ছোট্ট শিশু প্রশ্ন তোলে ‘এলেম আমি কোথা থেকে’। মা শুনে বলেন, ‘ইচ্ছে হয়ে ছিলি মনের মাঝারে’। বিবাহিত নারী-পুরুষের সন্তানের আকাঙ্ক্ষা স্বাভাবিক। কিন্তু অনেক দম্পতির এই ইচ্ছাপূরণ হয় না। তাই বন্ধ্যাত্বকে অভিশাপ মেনে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। তবে আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তানহীন দম্পতির কোল ভরে আসছে ফুটফুটে শিশু। ১৯৭৮-এ ২৫ জুলাই বিশ্বের প্রথম আইভিএফ বেবি বা নলজাতক সন্তানের জন্ম হয়। প্যাট্রিক স্টেপটো এবং রবার্ট এডওয়ার্ডস এই অসাধ্য সাধন করেন। লেসসি ও পিটার ব্রাউন-এর কোল আলো করে আসে লুই জয় ব্রাউন। এই ১৯৭৮-এর ৩ অক্টোবর ভারতের মাটিতে বাংলার বুকে প্রথম টেস্টটিউব বেবি দুর্গা ওরফে কানুপ্রিয়া আগরওয়ালের জন্ম হয়। বাস্তবিক লুই ব্রাউন-এর জন্মের ৬০ দিনের মাথাতেই সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে ভারতে তথা এশিয়ায় প্রথম নলজাতক শিশু জন্ম নিল। এই যুগান্তকারী কৃতিত্বের দাবীদার ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায়। বাস্তবিক রবার্ট ও প্যাট্রিক যে পদ্ধতিতে গবেষণা করে আইভিএফ বেবি সৃষ্টি করেছিলেন, ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায় তার থেকে অনেক পা এগিয়ে অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে এই ইতিহাস সৃষ্টি করেন। এসব সত্ত্বেও তিনি ছিলেন উপহাসের পাত্র। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার বা তাঁর পদ্ধতিকে মেনে নিতে চাননি। যদিও ১৯৮৬ সালে টি সি আনন্দকুমার একইভাবে নলজাতক সন্তানের জন্ম দেন। ইতিহাস ঘাঁটতে ঘাঁটতে তিনি দেখতে পান ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায় কানুপ্রিয়াকে জন্ম দেওয়ার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কথা। তিনি বলেন, আমাদের থেকে অনেক অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায় এই কাজ করেছেন। আমরা তাঁর কাছে বামন সদৃশ। এই ন্যূনতম স্বীকৃতিও দেখে যেতে পারেননি ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায়। অপমানের গ্লানিতে ১৯৮১ সালে আত্মহননের পথ বেছে নেন তিনি। পরবর্তীকালে তাঁকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র তৈরি হয়— ‘এক ডক্টর কি মত’। কিন্তু শুধুই একটা সিনেমা তৈরি করে তাঁর যুগান্তকারী আবিষ্কারকে কি স্বীকৃতি দেওয়া যায়! তিনি আজও নিজ ভূমে অবহেলিত। পাননি প্রাপ্য মর্যাদা। এ ব্যাপারে সোচ্চার হন বিশিষ্ট সুপ্রজননবিদ ডা. গৌতম খাস্তগীর। আইভিএফ সন্তান সৃষ্টিতে তিনি কলকাতা তথা দেশে প্রসিদ্ধ। ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করার সময় থেকে ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে আকৃষ্ট হন। তারপর ভারতে এসে তাঁর নিজের গবেষণার পাশাপাশি ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে স্বীকৃতি দেওয়া হোক এই দাবি তোলেন। ডা. খাস্তগীর-এর মতে, ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায় ‘ভারতরত্ন’ পাওয়ার যোগ্য। অন্তত তাঁকে ‘পদ্মবিভূষণ’, ‘বঙ্গরত্ন’ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ভারত সরকার কেউই এখনও পর্যন্ত তাঁকে সম্মানে ভূষিত করেননি। বামফ্রন্ট আমলে এনআরএস হাসপাতালে একটি বিল্ডিং তৈরি করে তাঁর নামে উৎসর্গ করার কথা ছিল। কিন্তু ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন ছাড়া আর কোনও কাজ হয়নি। তাঁর নামে হওয়া উচিত একটি রাস্তার নামকরণ বা বাংলার যে কোনও মেডিকেল কলেজে একটি বিভাগকে তাঁর নামাঙ্কিত করা হোক। এই দাবি নিয়ে ১ থেকে ৩ অক্টোবর লুই ব্রাউন ও কানুপ্রিয়া আগরওয়াল ওরফে দুর্গাকে কলকাতায় আনছেন ডা. গৌতম খাস্তগীর।
Be the first to comment