৪০ বছরের করোনা রোগীর জন্য ছাড়লেন হাসপাতালের বেড, অমর ৮৫-এর বৃদ্ধ

Spread the love

মৃত্যুর পর অমরত্ব, উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলেন নাগপুরের ৮৫ বছরের প্রবীণ নারায়ণরাও দাভাড়কর। নিজের জীবন বিপন্ন করে ৪০ বছরের করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্য ছেড়ে দিলেন অক্সিজেনযুক্ত শয্যা। ফিরে গেলেন বাড়ি। শেষ পর্যন্ত বাঁচলেন আর মাত্র ৭২ ঘণ্টা।

সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের তরফে জারি করা একটি সংবাদ বিবৃতিতে দাবি করা হয়, নাগপুরের বাসিন্দা ৮৫ বছরের নারায়ণরাও ছিলেন আরএসএস-এর সক্রিয় কর্মী। ২২ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত নারায়ণরাও দাভাড়করকে ভর্তি করা হয় ইন্দিরা গান্ধী রুগনালয়ে। অতি কষ্টে সেখানে তাঁর জন্য একটি অক্সিজেনযুক্ত শয্যার ব্যবস্থা করে পরিবার। হাসপাতালে ভর্তি হয়েও শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরে এসেছিলেন প্রবীণ সংঘ সেবক। কারণ কী?

আরএসএস-এর দাবি, করোনা আক্রান্ত ৪০ বছরের স্বামীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য এক মহিলাকে আঁকুতি মিনতি করতে দেখেন নারায়ণরাও দাভাড়কর। ওই সময়ই কোভিড অতিমারির এই শয্যাসঙ্কটে নিজের বেড ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পরিবারকে নারায়ণরাও দাভাড়কর জানান, “আমার জীবন আমি বেঁচে নিয়েছি। এখন আমার বয়স ৮৫। ওঁর স্বামীর বয়স কম। তার উপর বাড়ির দায়িত্বও তাঁর ওপর। আমি চাই আমার জন্য বরাদ্দ শয্যা ওই করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়া হয়।”

চিকিৎসকরা তাঁকে বোঝানের চেষ্টা করলেও তা মানতে রাজি হননি নারায়ণরাও দাভাড়কর। উল্টে মেয়ে জামাইকে রাজি করিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি চলে আসেন তিনি। শেষে ৩ দিনের মাথায় বাড়িতেই মৃত্যু হয় তাঁর। যদিও নারায়ণরাও দাভাড়করের ফেলে আসা কোভিড শয্যা অন্য কাউকে দেওয়া হয়েছে কি না, এ নিয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানা যায়নি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বয়ান অনুযায়ী, সেখানে ১১০টি কোভিড শয্যা রয়েছে। যার মধ্যে ৯২টি শয্যায় সঙ্কটাপন্ন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা হয়। সত্যিই কি তাহলে হাসপাতালে তখন শয্যাসঙ্কট ছিল, যে কারণে নিজের চিকিৎসা না করিয়ে অন্যকে চিকিৎসা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে যেতে হল নারায়ণরাও দাভাড়করকে! কর্তৃপক্ষের উত্তর, ২২ এপ্রিল অন্তত ৪টি থেকে ৫টি শয্যা খালি ছিল।

নাগপুর কর্রোরেশন কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত ওই হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন ২২ এপ্রিল বিকেল ৫টা বেজে ৫৫মিনিটে নারায়ণরাও দাভাড়করকে ভর্তি করা হয়। মাত্র ২ ঘণ্টা ভর্তি থাকার পর ৭টা বেজে ৫৫মিনিটে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই প্রসঙ্গে নারায়ণরাও দাভাড়করের মেয়ে জামাইকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, “মানুষ মানুষের সাহায্য করবে এটাই তো স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। এখানে সংশয়ের কোনও জায়গাই থাকার কথা নয়। যা ঘটেছে তা সত্য। আর তা ছাড়া ৪ দিন পর এই বিষয়ে কথা বলার কোনও যৌক্তিকতাই নেই। আমি নিজে কোভিডে আক্রান্ত। মানসিক ভাবেও বিধ্বস্ত। আমি আর কোনও কথা বলতে চাই না, পরেও বলব না।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*