বিয়ের পর থাকতে হবে পুণেতে, শুনেই মুখ ভার হয়েছিল সংযুক্তার। কিন্তু বাবার জেদ, পাত্র ভালো ইঞ্জিনিয়ার, তা ছাড়া আদি বাড়ি তো বাংলাতেই। সুতরাং সংযুক্তার বিয়ে হয়ে যায় পুণেবাসী বিনয়-এর সঙ্গে। তারপর থেকে পুণেতেই আছে সংযুক্তা-বিনয়। এর মধ্যে ওদের জীবনে এসেছে আকাশ—ওদের পুত্র সন্তান। সুখেই আছে ওরা। শুধু শরৎকাল এলেই বুকের ভিতরটা টনটন করে ওঠে। ফোনে মা যখন বলে, ঘরদোর পরিষ্কার হচ্ছে, কাপড়জামা রোদে দেওয়া হচ্ছে, তখন মন যেন একছুটে পৌঁছে যায় পুণা থেকে পশ্চিমবঙ্গে তার নিজের রাজ্যে। বাড়ির সামনের শিউলি গাছটার কথা মনে পড়ে। তুলতুলে নরম ধবধবে সাদা ছোট্ট ফুল প্রথম যখন সেই গাছটায় আসত, তখন তার লালচে হলুদ নরম বোঁটাতে আলতো চাপ দিয়ে তুলত সংযুক্তা। যেন ব্যথা না পায় ফুলটা। আর প্রথম ফুলটা দিত ঠাকুরকে। অবশ্য ঠাকুরের আশীর্বাদে এর পর থেকে আর ফুল তোলার প্রয়োজন পড়ত না। মা দুর্গার রাঙা চরণের আসার অপেক্ষায় রাশি রাশি ফুলে ভরে থাকত উঠোন। সংযুক্তার বাপের বাড়ি কলকাতায় নয়, মেদিনীপুরের মোহনপুরে। ওখানে শ্বেতশুভ্র কাশফুলের দোলা হৃদয়ে যেন খুশির জোয়ার আনত। বিয়ের পর প্রথম কয়েক বছর বাপের বাড়ির পুজোর সময় গেলেও, এখন পুণেতেই কাটায় পুজো।
মন্দ কাটে না প্রবাসে পুজো। সকাল থেকেই বেরিয়ে পড়ে তিন জন প্যাণ্ডেল হপিং-এ। নান্দনিক, কল্যাণনগর পূজা, বঙ্গীয় সংসদ নগর রোড, বিমাননগর পূজা, পশ্চিম পুণে বঙ্গীয় পরিষদ দুর্গাপূজা, কল্যাণনগর সার্বজনীন দুর্গোৎসব, কোরেগাঁও পার্ক দুর্গাপূজা, বেঙ্গলী অ্যাসোসিয়েশন পূজা, সিদ্ধি গার্ডেন, বঙ্গভারতী দুর্গাপূজা পিম্পরি, কালীবাড়ি সমিতি পূজা, বঙ্গীয় সংস্কৃতি সংসদ কংগ্রেস ভবন পূজা, মডার্ন কলেজ গ্রাউন্ড পূজা, পুণ্য নগরী কলেজ গ্রাউন্ড পূজা, গগনগিরি মঙ্গল কার্যালয় দুর্গাপূজা, পুণে ক্যাম্প দুর্গাপূজা, পুণে বঙ্গসম্মিলনী এনডিএ মন্দির দুর্গাপূজা, বঙ্গভারতী পিম্পরি, এএফএমসি দুর্গাপূজা, শিবাজিনগর পূজা, সারা শহর জুড়ে বিভিন্ন পুজো হয় পুণেতে। উৎসবের আনন্দ তাই আজ পুণেতে বসেই উপভোগ করে সংযুক্তা বা সংযুক্তাদের মতো আরও অনেকে।
Be the first to comment