প্রয়াত স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, শোকপ্রকাশ মমতার

Spread the love

প্রয়াত অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। ভুগছিলেন কিডনির অসুখে, চলছিল ডায়ালিসিসও। বুধবার দুপুরে এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিশিষ্ট এই অভিনেত্রী। চলতি বছর ২২ মে ৭১ বছর বয়সে পা দিয়েছিলেন বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রী। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বুধবার দুপুর দু’টো পয়তাল্লিশ নাগাদ শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান তিনি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন দীর্ঘদিন। ছিল অন্যান্য বার্ধক্যজনিত সমস্যাও। বুধবার সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। হঠাৎই এই খারাপ খবরে স্তব্ধ শিল্পীমহল। মঞ্চ দাপিয়ে বেড়ানো সেই অভিনেত্রীর পথ চলা থমকে গেল বুধবার। চলে গেলেন সত্যজিৎ রায়ের ‘বিমলা’। তবে সিনেমার থেকেও বেশি বাংলা থিয়েটার জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া সিনেমা এবং নাট্য জগতে। শোকের ছায়া অনুরাগীমহলেও।

সোমিত্রর সঙ্গেই রুপোলি পর্দায় পথ চলা শুরু স্বাতীলেখার। ১৯৮৪ সালে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম ছবি। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ছবি ‘ঘরে বাইরে’-র মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন অভিনেত্রী। ছবিতে তাঁর সহ অভিনেতা ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। পরে অবশ্য দীর্ঘদিন বড় পর্দায় দেখা যায়নি তাঁকে। এই সময় থিয়েটারের মঞ্চ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন অভিনেত্রী। স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত শুধুমাত্র অভিনয় বললে অনেক কম বলা হবে, খুব ভালো গানও গাইতে পারতেন । নান্দীকার নাট্যগোষ্ঠীর বেশির ভাগ নাটকে তাঁর গান ও তাঁর তৈরী সুর মন ভরিয়েছে লক্ষ দর্শকের।

এরপর পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়ের হাত ধরে ফের একবার বড় পর্দায় প্রত্যাবর্তন ঘটে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের স্ত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্তের। দীর্ঘ ৩১ বছর পর সৌমিত্রর সঙ্গে তাঁর বড় পর্দায় ফেরা ‘বেলা শেষে’ ছবির মাধ্যমে, যা দাগ কেটে গিয়েছিল দর্শকমনে। বক্স অফিসে রেকর্ড গড়েছিল এই ছবি। সৌমিত্র-স্বাতীলেখাকে ফের দেখা যেত পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়ের ছবি ‘বেলাশুরু’-তে। যদিও সেই ছবি মু্ক্তির আগেই জুটি ভেঙে চলে গেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। গত বছর নভেম্বর মাসে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

ভারতীয় থিয়েটারে অভিনয়ে তার অবদানের জন্য স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত ২০১১ সালে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৫০ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭০-এর শুরুর দিকে এ. সি. বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশনার অধীনে স্বাতীলেখা থিয়েটারে কাজ শুরু করেন। তিনি বি. ভি. কারাট, তাপস সেন ও খালেদ চৌধুরীর মতো লোকের উৎসাহও পেয়েছেন।

১৯৭৮ সালে ‘নান্দীকার’ নাট্যগোষ্ঠীর মাধ্যমেই রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। নাটকের মঞ্চই পরবর্তীকালে দু’জনকে কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল ও বিয়ের বাঁধনে বেঁধেছিল। দু’জনে জুটি বেঁধে নান্দীকার গোষ্ঠীর মেরুদণ্ডের মতো কাজ করেছেন। অভিনয়-নির্দেশনার পাশাপাশি একাধিক নাটকের ভাবানুবাদ করেছেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। ‘অজ্ঞাতবাস’, ‘নাচনী’, ‘মাধবী’-র মত নাটকের মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন।বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রীর চলে যাওয়া নাট্য ও চলচ্চিত্র জগতের এক ব্যাপক ক্ষতি। দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল তাঁর অভিনয়ের সঙ্গে; ১৯৫০ থেকে শুরু করে ২০২১, তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁদের একমাত্র কন্যা সন্তানের নাম সোহিনী সেনগুপ্ত।

দুর্ঘটনার খবর পেয়েই শোকপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাতীলেখা সেনগুপ্তের স্বামী রুদ্রপ্রসাদ ও কন্যা সোহিনী সেনগুপ্ত সহ তাঁর অগণিত অনুরাগী ও আত্মীয়স্বজনকে আন্তরিক সমবেদনা জানান।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার
তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ
নবান্ন
৩২৫, শরৎ চ্যাটার্জি রোড
হাওড়া- ৭১১১০২

স্মারক সংখ্যা: ৭৩/আইসিএ/এনবি
তারিখ: ১৬/০৬/২০২১

মুখ্যমন্ত্রীর শোকবার্তা

বিশিষ্ট অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্তের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি।

তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

থিয়েটারে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু। সত্যজিৎ রায়ের ‘ঘরে বাইরে’ ছবিতে তাঁর অভিনয় দর্শক চিরদিন মনে রাখবেন। স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র ধর্মযুদ্ধ, বেলাশেষে, বরফ ইত্যাদি।

তিনি সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড, ওয়েস্ট বেঙ্গল থিয়েটার জার্নালিস্টস’ অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড সহ বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।

তাঁর প্রয়াণে অভিনয় জগতে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হল।

আমি স্বাতীলেখা সেনগুপ্তের স্বামী রুদ্রপ্রসাদ ও কন্যা সোহিনী সেনগুপ্তসহ তাঁর অগণিত অনুরাগী ও আত্মীয়স্বজনকে
আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*