শেষ হল নারদ মামলার স্থানান্তরের শুনানি ৷ আজ মুখ্যমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর হলফনামা দেওয়া নিয়ে শুনানি চলল দুই ঘণ্টা ধরে ৷ হলফনামা গ্রহণ হবে কি না, সেই সংক্রান্ত বিষয়ে আগামিকাল রায়দান হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ ৷ আজ প্রথমে এই মামলায় রাজ্যের হয়ে সওয়াল করলেন অ্যাডভোকেট জেনেরাল কিশোর দত্ত । প্রথমেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল জানতে চান রাজ্যের হলফনামা দেওয়ার কারণ ৷ মামলার শুরু থেকে এতদিন কেন হলফনামা জমা করা হয়নি, সেই বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন ৷
প্রশ্নের উত্তরে অ্যাডভোকেট জেনারেল জানালেন, ২৭ মে থেকে রাজ্য এই মামলায় রয়েছে। ২ জুন সিবিআই এই মামলায় তাদের বক্তব্য শেষ করেছে। ৭ জুন রাজ্য সরকার হলফনামা জমা দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, “চার হেভিওয়েটকে রাজ্য সাহায্য করছে বলে যে অভিযোগ সিবিআই করেছে তার বিরোধিতা করছি আমরা। আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। নিরাপত্তার বিষয়টিও রাজ্যের। তাই হলফনামা দিয়ে আমরা আমাদের বক্তব্য জানাতে চেয়েছিলাম।
আইন অনুযায়ী হলফনামা জমা দেওয়ার জন্য চার সপ্তাহ সময় পাওয়ার কথা। আমরা ৭ জুন হলফনামা পেশ করার আবেদন করেছিলাম। তাই আমাদের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যায়নি।” এর পাল্টা ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, “যদি চার সপ্তাহের মধ্যেই মামলার শুনানি শেষ হয়ে যেত, সেক্ষেত্রে আপনারা কী করতেন ?”
বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় আবেদনের শুনানি দ্রুত শেষ করার কথা বলেন ৷ অ্যাডভোকেট জেনেরালের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের এই আবেদনের শুনানি দ্রুত শেষ করুন । আপনাদের হলফনামা নেওয়ার আবেদন খারিজ করেছিলাম ৷ মামলা সুপ্রিম কোর্টে গেল ৷ সেখান থেকে আবার এখানে ফেরত পাঠানো হল ৷ এই বিষয়ে বেশিদিন শুনানি চলতে পারে না ৷ তাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে ।” সেইসময় অ্যাডভোকেট জেনেরাল তাদের হলফনামা গ্রহণ করার আবেদন জানান ৷
এরপরে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী বলেন,” শুধুমাত্র দেরি হওয়ার জন্য মামলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিতে অস্বীকার করতে পারে না আদালত ৷ এটা শুধুমাত্র একটা স্থানান্তরের মামলা নয় ৷ এই মামলায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত রয়েছে ৷ সেইজন্যই সিবিআই আমাদের হলফনামা জমার বিরোধিতা করতে পারে না ৷’’ তখন বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন বলেন, মুখ্যমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রী এই মামলায় অভিযুক্ত নন । মানুষের জমায়েত বিক্ষোভের কারণে তাঁদের এই মামলায় পার্টি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ১৭ মে থেকে মুখ্যমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সলিসিটর জেনেরাল তুষার মেহতা ৷ তখন বিচারপতি সৌমেন সেন বলেন, “ঘটনা সম্পর্কে যে তথ্য রাজ্যের কাছে আছে, তারা যদি সেটা আদালতের কাছে হলফনামা আকারে পেশ করতে চায় সেক্ষেত্রে আপনাদের আপত্তি কোথায় ? সিবিআই অভিযোগ করেছে বলেই মানুষের জমায়েতে তত্ত্ব মেনে নিতে পারে না আদালত।”
এর পাল্টা সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা বলেন,” পরিকল্পিতভাবেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হলফনামা জমা দেননি মুখ্যমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রী।” এই বলে তাঁর নিজের বক্তব্য শেষ করেন সলিসিটর জেনেরাল তুষার মেহেতা । পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, নারদ মামলার শুনানি আজ শেষ হল । এই মামলার রায়দান করা হবে আগামীকাল ।
১৭ মে নারদ মামলায় সিবিআই রাজ্যের চার হেভিওয়েট নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে। ২৯ মে কলকাতা হাইকোর্টের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ এই চারজনের জামিন মঞ্জুর করলেও নারদ মামলা এই রাজ্য থেকে সরানোর যে আবেদন করেছিল সিবিআই, তার উপর এতদিন ধরে শুনানি চলছিল ৷ সেই মামলার শুনানি শেষ হল আজ। আগামীকাল রায় দেবে আদালত।
Be the first to comment