অবশেষে হাইকোর্টে স্বস্তি পেলেন মিঠুন চক্রবর্তী। উস্কানিমূলক মন্তব্যের মামলায় স্বস্তি ‘মহাগুরু’র। মিঠুনের বিরুদ্ধে মানিকতলা থানায় দায়ের হওয়া এফআইআর খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না বলেই বৃহস্পতিবার নির্দেশ দিল আদালত।
বিচারপতি কৌশিক চন্দের সিঙ্গল বেঞ্চ এদিন বলে, ডায়লগ যিনি দিয়েছেন, তিনি বিখ্যাত নায়ক। ডায়লগ বলার জন্যই বিখ্যাত উনি। মিঠুন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই ডায়লগ বলেছেন। উনি অস্বীকারও করেননি বিষয়টি। দু’টি ডায়লগই মজার। মোটেই ‘হেট স্পিচ’ নয়। মূলত ‘মারব এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে’ এবং ‘এক ছোবলেই ছবি’ মিঠুনের জনপ্রিয় এই দু’টি সংলাপ নিয়েই মামলা দায়ের হয় আদালতে। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর বিধানসভা ভোটে দলীয় প্রচারে গিয়ে এই সংলাপ বলতে শোনা যায় মহাগুরুকে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, এই সংলাপ শুধুমাত্র দর্শকের মনোরঞ্জনের জন্যই বলে থাকেন তিনি। একই সঙ্গে আদালতের পর্যবেক্ষণ, সংলাপগুলি বলার প্রায় তিন মাস পর এফআইআর দায়ের হয়। ফলে ভোটার ভয় পেতে পারেন এমন আশঙ্কাও অমূলক। তাই তাঁর বিরুদ্ধে সমস্ত এফআইআর খারিজ করতে বলে আদালত। পাশাপাশি শুধুমাত্র সংলাপ বলার কারণে মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে পুলিশ যে তদন্ত শুরু করেছিল সেগুলিও নিষ্প্রয়োজন বলেই মনে করছে কলকাতা হাইকোর্ট।
প্রথমে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩এ, ৫০৪ ও ৫০৫ ধারায় এফআইআর রুজু হয় অভিনেতার বিরুদ্ধে। হিংসা ছড়ানো, শান্তি নষ্ট করার চেষ্টার মতো একাধিক অভিযোগ আনা হয় মিঠুনের বিরুদ্ধে। এই এফআইআর খারিজের আবেদন করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন মিঠুন চক্রবর্তী। বর্তমানে হাইকোর্টে বিচারাধীন সেই মামলা। পাশাপাশি এই ঘটনায় পুলিশের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয় তাঁকে।
আদালতের এই রায় প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “পুরো বিষয়টাই তৃণমূল কংগ্রেসের একটা নাটক ছিল। মিঠুন চক্রবর্তী যখন তৃণমূল কংগ্রেসে ছিলেন এই একই ডায়লগ তখনও বলেছিলেন। সে সময় তো হাততালি দিয়েছিল। পরে বিজেপিতে আসতেই তৃণমূলের মত পাল্টে যায়, পথ বদলে যায়। সেই একই ডায়লগে তাদের মনে হয় হিংসা ছড়ানো হচ্ছে।”
অন্যদিকে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “আমি যতদূর জানি মহামান্য কৌশিক চন্দের এজলাসে এই মামলাটি হয়েছে। এর আগে দেখেছি কৌশিক চন্দের এজলাস থেকে অন্য মামলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আবেদন হয়েছিল। কারণ বিচারপতি হওয়ার আগে কৌশিকবাবুকে দেখা গিয়েছিল পুরোদস্তুর বিজেপির মঞ্চে কিংবা বিজেপি ঘেঁষা মঞ্চে দিলীপ ঘোষদের সঙ্গে। তবে আমরা মনে মনি উনি যখন বিচারপতির আসনে বসেছেন, ওনার বিচারই শেষ কথা।
এই রায়ের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগকারী মৃত্যুঞ্জয় পাল এবং আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে চলেছেন। কারণ, ভোটের সময় যখন উত্তেজনা তখন দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো বেছে বেছে ‘মারব এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে’ বলছেন। উনি তো রামকৃষ্ণদেবের চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। কই যত মত তত পথ তো বলেননি।”
Be the first to comment