ভোটের প্রচারে বেরিয়ে ফের একবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর রাজ্যে উপনির্বাচন ৷ ভোট হবে দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ৷ সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মমতা স্বয়ং। ইতিমধ্যেই জোরকদমে ভোটের প্রচার শুরু করেছেন তিনি ৷ বৃহস্পতিবারও প্রচারে বের হন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ স্থানীয় একটি মন্দিরে গিয়ে কথা বলেন সেখানকার পুরোহিত ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে ৷ ভোটের প্রচারে বেরিয়ে ফের একবার বিজেপি তথা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হন মমতা ৷ তাঁর অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে বিভেদের রাজনীতি কায়েম করার চেষ্টা করছে গেরুয়াশিবির ৷
এদিন ভবানীপুরের লেডিস পার্ক এলাকায় যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সরাসরি কথা বলেন স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে ৷ সেই সময়েই মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি আমাদের রাজ্যে বিভেদের রাজনীতি করছে ৷ কিন্তু বাংলা সব ধর্ম, সব বর্ণের মানুষের জন্য ৷ এখানে সমস্ত সম্প্রদায় মিলেমিশে একসঙ্গে থাকে ৷’’ আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই ইস্যুকে সামনে রেখেই বিজেপির সমালোচনায় সরব হন মমতা ৷ তিনি বলেন, ‘‘ওরা (বিজেপি) নন্দীগ্রামকে পাকিস্তান বলেছিল ৷ এখন বলছে ভবানীপুরও পাকিস্তান হবে ৷’’ মমতার বার্তা, এমন মন্তব্য করে আসলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে বিজেপি ৷
এর পাল্টা হিসাবে সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্বের বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি মন্দিরে যাই ৷ মসজিদে যাই ৷ গুরুদ্বারেও যাই ৷ আমি সব ধর্মকে সম্মান করি ৷ আমি চাই, এখানে সব ধর্মের মানুষই স্বাধীনভাবে তাঁদের ধর্মীয় আচার-আচরণ পালন করুন ৷ বিজেপি এই নিয়েই রাজনীতি করছে ৷’’ উল্লেখ্য, ক’দিন আগেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ভবানীপুরে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেস ভবানীপুরকে খিদিরপুরের মতো করে তৈরি করতে চায় ৷ ওয়াকিবহাল মহলের অনুমান, এদিন নাম না করে দিলীপেরই সমালোচনা করেন মমতা ৷
স্পষ্ট ভাষায় মমতা বলেন, ‘‘যে কায়দায় বিজেপি রাজনীতি করছে, তা আমার পছন্দ নয় ৷ বাংলায় বিভাজনের কোনও জায়গা নেই ৷ এখানে আমরা সবাইকে নিয়েই চলি ৷ সব ধর্মকে সম্মান করি ৷ হিন্দুস্তান আরও ভাল হিন্দুস্তান হবে ৷ হিন্দুস্তান কখনওই পাকিস্তান হবে না ৷ আগামীতে দেশকে দিশা দেখাবে বাংলা ৷’’ প্রসঙ্গত, বেশ কিছুদিন ধরেই জাতীয়স্তরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ৷ বাংলার বাইরে অন্যান্য রাজ্যের রাজনীতিতেও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে চাইছেন তিনি ৷ তাঁর পরের লক্ষ্য যে দিল্লি, সেকথাও বহুবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা ৷ আর সেই কারণেই উপনির্বাচনের প্রচারেও বাংলার নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন তিনি ৷
এদিন কেন্দ্রের মোদী সরকারের কড়া সমালোচনা করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী ৷ তিনি বলেন, ‘‘মোদী সরকার দেশটাকে বিক্রি করে দিচ্ছে ৷ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে ৷ এমনকী, করোনার সময় অতিমারী নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে গঙ্গায় মৃতদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে ৷ মৃতদেহকেও সঠিকভাবে সম্মান জানায়নি এরা (বিজেপি) ৷ আমি মসজিদে গেলে ওরা কটাক্ষ করেন ৷ তবে আমি শুধু মসজিদে যাই না ৷ মন্দির, মসজিদ, গির্জা, সব জায়গায় যাই ৷ আমাদের বাংলা রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের বাংলা, রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের বাংলা ৷ তাঁরা যত মত, তত পথের কথা বলেছেন ৷ আমাদের তা মনে রাখতে হবে ৷’’
Be the first to comment