ঠান্ডা মাথায় পরিবারের সদস্যদের খুন করেছে ১৯ বছর বয়সী মহম্মদ আসিফ। কালিয়াচকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে চোখ কপালে উঠছে তদন্তকারীদের। মালদার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর বলেন, ‘কোল্ডড্রিঙ্কের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে পরিবারের পাঁচ সদস্যকে খাইয়েছিল আসিফ।
এরপর ঠান্ডা মাথায় এক একজন সদস্যকে সুড়ঙ্গপথে জলের ট্যাঙ্কে এনে অচেতন অবস্থাতেই ফেলে দেয় সে। জলের ট্যাঙ্কে আগে থেকেই জল ভরে রেখেছিল সে।’ নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের জাল কতদূর বিস্তৃত, তা জানতে ইতিমধ্যেই দফায় দফায় তাকে জেরা করছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই চারজনের দেহ উদ্ধার হয় জলের ট্যাঙ্ক থেকে। ট্যাঙ্কের উপর মাটি ও বালি চাপা দেওয়া ছিল বলে জানা গিয়েছে। প্রত্যেকের মুখেই সেলোটেপ লাগানো ছিল। হাত-পাও বাঁধা ছিল তাঁদের। দেহগুলি ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রশ্নপত্রে উঠে এসেছে আসিফের দাদা মহম্মদ আরিফের ভূমিকাও। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ এই হত্যার ঘটনা ঘটে। সেইসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন আরিফও। তাঁকেও ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছিল বলে পুলিশি দেরায় দাবি করেছেন তিনি। যদিও, পরে ওষুধের প্রভাব কমে যাওয়ায় কোনওমতে হাত-পায়ের বাঁধন খুলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন তিনি। বিষয়টি নিয়ে অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘কেন মহম্মদ আরিফ দীর্ঘ চারমাস পর এই ঘটনার অভিযোগ করেন, সেদিকটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর ভূমিকাও সন্দেহজনক।’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের ঘর থেকে লক্ষাধিক টাকাও উদ্ধার হয়েছে। ঠিক কী কারণে তার এত টাকার প্রয়োজন হয়েছিল, সেদিকটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তদন্তে নেমে মহম্মদ আসিফের মানসিক স্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তুলছে পুলিশ। তাঁদের অনুমান, আসিফ মানসিক বিকারগ্রস্ত। জানা গিয়েছে, বাড়ির ভেতরেই একটি সুড়ঙ্গ তৈরি করেছিল আসিফ। সেখানেই দেহগুলি পুঁতে ঢালাই করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। এমনটাই প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের। প্রতিবেশী সূত্রে খবর, নিহত গৃহকর্তা ইট, বালি, পাথরের ব্যবসা করতেন। ডাম্পারও ছিল তাঁদের। পরিবার যথেষ্ট বিত্তশালী ছিল বলেও মনে করছেন তদন্তকারীরা। স্থানীয়দের দাবি, অভিযুক্ত এলাকারই এক মিশন স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ত। প্রতিবেশীদের কারও সঙ্গে বিশেষ মিশত না। ঘরের মধ্যেই বেশিরভাগ সময় কাটাত সে। জানা গিয়েছে, প্লাইউড দিয়ে বেশ কয়েকটি কফিন তৈরি করেছিল অভিযুক্ত আসিফ। বাবা-মাকে ওই কফিনে বন্দি করে এক্সপেরিমেন্টও করেছিল সে। তাঁদের মুখে সেলোটেপ লাগিয়ে কফিনে ঢুকিয়েছিল আসিফ। এমনটাই জানা যাচ্ছে পুলিশ সূত্রে।
Be the first to comment