রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হলেও, সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকের আবহ সব দলেই । কী বিজেপি, কী সিপিএম, কী কংগ্রেস, সকলেই সদ্য প্রয়াত মন্ত্রীর স্মৃতিচারণে মগ্ন । কিন্তু এই শোকের সময়ে ফেসবুকে বিস্ফোরণ ঘটালেন অভিনেত্রী তথা বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় । নেটমাধ্যমে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রয়াত মন্ত্রীকে নিয়ে একের পর এক কুৎসিত মন্তব্য পোস্ট করা হয়েছে ।
বৃহস্পতিবার, কালীপুজোর রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুব্রত ৷ তাতে কার্যতই দীপাবলির রাজে অন্ধকার নেমে আসে বাংলার রাজনীতিতে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অধীররঞ্জন চৌধুরী, বিমান বসু, দিলীপ ঘোষ সকলেই সুব্রতর প্রয়াণকে অপুরণীয় ক্ষতি বলে উল্লেখ করেন ৷ কিন্তু সকলে যখন সুব্রতকে শ্রদ্ধা জানাতে ব্যস্ত, সেই সময় নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বালিগঞ্জের বিধায়ককে কটাক্ষ করে রূপা লেখেন, ‘‘ধ্যাৎ, সবাই যেন হঠাৎ বালিগঞ্জে একা হয়ে গেল ৷ সরি বস !’’
প্রথম পোস্টটি করা মাত্রই রূপার সমালোচনায় সরব হয় নেটদুনিয়া ৷ কিন্তু তার জবাব দিতে নেমে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন রূপা ৷ কমেন্ট বক্সে সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে লেখেন, ‘‘পুজো ঝকমক করা, আর টাকা তোলা ছাড়া যার কোনও অবদান ছিল না, তার জন্য কোনও শ্রদ্ধা নেই ৷ সরি বস ৷’’ সেখানেই থামেনি রূপার হাত ৷ এর পরেও একের পর এক পোস্টে তিনি লিখে চলেন, ‘‘এরা পশ্চিমবঙ্গের অনেক ক্ষতি হওয়ার কারণ ৷’’ তাঁর অ্যাকাউন্টে তিনি যা খুশি লিখতে পারেন, কারও কোনও মতামতের প্রয়োজন নেই বলেও মন্তব্য করেন রূপা ৷ তিনি লেখেন, ‘‘এটা আমার অ্যাকাউন্ট, আমার লেখার জায়গা, অযথা নাক গলাবেন না ৷ কারও কোনও প্রতিক্রিয়া চাই না আমি ৷ পিরিয়ড ৷’’
রূপা নিজে ওই পোস্টগুলি করেছেন, নাকি কোনও সহযোগী সেগুলি করেছেন তা যদিও স্পষ্ট নয় । তবে সমালোচনার মুখে পড়ে যে ভাবে বিরুদ্ধ মত পোষণকারীদের নিজের চরকায় তেল দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি । তাতে সবক’টি পোস্ট রূপার নিজেরই লেখা এবং তা নিয়ে তাঁর মধ্যে বিন্দুমাত্র আফশোস নেই বলে মনে করছেন নেট দুনিয়ার বাসিন্দারা ৷ তাঁর সৌজন্যবোধ, সময়জ্ঞান এবং রুচি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে ৷
কারণ সম্প্রতি পথ দুর্ঘটনায় নিহত বিজেপি কাউন্সিলর তিস্তা বিশ্বাসের মৃত্যুর প্রসঙ্গও টেনে আনেন রূপা ৷ প্রয়াত সুব্রতকে নিশানা করেন রূপা ৷ লেখেন, ‘‘তিস্তাকে নিয়েছো বস ৷ কিছু তো ফেরত নেবে মা কালী ৷’’ এর পর আরও বড় বিস্ফোরণ ঘটান রূপা ৷ দাবি করেন, 2021-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসতে দর কষাকষি করছিলেন সুব্রত ৷ রূপা লেখেন, ‘‘2021-এর নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল ওর ৷ দরদামে পোষায়নি ৷ অধিকাংশ সময়ই মুখ বন্ধ রাখি আমি ৷’’
কিন্তু সদ্য প্রয়াত মন্ত্রীকে নিয়ে রূপার এই ধরনের ভাষার প্রয়োগ মনঃপুত হয়নি অধিকাংশেরই ৷ কমেন্ট বক্সে দু’-এক জন রূপার সুরে গলা মেলালেও, সিংহভাগই তাঁর তীব্র সমালোচনা করেছেন ৷ এর মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের বিরোধী শিবিরের নেতা-কর্মীরাও ৷ তাঁদের দাবি, বিরোধী দল করেন বলে কখনও তাঁদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি সুব্রত ৷ বরং দেখা হলেই হেসে কথা বলতেন ৷ খবরাখবর নিতেন ৷ স্বভাবতই রূপার উপর ক্ষুব্ধ রাজনৈতিক শিবিরও ৷
তবে নিজের আচরণ নিয়ে কোনও ব্যাখ্যাই দেননি বিজেপি সাংসদ ৷ বরং এই মুহূর্তে কাশীতে ‘সংস্কৃতি সংসদ’ অনুষ্ঠানে রয়েছেন তিনি ৷ সেখান থেকেও বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন রূপা ৷ ইসলাম এবং খ্রীস্ট ধর্মাবলম্বীরা ছোট থেকে ছেলেমেদের ‘কোরান’, ‘বাইবেল’ পড়ালেও, হিন্দু ছেলেমেয়েদের কেন ছোট থেকে ‘বেদ’, ‘উপনিষদ’ পড়ানো হয়নি, কীসের নিষেধাজ্ঞা ছিল, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি ৷
Be the first to comment