচারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কমিশন।
কিন্তু মঙ্গলবার রাতে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠতেই ফের নিজ ভঙ্গিতে ফিরে আসেন মমতা। মমতা বলেন, ‘শীতলকুচিতে চারজন পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছেন, একজন মারা গিয়েছে দুষ্কৃতীদের গুলিতে। মাথাভাঙার প্রার্থীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আমি সকালেই শীতলকুচি যাব।’ জানা গিয়েছে, মাথাভাঙা হাসপাতালের পাশের মাঠেই তৈরি শহিদ মঞ্চে মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি।
Be the first to comment