অর্থমন্ত্রী থেকে অর্থ দফতরের উপদেষ্টা হতে পারেন অমিত মিত্র ৷ অর্থ দফতর নিজের হাতেই রাখতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাত পোহালেই খড়দা বিধানসভার ভোট। ২০১১ এবং ২০১৬ বিধানসভার নির্বাচনে খড়দা থেকেই জিতেছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে অর্থমন্ত্রী হলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাননি এই প্রবীণ অর্থনীতিবীদ। ফলে নভেম্বরের শুরুতে অর্থমন্ত্রী হিসাবে তাঁর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এই অবস্থায় রাজ্যের পরবর্তী অর্থমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে।
নবান্ন সূত্রে খবর, মন্ত্রীত্ব গেলেও অর্থ দফতরের দায়িত্ব থেকে এখনই অব্যহতি মিলছে না অমিত মিত্রের। যতদূর জানা যাচ্ছে, নভেম্বরের শুরু থেকে তাঁকে অর্থ দফতরের মুখ্য উপদেষ্টা করে রাখা হতে পারে। এক্ষেত্রে অর্থ দফতর চলবে তাঁর পরামর্শ মেনেই। এখন প্রশ্ন, তাহলে নতুন অর্থমন্ত্রী হবেন কে! যতদূর খবর, রাজ্যে নতুন করে অর্থমন্ত্রী কাউকে করা হবে না। সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা দফতরের সংখ্যা আরও একটি বাড়তে পারে কারণ এক্ষেত্রে অর্থ দফতরের দায়িত্ব নিজের হাতেই রাখতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা যত প্রজেক্ট নিয়েছেন, সবটাই হাতের তালুর মতো জানতেন অমিত ৷ অর্থনীতির এই ছাত্রের বিদেশি ডিগ্রিও আছে। গোটা দেশে ইতিমধ্যেই প্রশংসিত তাঁর কাজ। তিনি বণিকসভা ফিকির চেয়ারম্যানও ছিলেন ৷ পাশাপাশি বিভিন্ন বণিকসভার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। কাজেই তাঁকে উপদেষ্টা রেখেই বাজেট ইত্যাদি কাজ হবে বলে ধারণা।
এবার প্রশ্ন, অর্থ দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর মুখ্যমন্ত্রী যদি সামলানও, কিন্তু সর্বক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকে তো চাই। প্রথমে ভাবা হয়েছিল শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম কিন্তু তাঁকে ফের নতুন দায়িত্ব দিতে চান না মুখ্যমন্ত্রী, এমনটাই সূত্রের খবর। উঠে এসেছে পুর এবং নগরোন্নয়নমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নাম। তিনি হয়তো এই দফতরের প্রতিমন্ত্রী হতে পারেন। চন্দ্রিমা আইনজীবী হিসাবে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি কর বা ট্যাক্সের কাজ যথেষ্ট ভাল বোঝেন। এরই মধ্যে কেন্দ্রের ডাকা জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে চন্দ্রিমা প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন ৷ তাঁর কাজে মমতা যথেষ্ট খুশি সুতরাং অর্থ দফতরের সর্বক্ষণের দায়িত্ব তিনি পেতে পারেন।
অমিত মিত্র 2011 সাল থেকেই রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে এসেছেন । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক বেশ মসৃণ । শিল্পপতি হওয়ার দৌলতে দেশে তাঁর একটি পরিচিতিও আছে । ফিকির প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল পদ্মশ্রী সম্মানেও সম্মানিত হয়েছেন । কিন্তু তার বাইরেও তাঁর একটা পরিচয় আছে । তাঁর মা বেলা মিত্র ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভাইঝি । নেতাজির দাদা সুরেশচন্দ্র বসু ছিলেন তাঁর বাবা । বেলাদেবী জড়িত ছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর সঙ্গে । অর্থমন্ত্রীর বাবা হরিদাস মিত্র যেমন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন, তেমনই ছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যও । স্বাভাবিকভাবেই অমিত মিত্রকে প্রথম থেকেই খুব পছন্দ করতেন মমতা । কেন্দ্রে তিনি যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন তখন অমিত মিত্রের পরামর্শেই তিনি দেশের রেল বাজেটে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি মডেলে বেশ কিছু হাসপাতাল ও রেলের কারখানা গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছিলেন ৷
অমিত মিত্র যখন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হন তখন রাজ্য কার্যত দেনায় ডুবেছিল। ধারাবাহিক আর্থিক সমস্যার মধ্যেও কিন্তু অর্থমন্ত্রী হিসাবে তিনি একের পর এক সরকারি প্রকল্প কার্যকর করেছেন সফল ভাবেই। ঋণের বহর বাড়লেও, এপর্যন্ত চালু হওয়া সবক’টি সামাজিক প্রকল্পের মাধ্যমে বেশিরভাগ মানুষের কাছে কিছু না কিছু সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। একদিকে রাজ্যের অর্থসঙ্কট, অন্যদিকে ঋণ পরিশোধ, সামাজিক প্রকল্পে বিপুল বরাদ্দ এবং দৈনন্দিন অর্থনীতি- এত কিছুর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে অর্থনীতি পরিচালনা করায় অমিতের ওপর মমতার আস্থা আরও বেড়েছে। তাই অমিতকে বাদ রেখে রাজ্যের অর্থনীতি পরিচালনার ভার অন্য কারও ওপর ছাড়তে চাইছেন না মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই কারণেই অমিতকে রাজ্যের আর্থিক উপদেষ্টা করে অর্থ দফতরের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই হিসাবে দেশে তিনিই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হবেন যিনি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলাবেন অর্থাত্ জন্ম হতে চলেছে আরও একটা ইতিহাসের।
Be the first to comment