এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পওয়ারের সঙ্গে বৈঠক শেষে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্মিলিত বিরোধী জোটে কংগ্রেসের উপস্থিতি প্রসঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য, “বিজেপির বিরুদ্ধে সম্মিলিত মঞ্চ গড়ে লড়তে চায় তৃণমূল-সহ আঞ্চলিক দলগুলি। কিন্তু কেউ যদি লড়তে না চায়, তাহলে কী করা যাবে!”
মুম্বই সফরের প্রথম দিনই শিব সেনা নেতা আদিত্য ঠাকরের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় দিন এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ারের সঙ্গে দেখা করলেন তৃণমূল নেত্রী। বুধবার বৃষ্টিস্নাত দুপুরে শরদ পাওয়ারের বাড়িতে যান মমতা। প্রায় এক ঘণ্টা তাঁর কথা হয় পাওয়ারের সঙ্গে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এনসিপির শীর্ষস্থানীয় নেতা তথা মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিকও ছিলেন ওই আলোচনায়। তবে এদিন শরদ পাওয়ারের জন্য উপহার নিয়ে যান মমতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ছত্রপতি শিবাজির ছবি সহ এক বাঁধানো ফ্রেম। যে বিরোধী ঐক্য ছত্রখান হয়ে যাওয়া নিয়ে বার বার আলোচনায় হচ্ছে, ঠিক সেই সময় এই বৈঠক থেকে মমতা যেন বার্তা দিয়ে গেলেন, বিরোধীরা এককাট্টাই রয়েছে।
ঘটনাচক্রে মুম্বইয়ে যে দু’টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে তৃণমূলনেত্রী বৈঠক করলেন, সেই দু’টি দলই কংগ্রেসের জোটসঙ্গী এবং ইউপিএ জোটের অংশ। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, বিজেপিকে রুখতে যে সম্মিলিত বিরোধী জোটের কথা মমতা বা পাওয়াররা বারবার বলেছেন, সেই জোটে কি কংগ্রেসকে ভাগীদার হিসাবে দেখছেন তাঁরা? পওয়ার সরাসরি এই প্রশ্নের উত্তর না দিলেও, মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেস লড়াইয়ের মাঠেই নেই। শুধু তাই নয়, তৃণমূল নেত্রীর সাফ কথা, এখন ইউপিএ অর্থাৎ কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটের কোনও অস্তিত্ব নেই। মমতার ইঙ্গিতে স্পষ্ট, ইউপিএ নয়। বিজেপিকে রুখতে বৃহত্তম ফ্রন্ট বানাতে চান তিনি। আর সেই ফ্রন্টেই বিভিন্ন রাজ্যের আঞ্চলিক দলগুলিকে এক ছাতার তলায় আনার চেষ্টা করবে তৃণমূল।
এদিন বৈঠক শেষে মমতা এবং পওয়ার সমস্বরে বলছেন, বিজেপি বিরোধী মহাজোটের নেতৃত্ব নিয়ে তাঁরা ভাবিত নন। তাঁরা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য বিকল্প তুলে ধরতে চান। এনসিপি সুপ্রিমো পওয়ার যেমন এদিন বলছেন, “বিজেপি বিরোধী এই মহাজোটে কে নেতৃত্ব দেবে সেটা আমাদের কাছে ইস্যু নয়। আমরা চাই মানুষের সামনে এমন একটা বিকল্প তুলে ধরতে, যার উপর মানুষ ভরসা করতে পারবে।” তেমনই মমতাকেও বলতে শোনা গিয়েছে, দেশের এই কঠিন পরিস্থিতিতে শক্তিশালী বিকল্প তৈরি করতে হবে। তাই সমমনস্ক সব দলকে একত্রিত করে মানুষের সামনে শক্তিশালী বিকল্প তুলে ধরাটাই তাঁর লক্ষ্য।
সম্প্রতি কংগ্রেসের সম্পর্কে মাঝে মধ্যেই বিরূপ মন্তব্য করতে গিয়েছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে। মমতা থেকে শুরু করে অভিষেক, বক্রোক্তি করতে কেউই ছাড়েননি। প্রশ্ন উঠছিল, তাহলে কি কংগ্রেসকে বাদ দিয়েই জোট করতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? আজ সেই প্রসঙ্গেও মমতাকে পাশে রেখে জবাব দিলেন এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ার। বললেন, “কংগ্রেস হোক বা অন্য যে কোনও দল, যারাই বিজেপির বিরোধী, তারা যদি এক ছাতার তলায় আসতে চায়… তাদের স্বাগত।”
মমতার সঙ্গে বৈঠক শেষে শরদ পাওয়ার আরও বলেন, “আমাদের এক শক্তিশালী বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। আমরা আজকের জন্য ভাবছি না। আমরা ভাবছি নির্বাচনের কথা। এই শক্তিশালী বিকল্প গড়ে তুলতেই হবে। আর সেই জন্যই মমতা বৈঠক করতে এসেছিলেন। আমাদের বৈঠক ফলপ্রসু হয়েছে।”
Be the first to comment