আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের মামলা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায় খারিজ হলো সুপ্রিম কোর্টে। শৃঙ্খলাভঙ্গের মামলা কলকাতায় রাখতে চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যসচিব। গতবছর ২২ শে অক্টোবর সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালের (CAT) প্রিন্সিপাল বেঞ্চ (দিল্লি) কলকাতা থেকে মামলা দিল্লিতে সরানোর নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গত ২৬ শে অক্টোবর কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন প্রাক্তন মুখ্যসচিব।
সেই মামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট আলাপনের আবেদনকে মান্যতা দেয়। কলকাতা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের সেই নির্দেশকে আজ শীর্ষ আদালতে খারিজ করে দেওয়া হল। সুপ্রিম কোর্টে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে মামলা লড়ছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। কেন্দ্রের তরফে উপস্থিত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা।
এর আগে কলকাতা হাই কোর্টে এই মামলায় রায় আলাপনবাবুর পক্ষে ছিল। কলকাতা হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল কেন্দ্র। কেন্দ্রের দাবি, আলাপনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার শুনানি দিল্লিতেই হওয়া উচিত। আজ সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের আবেদনকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশের পক্ষে শীর্ষ আদালত যু্ক্তি দিয়েছে যে, এই মামলায় নির্দেশ দেওয়ার কোনও এক্তিয়ার নেই কলকাতা হাইকোর্টের। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় উপযুক্ত হাইকোর্টে এই মামলার প্রেক্ষিতে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন।
যদিও এর আগে কেন্দ্রের যুক্তির বিপক্ষে প্রাক্তন মুখ্যসচিবের যুক্তি, তিনি কলকাতায় কাজ করতেন। তিনি কলকাতার বাসিন্দা। তাই এই মামলার শুনানি কলকাতাতেই হওয়া উচিত। আলাপনের এই যুক্তিকে উড়িয়ে দিয়ে কেন্দ্রের যুক্তিকেই মান্যতা দিল সুপ্রিম কোর্ট।
উল্লেখ্য, গোটা ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের ২৮ মে। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ -এর পর প্রধানমন্ত্রী ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে একটি পর্যালোচনা বৈঠক ডেকেছিলেন। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনেরই উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু, ‘ইয়াসের’ ফলে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি সামলানোর কাজে ব্যস্ত থাকায় প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে উপস্থিত হননি আলাপন। তাঁর এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয় তাঁকে। দিল্লিতে নর্থ ব্লকে হাজির হতে বলে চিঠি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু সেখানে উপস্থিত না হয়ে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রধানমন্ত্রী তথা কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর চেয়ারম্যান নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকে উপস্থিত না হওয়ায় আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ভঙ্গ করার অভিযোগ ওঠে। নির্ধারিত সময় দিল্লিতে যোগ না দেওয়ায় রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে শো-কজ করে কেন্দ্র।শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০০৫ সালের বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্রের কর্মিবর্গ দফতরের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। নির্দেশ আসা সত্ত্বেও তিনি কেন হাজিরা দিলেন না, সেই কারণ জানতে চেয়ে এই শো- কজ করা হয়। এর পর ডিপার্টমেন্ট অব পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং-এর তরফে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করা হয়।
Be the first to comment