জরুরি অবস্থা জারির ৪৬তম বর্ষপূর্তিতে সংশ্লিষ্ট সেই দুই বছরকে (১৯৭৫-১৯৭৭) ‘অন্ধকার সময়’ বলে উল্লেখ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৷ এদিন এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সেই অন্ধকার সময়কাল কখনও ভোলা যাবে না ৷’’
শুক্রবার জরুরি অবস্থা প্রসঙ্গে পর পর দু’টি টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী ৷ তাতে তিনি সরাসরি কাঠগড়ায় তোলেন কংগ্রেসকে ৷ প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, জরুরি অবস্থার সময় ভারতের গণতান্ত্রিক নীতিকে পদদলিত করেছিল কংগ্রেস ৷ প্রধানমন্ত্রী তাঁর টুইট বার্তায় লেখেন, ‘‘জরুরি অবস্থার সেই অন্ধকার সময় কখনও ভোলার নয় ৷ ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলির নিয়মিত ধ্বংসের সাক্ষী থেকেছে দেশ ৷ ভারতের গণতান্ত্রিক স্ফূর্তিকে আরও শক্তিশালী করতে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে হবে ৷ এবং আমাদের সাংবিধানিক নীতিগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে ৷’
প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা, জরুরি অবস্থার জন্য কংগ্রেসই দায়ী ছিল ৷ একইসঙ্গে, সেই কঠিন সময় যাঁরা গণতন্ত্রকে বাঁচানোর জন্য লড়াই করেছিলেন, তাঁদের কথাও টুইটে স্মরণ করেন নরেন্দ্র মোদি ৷
অন্যদিকে, এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহও জরুরি অবস্থার কথা স্মরণ করেন ৷ প্রধানমন্ত্রীর মতো তিনিও সেই পরিস্থিতির জন্য কংগ্রেসকেই দায়ী করেন ৷ আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, জরুরি অবস্থার বর্ষপূর্তিতে সরাসরি নেহরু-গান্ধি পরিবারকেই নিশানা করেন অমিত শাহ ৷ তাঁর অভিযোগ, শুধুমাত্র একটি পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা আওয়াজকে দমন করতেই গোটা দেশের উপর জরুরি অবস্থা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল ৷ অমিত শাহের মতে, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে জরুরি অবস্থা আসলে একটি অন্ধকার অধ্যায় ৷
প্রসঙ্গত, ইন্দিরা গান্ধি দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সালের মধ্যে টানা ২১ মাস ভারতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন ৷ আনুষ্ঠানিকভাবে সেই ঘোষণা কার্যকর করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ ৷ সংবিধানের ৩৫২ নম্বর ধারার আওতায় ‘অভ্যন্তরীণ সমস্যা’ মোকাবিলার জন্য জরুরি অবস্থা কার্যকর করা হয়েছিল ৷ ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন এর মেয়াদ শুরু হয় ৷ শেষ হয় ১৯৭৭ সালের ২১ মার্চ ৷
ডিক্রি জারি করে গোটা দেশের উপর জরুরি অবস্থা কার্যকর করা হয় ৷ যার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হাতেই শাসনের যাবতীয় ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয় ৷ স্থগিত করে দেওয়া হয় সমস্ত নির্বাচনী প্রক্রিয়া ৷ একইসঙ্গে, নাগরিক স্বাধীনতার উপর নানা বিধিনিষেধ আরোপিত হয় ৷
নিয়ম মাফিক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিই জরুরি অবস্থার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ৷ তাতে অনুমোদন দেন রাষ্ট্রপতি ৷ পরে মন্ত্রিগোষ্ঠী ও সংসদও সেই সিদ্ধান্তে সায় দেয় ৷ সরকার পক্ষের দাবি ছিল, সেই সময় ঘরে এবং বাইরে দেশকে বিপদের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছিল ৷ সেই কারণেই এই পদক্ষেপ করতে হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে ৷ স্বাধীন ভারতে জরুরি অবস্থার এই সময়কাল আজও অন্যতম বিতর্কিত অধ্যায় হিসাবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে ৷
Be the first to comment