১৯ ডিসেম্বর কলকাতা পুরসভার ভোট। আগামী দু’ তিনমাসের মধ্যেই বাকি পুরসভাগুলিতেও ভোটের কথা জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই ভোটে তৃণমূলের গলার কাঁটা হতে পারে দলের ভিতরে বার বার ওঠা গোষ্ঠীকোন্দলের অভিযোগ। তাই জেলা সফরে গিয়ে সে বিষয়ে কড়া বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নদিয়ার কৃষ্ণনগরে প্রশাসনিক বৈঠকে গিয়ে একেবারে নাম করে সতর্ক করলেন সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে। মমতার বার্তা, সকলকে নিয়ে চলতে হবে। দল কাকে প্রার্থী করবে, তা দলের ভাবনা। কাজ করে যেতে হবে সকলকেই।
এদিন প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি মহুয়া মৈত্রের নাম করেই বলেন, ”মহুয়া এখানে আমি একটা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই। কে কার পক্ষে বিপক্ষে দেখার আমার দরকার নেই। আমি সাজিয়ে গুছিয়ে কিছু লোক পাঠিয়ে ইউটিউবে অথবা ডিজিটালে অথবা পেপারে দিয়ে দিলাম, এই রাজনীতি একদিন চলতে পারে চিরদিন নয়। একই লোক চিরদিন এক জায়গায় থাকবে এটাও মেনে নেওয়াটা ঠিক নয়। যখন ভোট হবে পার্টি ঠিক করবে কে লড়বে কে না। এখানে মতপার্থক্যের কোনও জায়গা নেই। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এটা আমি বলে গেলাম।”
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর বৃহস্পতিবারই প্রথমবার নদিয়াতে প্রশাসনিক বৈঠকে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটের পর থেকেই মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে বেশ কিছু জায়গায় জেলা নেতৃত্বের ক্ষোভ জন্মাচ্ছিল। তা সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানোও হয়।
একই সঙ্গে ২০২১ এর বিধানসভা ভোটে তৃণমূল যতই বিপুল আসন জিতে ক্ষমতায় আসুক না কেন, নদিয়ার ফল নিয়ে খুশি নয় নেতৃত্ব। বিশেষ করে রানাঘাট মহকুমার। এ নিয়েও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই কাঠগড়ায় তোলেন স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশ। এই গোষ্ঠীকোন্দলের অভিযোগ নদিয়া জেলায় নতুন নয়। কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে জেলার প্রবীন নেতাদের অভিযোগ, মহুয়া তাঁদের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ না রেখেই নিজের মতো কাজ করেন।
এ নিয়ে তেহট্টের প্রাক্তন বিধায়ক প্রয়াত গৌরীশঙ্কর দত্ত, নাকাশিপাড়ার বিধায়ক কল্লোল খাঁ, কারামন্ত্রী তথা কৃষ্ণনগর দক্ষিণের বিধায়ক উজ্জ্বল বিশ্বাস একাধিকবার অতীতে সরবও হন। রাজ্য সভাপতি ও মহাসচিবকেও তাঁরা বিষয়টি জানিয়েছিলেন। যা নিয়ে বহু জলঘোলা হয়।
প্রথমে সংসদ এলাকা কৃষ্ণনগর ও রানাঘাটকে ভেঙে সংগঠন চললেও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পরে মহুয়া মৈত্রকে গোটা নদিয়া জেলার সভাপতি করেছিল দল। এরপরই পরিস্থিতি আরও জটিল হতে শুরু করে বলে অভিযোগ জেলার নেতাদের একাংশের। ফের সংসদীয় এলাকা হিসাবে ভেঙে দেওয়া হয় সংগঠনকে। আপাতত কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়াকে গোয়ায় সংগঠন শক্ত করার দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছে দল। এরই মধ্যে এদিন জেলায় বসেই মহুয়ার নাম করেই বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
একই সঙ্গে বিডিও, জেলাশাসক, জেলার ওসি এবং আইসিদেরও সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সকলে একসঙ্গে, যোগাযোগ রেখে যাতে কাজ করেন সে বার্তাই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
Be the first to comment