বীরভূমের দেউচা-পাচামিতে কয়লা উত্তোলন প্রকল্প শুরু করতে চলেছে রাজ্য সরকার ৷ সেই প্রকল্পের খুঁটিনাটি মঙ্গলবার বিধানসভায় ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ জানালেন, সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বাম-সরকার যে ভুল করেছিল, তাঁর সরকার সেই ভুল করবে না ৷
প্রসঙ্গত, দেউচা-পাচামি হল বীরভূমের মহম্মদবাজার হরিণ সিং কোল ব্লক। ৩৪০০ একর জমি নিয়ে ১১৭৮ মিলিয়ন হেক্টর কয়লা। ১১৪৮ মিলিয়ন হেক্টর ব্যাসল্ট জমা রয়েছে। এই যে ৩৪০০ একরের মধ্যে এক হাজার একর সরকারি জমি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা আগে সরকারি জমিতে কাজ শুরু করব। তারপর ধাপে ধাপে অন্যান্য জায়গায় জমি নেওয়া হবে।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, এই এলাকায় ১২টি গ্রামে ৪৩১৪টি বাড়িতে ২১ হাজারের বেশি মানুষ বাস করেন। যার মধ্যে তিন হাজার ছ’শো জন তফশিলি জাতিভুক্ত এবং ৯০৩৪ জন তফশিলি উপজাতিভুক্ত। বিপুল কয়লা জমা থাকায় যে এলাকা দেশের সবচেয়ে বড় কোল ব্লকগুলির মধ্যে অন্যতম।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এখান থেকে উত্তোলিত কয়লা শুধু জেলা নয়, রাজ্য ও দেশের অর্থনীতির উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে। এর ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক লক্ষের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। রাজ্য সরকার ৩৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। সমগ্র প্রকল্পটি ধাপে ধাপে করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, দেউচা-পাচামিতে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছে রাজ্য সরকার ৷ এর মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা পুনর্বাসন প্যাকেজে ঘোষণা করা হবে ৷ প্রথম পর্যায়ে দেওয়ানগঞ্জ থেকে কাজ শুরু হবে ৷ তিনি জানান, জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে ৷ বাড়িও দেওয়া হবে ৷ পরিবার পিছু একজন কাজও পাবেন ৷ ক্ষতিপূরণের নানা স্তর থাকবে বলেও তিনি জানান ৷
এদিন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, বাড়ি-সহ জমি থাকলে বিঘা প্রতি ১০-১৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে ৷ এছাড়াও স্থানান্তকরণের জন্য পাবেন পাঁচ লক্ষ টাকা। আর আর কলোনিতে পাবেন ৬০০ বর্গফুটের বাড়ি। যে সব পরিবার বাড়ি জমি হারাবে, তাদের পরিবারের একজন জুনিয়র কনস্টেবলের চাকরি পাবেন। এমন চাকরি পাবেন ৪৯৪২ জন।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, প্রায় ৩ হাজার জন ক্রাশার লেবার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাবেন। ওই এলাকায় ১৬০ জন কৃষি শ্রমিক ৫০ হাজার টাকা পাবেন। ৫০০ দিনের জন্য ১০০ দিনের কাজ পাবেন। ২৮৫ জন ক্রাশার মালিক তাঁদের জমি বাড়ির দাম এবং ৫০ হাজার টাকা শিফ্টিং অ্যালাউন্স পাবেন। ছয় মাস ধরে ১০ ট্রাক ব্যাসল্ট বিনামূল্যে পাবেন। কাছের চাঁদা মৌজায় ব্যাসল্ট শিল্প উদ্যানের পুনর্গঠন হবে। ২৭ জন খাদান মালিক জমি ও বাড়ির দাম পাবেন।
পুরো ঘোষণা শেষ করার পর সিঙ্গুরের প্রসঙ্গ তোলেন মমতা ৷ বলেন, ‘‘সিঙ্গুর যেভাবে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল আমরা সেভাবে করব না ৷’’ সিঙ্গুরে জোর করে জমি অধিগ্রহণের অভিযোগ তুলেই রাজ্যে রাজনৈতিক শক্তিবৃদ্ধি হয় মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেসের ৷ সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের উপর ভর করেই ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসেন মমতা ৷
পরে আদালতের রায়েও দেখা যায় যে সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের পদ্ধতি ভুল ছিল ৷ সেই পথে যে তাঁর সরকার হাঁটবে না, সেটাও স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ একই সঙ্গে এদিন বিধানসভায় তাঁর সরকারের একাধিক প্রকল্পের কথাও জানিয়েছেন তিনি ৷ ১৬ নভেম্বর থেকে দুয়ারে রেশন চালু হবে ৷ গাড়িতে করে রেশন যাবে ৷ পাড়ায় একটা জায়গায় দাঁড়াবে ৷ ৮ লক্ষ ৯৪ হাজার পড়ুয়া ট্যাবের টাকা পাচ্ছে ৷
অন্যদিকে দুয়ারে সরকার নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সরকারের অসামান্য প্রকল্প দুয়ারে সরকার ৷ আগামিদিনে বিশ্বের এক নম্বর প্রকল্প হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াবে ৷’’
Be the first to comment