দুর্নীতি নিয়ে কড়া মমতা, আগামীদিনে অনলাইনেই সব পৌর পরিষেবা

Spread the love

বুধবার থেকে কলকাতার পৌরভোটের প্রচারে নামলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এদিন উত্তর কলকাতার প্রচারে নেমে দলের প্রার্থীদের সতর্কবার্তা দিলেন তিনি। তাঁর স্পষ্ট বার্তা, রাস্তাঘাট, জল, আলো-সাধারণ মানুষের এই সমস্যা দেখার দায়িত্ব কাউন্সিলরের । কারও বিপদ হলে কাউন্সিলরকে সবার আগে ছুটে যেতে হবে । যাঁরা দেখতে পারবেন না, তাঁদের কাউন্সিলর হওয়ার দরকার নেই ।

এদিন পৌরভোটের প্রচারে মমতার বক্তব্যের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল দলীয় কাউন্সিলরদের জন্য শৃঙ্খলা নিয়ে বার্তা । বিভিন্ন নির্বাচনে বিজেপি থেকে শুরু করে বাম, তৃণমূলের তোলাবাজি সিন্ডিকেট রাজের অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছে । এদিন এর বিরুদ্ধে বার্তা দিলেন মমতা ।

নির্বাচনের আগেই দলের হবু কাউন্সিলরদের তৃণমূল সুপ্রিমোর বার্তা, ‘‘কেউ এলাকায় বাড়ি করলে জিনিসপত্র কাউন্সিলরের বলে দেওয়া জায়গা থেকে নিতে হবে, এমনটা চলবে না । বাড়ির প্ল্যান পাস করাতে গিয়ে আপনাকে টাকা দিতে হবে, তাও আর শুনব না । এবার থেকে প্ল্যানের ছাড়পত্র সবকিছুই অনলাইনে হবে । আবেদনের সাতদিনের মধ্যেই মিলবে ছাড়পত্র ।’’

এদিন মমতা বলেন, ‘‘এখন কলকাতায় এলে মানুষ বলে কী ছিল আর কলকাতায় এখন কী হয়েছে । প্রচুর উন্নয়নের কাজ করেছি আমরা । আরও কাজ করতে হবে । তবে আগামী দিনে আমার প্রায়োরিটি হল শিল্প আর কর্মসংস্থান । রাজ্যের শিল্প করে দেখিয়ে দেব আমরা ।’’

পৌরভোটের প্রচারে বিরোধীদের একটা বড় অস্ত্র পানীয় জল আর নিকাশি নিয়ে অভিযোগ । বিশেষ করে বৃষ্টির জলে শহরবাসীর ভোগান্তি নিয়ে সরব হয়েছে সব বিরোধী পক্ষই । এই অবস্থায় ভোট প্রচারে এই বিষয়গুলিকেও ছুঁয়ে গিয়েছেন মমতা । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কলকাতার মানুষ বিনামূল্য জল পান । এখানকার নিকাশি ব্যবস্থা অনেক উন্নত । আলো দিয়ে গোটা কলকাতাকে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে । আগামী দিনে আরও কাজ করা হবে ।’’

এদিন শহর কলকাতার পৌর পরিষেবার প্রশংসা করতে গিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘‘আমরা কোনও কাজ ফেলে রাখি না । দুঃস্বপ্নের নয়, কলকাতা এখন স্বপ্নের শহর । যে বাইরে থেকে আসে সেই দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে যায় শহরকে ।’’ একই সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন, ‘‘বেঙ্গালুরু-মুম্বই-দিল্লি-চেন্নাই যেখানেই যান না কেন, এত ভাল সাজানো শহর আর পাবেন না । ২৬০ কোটি টাকা খরচ করে টালা ব্রিজ করা হচ্ছে। এছাড়া মেয়েদের জন্য সবথেকে নিরাপদ শহর কলকাতা।

লক্ষ্যণীয়ভাবে ভোটের প্রচারে এদিন বিরোধীদের প্রসঙ্গ ছিল প্রায় উহ্য বরং উন্নততর কলকাতার লক্ষ্যে এই সরকার কি করতে চাইছে সেকথাও তুলে ধরেছেন তিনি । একইসঙ্গে পুরভোটের আগে হবু কাউন্সিলরদের মানুষের কাজে কোনও আপস নয় এমন বার্তা দিতে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

এবার পৌরভোটের অনেকেই টিকিট পাননি। সে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এদিন মমতা ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর রতন মালাকারের কথা টেনে আনেন। এদিন তাঁর প্রসঙ্গে নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার ৭৩ নম্বর ওয়ার্ড। কিছুদিন আগে যাচ্ছিলাম। হঠাত্‍ কয়েকজন লোক আমার গাড়ি দাঁড় করিয়ে জানান, কলের পাইপ খারাপ হয়ে গিয়েছে। কবে থেকে বলছি কাজ হচ্ছে না। আমি তখন কাউন্সিলরকে ফোন করলাম। বললাম, কী রে তোকে বলছে পাইপ সারিয়ে দিতে। পাইপটাও কি আমি সারিয়ে দেব? তাহলে তুমি কাউন্সিলর থাকবে কেন? এবার আর টিকিট দিইনি। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, এই ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিদায়ী কাউন্সিলর রতন মালাকার টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসেবে প্রার্থী হয়েছিলেন ৷ পরে নাম প্রত্যাহার করেন ৷ এই কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন মমতার ভ্রাতৃবধূ কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায় ৷

এর পর মমতা বলেন, সাংসদ, বিধায়করা স্থানীয় কাজ করতে পারেন না। সেই কাজগুলো করতে হবে কাউন্সিলরদের। আপনার এলাকায় জল নেই, রাস্তা নেই, আলো খারাপ। আমার পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। এটা দেখার কাজ কাউন্সিলরদের। যে দেখতে পারবেন না, কাউন্সিলর হবেন না। এইটুকু কাজ কিন্তু করতে হবে। কাউন্সিলরদের যা দায়িত্ব থাকে, তা করতেই হবে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*