মণিপুর দিয়ে অভিযান শুরু, আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে কথা তৃণমূলের

Spread the love

তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য বিভিন্ন রাজ্যে সংগঠনকে ছড়িয়ে দেওয়া ও দলকে আরও মজবুত করা ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের এখন নজর ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিকে ৷ সেটিকেই পাখির চোখ করে কাজ করা শুরু করে দিয়েছেন অভিষেক ৷ মুকুল রায়ের প্রত্যাবর্তনের পর তাঁকে সঙ্গে নিয়েই রণকৌশল সাজাচ্ছেন তিনি ৷ সংগঠনের ব্যাপ্তির কাজ তাঁদের শুরু হচ্ছে মণিপুর অভিযান দিয়ে ৷ কারণ সামনের বছরই বিধানসভা নির্বাচন উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে ৷

দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে গত সপ্তাহ থেকেই সর্বভারতীয় স্তরে দলকে বিস্তারের পরিকল্পনা শুরু করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । এই কাজে তাঁর প্রধান সহযোগী এই মুহূর্তে দীর্ঘদিনের দুঁদে রাজনীতিক মুকুল রায় । এ ছাড়া তৃণমূলের ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর তো আছেনই । এই তিন মূর্তির প্রথম লক্ষ্য মণিপুর । উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই রাজ্যে আগেও মুকুল রায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মসূচি শুরু হয়েছিল । মুকুল ঘরে ফিরতেই, সেই উদ্যোগ আবার গতি পেতে চলেছে বলে খবর ।

বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন উত্তর-পূর্বের প্রতিবেশী রাজ্যে। আর তাই এখন থেকেই মণিপুরে ঘর গোছানো শুরু করে দিতে চাইছে তৃণমূল। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে আশাতীত ফল করার পর, এমনিতেই তৃণমূল কংগ্রেস বাড়তি অক্সিজেন পেয়েছে । একইসঙ্গে গোটা দেশেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের পক্ষে একটা ইতিবাচক হাওয়া তৈরি হয়েছে। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপি বিরোধিতায় এই মুহূর্তে বিরোধী কংগ্রেসের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা হচ্ছে তৃণমূলকে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মণিপুরে নিজেদের সংগঠন মজবুত করতে সক্রিয় হয়েছেন অভিষেক-মুকুলরা।

তৃণমূল সূত্রের খবর, মুকুল রায়ের ব্যক্তিগত যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে মণিপুরে কংগ্রেস এবং বিজেপির একদল নেতার সঙ্গে কথা বলা শুরু হয়েছে । সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দিন পনেরোর মধ্যেই ‘মিশন মণিপুর’ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের নীল নকশা প্রকাশ্যে আসতে পারে । দলের তরফ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করা হতে পারে, মণিপুরে জয়ের জন্য ঝাঁপাতে চাইছে দল । যেহেতু আগামী বছরই মণিপুরে বিধানসভা ভোট, তাই ইতিমধ্যেই বেশ কিছু আঞ্চলিক দলের নেতার সঙ্গেও কথা বলা শুরু করেছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব ।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই স্পষ্ট করেছেন, চার থেকে পাঁচটি বিধায়ককে জেতাতে দল ওখানে লড়াই করবে না। ৬০ আসনের মণিপুর বিধানসভায় তৃণমূলের লক্ষ্য কম করে ৩৫টি আসন । আঞ্চলিক দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে মণিপুরে সরকার গঠনের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় এ রাজ্যের শাসকদল।

গত বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে কংগ্রেস পেয়েছিল ২৮টি আসন, তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছিল একটি আসন । আর বিজেপি পায় ২১ টি আসন । কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী সময়ে কম আসন থাকলেও আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করে বিজেপি । সে সময় তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জেতা একমাত্র বিধায়ক দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেন । কিন্তু আশার কথা, ওই রাজ্যে সে সময় ২৫টি কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস । সেই সংখ্যাই তাদের মনোবল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ৷ একটু ঘাম ঝরালে মণিপুরে তাঁরা পাকাপোক্তভাবে ঘাসফুল ফোটাতে পারবেন বলে মনে করছেন অভিষেকরা ৷

সামনের বছর মণিপুরে বিধানসভা নির্বাচন । ইতিমধ্যেই সেখানে রাজনৈতিক ডামাডোল শুরু হয়েছে । তিন বিজেপি বিধায়ক দলত্যাগ করে কংগ্রেসে নাম লিখিয়েছেন । এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইছে তৃণমূল । শেষ পর্যন্ত তাদের পরিকল্পনা ঠিকমতো বাস্তবায়িত হলে, সেখানে তৃণমূলের পক্ষে সরকার গড়া অসম্ভব নয় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*