শিবির থাকলেও গরহাজির আধিকারিক, ৩ ঘণ্টা আটকে রইল সাগরযাত্রী পুণ্যার্থীদের টিকাকরণ

Spread the love

শর্তসাপেক্ষে ছাড় মিলেছে গঙ্গাসাগর মেলার। তবে, হাইকোর্টের নির্দেশ যথাযথ পালিত না হলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে মেলা এমন সম্ভাবনাও রয়েছে। বরাবরই রাজ্যের তরফে মেলা করার পক্ষেই সওয়াল করা হয়েছে। বারবার বলা হয়েছে, সমস্ত বিধি মেনেই মেলা করা হবে। সাগরযাত্রায় আসা পুণ্যার্থীরা যাঁরা দ্বিতীয় ডোজ় পাননি তাঁদের মেলা চত্বরের অস্থায়ী শিবিরেই টিকাকরণ করা হবে। কিন্তু, শুরুতেই খানিক হোঁচট খেল সে প্রক্রিয়া। কারণ, ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের গরহাজির। প্রায় টানা তিন ঘণ্টা আটকে রইলেন পুণ্যার্থীরা।

মঙ্গলবারই কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে মেলায় যে পুণ্যার্থীরা যাবেন তাঁদের প্রত্যেকের দুটি টিকাগ্রহণের শংসাপত্র থাকতে হবে। টিকার শংসাপত্র না থাকলে আরটিপিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতে হবে। যদি, কোনও পুণ্যার্থী করোনা টিকার কেবল একটি ডোজ় পেয়ে থাকেন তবে তাঁকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়ার ব্যবস্থা শিবিরেই করতে হবে। কিন্তু, কার্যত, বুধবার দেখা গেল, সম্পূর্ণ ছবি টা উল্টো।

শিবির রয়েছে। পুণ্যার্থীরাও অপেক্ষা করছেন টিকা নেবেন বলে। কিন্তু ঝাড়া ৩ ঘণ্টা কেটে গেলেও  শিবিরে এসে পৌঁছননি ডেটা এন্ট্রি অপারেটর। এমনকী, দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই আধিকারিকের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তখন পুরসভায় যোগাযোগ করা হলে ও গোটা ঘটনাটি জানানো হলে অন্য আরেক আধিকারিককে পাঠানো হয়। টানা ৩ ঘণ্টা পর আউটরামের ঘাটে মেলার মাঠে  টিকাকরণের কাজ শুরু হয়।

প্রশ্ন উঠছে কেন এই গাফিলতি? এর কোনও সদুত্তর এখনও দিতে পারেনি জেলা প্রশাসন। প্রসঙ্গত, কোভিড পরিস্থিতিতে মেলা হবে কি না তা নিয়েই সংশয় ছিল প্রথম থেকেই। শর্তসাপেক্ষে ছাড়ও দিয়েছে হাইকোর্ট। কিন্তু আদৌ কি সমস্ত বিধি পালিত হচ্ছে? বিশেষত গঙ্গাসাগরের যে ছবি সামনে এসেছে তা রীতিমতো ভয় ধরাচ্ছে।

আদালত যেখানে নির্দেশ দিয়েছে গোটা গঙ্গাসাগর দ্বীপটিকেই ‘নোটিফায়েড এরিয়া’ বলে ঘোষণা করতে সেখানে, মঙ্গলবার দেখা যায় শয়ে শয়ে পুণ্যার্থীর আগমন ঘটেছে। অনেকের মুখেই নেই মাস্ক। প্রশ্ন করলে কেউ কেউ এড়িয়ে যাচ্ছেন। এদিকে কোভিড প্রতিরোধে প্রচারে কোনও খামতি রাখেনি প্রশাসন। কিন্তু হুঁশ ফিরছে কই? গঙ্গাসাগরে কর্তব্যরত এক সিভিক ভলেন্টিয়ারের কথায়, “গোটা গঙ্গাসাগরে মোট ৫০ জন তীর্থযাত্রী! ভাবাই যায় না! সম্ভবই নয়। এত বড় একটা জায়গা! কীভাবে কতটা দেখা সম্ভব। তাও আমরা চেষ্টা করছি। যতটা পারব, করে যাচ্ছি।”

বস্তুত, মঙ্গলবার আদালত  নির্দেশ দিয়েছে গোটা গঙ্গাসাগর দ্বীপটিকেই ‘নোটিফায়েড এরিয়া’ বলে ঘোষণা করা হোক। গোটা দ্বীপে ৫০ জনের বেশি পুণ্যার্থী থাকতে পারবেন না। রাজ্য সরকারের তরফে আগে বলা হয়েছিল, গঙ্গাসাগরে কমপক্ষে ৫ লক্ষ জনসমাগম হবে। সেখানে কেবল কপিলমুনি চত্বরটিকেই ‘নোটিফায়েড এরিয়া’ বলে জানানো হয়েছিল। সেই নির্দেশে বদল এনে আদালতের তরফে বলা হয়েছে, যদি গোটা গঙ্গাসাগর ‘নোটিফায়েড এরিয়া’  না হয়, তাহলে মেলা বন্ধও হয়ে যেতে পারে। সে ব্যাপারে সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

প্রশ্ন উঠছে, প্রথমত, যদি গঙ্গাসাগর ‘নোটিফায়েড এরিয়া’ বলে ঘোষিত হয়, তাহলে এই বিপুল সংখ্যক পুণ্যার্থী যাবেন কোথায়? দ্বিতীয়ত, পুণ্যার্থীরা নানা ভাবে আসছেন তীর্থক্ষেত্রে। জলপথে, স্থলপথে, রেলপথে। সকলের পরীক্ষা করা সম্ভব কি? প্রত্যেকেই যে কোভিডের দুটি টিকা পেয়েছেন, এই শংসাপত্র  খতিয়ে দেখা কতটা সম্ভব? পাশাপাশি তীর্থক্ষেত্রে জনসমাগমই বা কী করে প্রতিরোধ করা যাবে? বিশেষ করে টিকাকরণের ক্ষেত্রেই যদি এমন পরিস্থিতি দেখা দেয়, তাহলে ঠিক কতটা সবদিক বজায় রেখে এই মেলা চালানো সম্ভব তা  নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। উল্লেখ্য, বুধবারই মেলার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গঙ্গাসাগরে যাচ্ছেন মেলা কমিটি প্রধান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে থাকবেন লিগ্যাল সার্ভিসেস সদস্য সচিবও।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*