বীরভূম জেলার রামপুরহাট থানার অন্তর্গত দ্বারকা নদীর পূর্ব পাড়ে অতীতের চন্ডীপুর আজ তারাপীঠে পরিনত হয়েছে। তবে আগেকার শিমূল গাছ আজ আর নেই। নেই খরস্রোতা দ্বারকা নদীটিও। বর্তমানে মহাশ্মশানের ভয়াবহতাও অনেকটাই কমে গিয়েছে। তবে প্রাচীন কালের মতো আজও দেবীর মাহাত্ম্য অমলিন। তারা মায়ের প্রাচীন মন্দিরটি ধ্বংস হওয়ার পর ১২২৫ বঙ্গাব্দে মল্লারপুরের বাসিন্দা জগন্নাথ রায় আটচালা ইট দিয়ে নতুন মন্দিরটি নির্মান করেন। মন্দিরটির টেরাকোটা শিল্প আজও পর্যটকদের নজর টানে। মন্দিরের প্রবেশপথের খিলানের ওপর দেবী দুর্গার মূর্তি রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন পৌরাণিক আখ্যানও রয়েছে সারা মন্দির জুড়ে। মন্দিরের উল্টোদিকে আছে চন্ডীমন্ডপ। মূল দেবী এখানে তারা কালী। দেবীর মুখ ছাড়া সারা অঙ্গ কাপড়ে আবৃত। আর অন্তরালে কষ্টিপাথরের শিবঠাকুর বর্তমান। রাত আটটার পর মহাকালী দর্শনের বিশেষ ব্যবস্থা মেলে। এছাড়াও মন্দির চত্বরেই রয়েছে বিষ্ণুর দুই পাষাণমূর্তি। তারা মন্দিরে ঈশানকোনের ছোট্ট মন্দিরে চন্দ্রচূড় শিব বর্তমান।
তারা মন্দিরের উত্তরে নানান কিংবদন্তিতে ঘেরা জীয়ৎকুন্ডু। কুন্ডের জল খুবই পবিত্র। তারাপীঠের বিরাম মন্দিরটিও দর্শনীয়। তারা মায়ের গলার মুন্ডমালা যেখানে রেখে স্নানে যেতেন দ্বারকায়। আনন্দময়ী মায়ের আশ্রমও তৈরী হয়েছে তারাপীঠে। তারামন্দিরের বিপরীতে দ্বারকা নদীর তীরে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তারাপীঠ মহাশ্মশান। এই মহাশ্মশানে শবদাহে মৃতের স্বর্গবাসের পারমিট মেলে। তবে জঙ্গলাকীর্ণ, তেমনই নরকরোটি ও নরদেহের অস্থি ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তারই মাঝে মহাশ্মশান আজ তন্ত্রাভিলাষী, সাধু ফকিরদের উপনিবেশে রূপান্তরিত। দিনের শেষে অরও যেন বীভৎসতায় পেয়ে বসে এই পুণ্যভূমি।
শ্মশানের পূর্বপ্রান্তে প্রশস্ত এক বাঁধানো বেদি আছে। দ্বারকার কুলে শ্বেত শিমূলের তলায় বেদির নীচে বশিষ্ঠদেবের পঞ্চমূর্তির আসন পাতা। দেবীর বামকোলে রয়েছে শিব। আর কাছেই রয়েছে পূর্ণানন্দের সমাধি। সাধক বামাক্ষ্যাপার সমাধির উপর মন্দিরে শ্বেতমর্মরেরএক চতুষ্কোণ বেদিতে ফনাধরা এক সর্পরাজ মূর্তি। আর সাধকের মূর্তি হয়েছে তাঁর পর্ণকুটিরে। অদূরে বামাক্ষ্যাপার জন্মস্থান আটলা গ্রাম। আশ্বিন মাসের কোজাগরী পূর্ণিমায় তারামায়ের ৭ দিনের বার্ষিক উৎসব ও মেলা, চৈত্র মাসে দ্বারকায় বারুনী স্নান জমকালো উৎসব। এছাড়াও সারাবছর ধরে তারাপীঠে নানা অনুষ্ঠান লেগেই থাকে।
কীভাবে যাবেন?
হাওড়া-সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনে ২০৭ কিলোমিটার দূরে রামপুরহাট স্টেশন। ট্রেনও যাচ্ছে হাওড়া থেকে গণদেবতা এক্সপ্রেস, জয়নগর প্যাসেঞ্জার, রাজগীর ফার্স্ট প্যাসেঞ্জার, মালদহ ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস, রামপুরহাট বিশ্বভারতী ফার্স্ট প্যাসেঞ্জার, গয়া এক্সপ্রেস, জামালপুর এক্সপ্রেস ছাড়াও শিয়ালদহ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে চলে যাওয়া যায় রামপুরহাটে। রামপুরহাট স্টেশন থেকে ৪ কিলোমিটার দূরের তারাপীঠের মন্দিরে।
কোথায় থাকবেন?
থাকা ও খাওয়ার জন্য তারাপীঠে প্রচুর হোটেল আছে। বাস স্ট্যান্ড থেকে মন্দিরের পথে এগোলেই হোটেল শুভম, হোটেল নিউ বীণাপানি, হোটেল তীর্থাবাস, হোটেল পূর্বাশা, হোটেল সোনার বাংলা, বেনফিসের রক্তজবা ছাড়াও প্রচুর লজ রয়েছে মন্দির সংলগ্ন এলাকায়, যেমনঃ মোহন লজ, আশীর্বাদ লজ, কেশরী লজ, সাবিত্রী ভবন, নটরাজ লজ, মা তারা লজ, সন্দীপ লজ ছাড়াও অনেক লজ আছে। তবে অমাবস্যা ও ছুটিতে তারাপীঠের হোটেলের ভাড়া বেশ খানিকটা বেড়ে যায়।
Be the first to comment