ভোট শতাংশে বামেদের দ্বিতীয় হওয়াই কলকাতার নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চমক

Spread the love

প্রচার পর্ব থেকে নির্বাচনের দিন, এবার কলকাতা পৌরনিগমের নির্বাচনের ফলাফলের দেওয়াল লিখন স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে। মঙ্গলবার ফল প্রকাশের পর দেখা গেলো প্রত্যাশা মতোই কলকাতা পৌরনিগমের বোর্ড দখলে হ্যাটট্রিক করল তৃণমূল কংগ্রেস।কিন্তু দ্বিতীয় স্থানে কে থাকবে, তা নিয়ে কৌতুহল ছিলই ৷ বিজেপি যেভাবে গত কয়েক বছরে বাম-কংগ্রেসকে কোণঠাসা করে শক্তিবৃদ্ধি করেছে, কলকাতাতেও কি তার পুনরাবৃত্তি হবে ? নাকি ঘুরে দাঁড়াবে বাম-কংগ্রেস ? এই প্রশ্নগুলির উত্তরের অপেক্ষাতেও ছিলেন মহানগরের বাসিন্দারা ৷

মঙ্গলবার ফল প্রকাশের পর যে চিত্র সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে, কলকাতার মানুষের আস্থা এখনও কিছুটা হলেও বামেদের উপর রয়েছে। তাই আসন সংখ্যার নিরিখে না হোক ভোট শতাংশে দ্বিতীয় স্থানে চলে এল বামেরা ৷ বিজেপি কিছুটা পিছিয়ে তৃতীয় স্থানে রইল ৷ আর কংগ্রেসের অবস্থা আরও শোচনীয় হল ৷ এবার ১৩৪টি আসনে জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ কলকাতা পৌরনিগমের ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে বাকি আসনগুলি ভাগাভাগি হয়েছে বাম-কংগ্রেস-বিজেপি ও নির্দলের মধ্যে ৷ সেখানে বিজেপি তিনটি আসন পেয়ে বিরোধীদের মধ্যে এগিয়ে ৷ আর বাম ও কংগ্রেসের ঝুলিতে গিয়েছে দু’টি করে আসন ৷ তিনজন নির্দল প্রার্থীও জিতেছেন ৷

এই পরিসংখ্যান থেকে তৃণমূলের সঙ্গে কোনও তুলনাতেই আনা যায় না বিরোধীদের ৷ তবে কলকাতার মানুষ যে বিজেপির থেকে বামেদের বেশি পছন্দ করছেন, তা বলা যেতেই পারে ৷ প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে যা ইঙ্গিত মিলছে, তাতে শুধু সিপিএমই ভোট শতাংশে বিজেপিকে পিছনে ফেলতে পারে।

কলকাতার প্রায় ৭২ শতাংশ ভোট গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে ৷ দ্বিতীয় স্থানে থাকা বামেরা পেয়েছে ১১ শতাংশের কিছু বেশি ভোট ৷ বিজেপি পেয়েছে ৯ শতাংশ ভোট ৷ আর কংগ্রেসের ভোট শতাংশ ৪.৪৭ ৷ কলকাতা পৌরনিগমের ১৬টি বরোতেও জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷

২০১৫ সালের কলকাতা পৌরনিগমের নির্বাচনে বিজেপি ৭টি ওয়ার্ডে জিতেছিল ৷ ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে কলকাতার ২২টি ওয়ার্ডে এগিয়েছিল বিজেপি ৷ কিন্তু মাস কয়েক আগের বিধানসভা নির্বাচনে সেই সংখ্যা কমে ১২-তে এসে ঠেকেছিল ৷ ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে ভবানীপুরের দু’টি ওয়ার্ডে এগিয়েছিল বিজেপি ৷ কিন্তু সেপ্টেম্বরে উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ের সময় ওই দু’টি ওয়ার্ডও পুনরুদ্ধার করে তৃণমূল ৷

২০১৫ সালের কলকাতা পৌরমনিগমের নির্বাচনে ১৫.৪২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি ৷ তার পর সময় যত এগিয়েছে বঙ্গে শক্তি বেড়েছে গেরুয়া শিবিরের ৷ চলতি বছরের বিধানসভা নির্বাচনে ৭৭ আসনে জিতে বিজেপিই প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পেয়েছে ৷ অথচ কলকাতার ভোটে ব্যর্থ হল তারা ৷ অন্যদিকে বিধানসভার উপনির্বাচনের পর থেকে বামেদের শক্তি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে আবার ৷ বামেরা গ্রাম বাংলা ও কলকাতা সংলগ্ন এলাকায় বরাবরই শক্তিশালী ছিল ৷ শক্তি কমলেও, আসন সংখ্যা শূন্য হলেও বামেদের ভোট শতাংশ দুই সংখ্যার নিচে নামেনি ৷ কলকাতা পৌরনিগমের অন্তর্গত যাদবপুর (২৭.৫৭%), কসবা (১৭.৫৬%), টালিগঞ্জ (২০.৫৭%), বেহালা পশ্চিম (২০.৪৯%), বেহালা পূর্ব (১৩.৬০%), শ্যামপুকুর (১০.৫২%), মানিকতলা (১০.১৬%), কাশীপুর-বেলগাছিয়ায় (১০.৯৪%) তাদের ভোট শতাংশ দুই সংখ্যায় ছিল ৷

২০১১ সালে বামেদের নাস্তানাবুদ হতে হয় তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে ৷ তার পর বিজেপিও তাদের একেবারে কোণঠাসা করে দিয়েছিল ৷ এই পরিস্থিতিতে এবারের কলকাতার ভোটে ১২৮টি ওয়ার্ডে লড়াই করে দু’টিতে জয় পেল বামেরা ৷ আর ৬৫টি ওয়ার্ডে তারাই দ্বিতীয় স্থানে ৷

অন্যদিকে বিজেপি ১৪৪টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছিল ৷ পরে দু’জন প্রার্থী সরে দাঁড়ান ভোটের লড়াই থেকে ৷ সেই হিসেবে ১৪২টির মধ্যে বিজেপি জিতেছে ৩টি আসনে ৷ ৫৪টি ওয়ার্ডে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ৷ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বামেদের থেকে বেশি আসনে লড়েও এই ক্ষেত্রেও পিছিয়ে বিজেপি ৷

2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে বামেরা একটিও আসনে জিততে পারেনি ৷ এই বছরের বিধানসভা ভোটেও সেই একই পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে ৷ তাছাড়া প্রতিটি ভোটেই তাদের ভোট শতাংশ মারাত্মক ভাবে কমে গিয়েছে ৷ কিন্তু অক্টোবরের শেষে যে উপনির্বাচন হয়েছে, সেখান থেকে পরিস্থিতি একটু একটু করে ঘুরতে শুরু করেছে ৷ কলকাতা পৌরনিগমের ভোটেও একই ছবি সামনে এল ৷

তাহলে কি বামেরা এবার দাবি করতে পারে যে তাদের ভাল দিন আবার ফিরে আসছে ? এর উত্তর যে না হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ কিন্তু বাম নেতারা এটা ভেবে তৃপ্তি পেতে পারেন যে, যখন কোনও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞই তাঁদের কলকাতার ভোটে একটিও আসন জেতার পূর্বাভাস দেয়নি, তখন তারা দু’টি আসনে জিতেছে এবং ভোট শতাংশের নিরিখে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে ৷

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*