IAS ক্যাডার রুলে কেন্দ্রের সংশোধনী প্রস্তাব অসাংবিধানিক পদক্ষেপ, মত দুই প্রাক্তন আমলার

Spread the love

কেন্দ্রীয় সরকার আইএএস ক্যাডার রুলে গায়ের জোরে সংশোধনী প্রস্তাব আনছেন। যা আইনবিরুদ্ধ তো বটেই, একইসঙ্গে তা সংবিধানকেও মান্যতা দেওয়া হচ্ছে না। রাজ্যের মতামত না নিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করে, অফিসারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার মর্যাদা না দিয়েই এই কাজ করা হচ্ছে বলে মত প্রাক্তন আইএএসদের।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিনকয়েক আগেই চিঠি লিখে আইএএস ক্যাডার রুল সংশোধন করা নিয়ে তাঁর তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও কেন্দ্রীয় সরকার অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস-এর অফিসারদের নিয়ন্ত্রণের যাবতীয় ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে আরও সংশোধন করার পথে হাঁটতে চাইছে। যা একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয় বলেই মনে করছেন প্রাক্তন আমলা এবং বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ জহর সরকার।

তিনি সাফ জানাচ্ছেন, আমলাদের উপর যেভাবে চাপ বাড়ানো হচ্ছে, তা একেবারেই অনৈতিক। আগে কোনওদিনই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি দেশের আমলাকুলকে। তাঁর বক্তব্য, “আমি তো চল্লিশ বছরের উপর কাজ করেছি অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস। আমরা তো কোনওদিন এত জুলুম দেখিনি।” যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় যে এ ধরনের ব্যবস্থা করা যায় না, তা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “আমরা তো যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছি। যুক্তরাষ্ট্র মানে কেন্দ্র ও রাজ্য সমপর্যায়ের। একজন একজনের অধীনে নন।”

একই মত আরও এক প্রাক্তন আমলা ও পরবর্তীকালে রাজ্যের মন্ত্রী মণীশ গুপ্তর। তাঁর মতে, “অনৈতিক ও আইনবিরুদ্ধ কাজ হচ্ছে। এই জন্যই ব্যবস্থাটা করা হয়েছিল যাতে রাজ্যের একটা বক্তব্য থাকে। অফিসারের কোনও প্রেফারেন্স থাকবে না, তা কখনও হয়! তা হলে তো এটা পানিশমেন্ট হয়ে গেল।” এই ধরনের সংশোধন যে আইনের মুখে পড়লে টিকবে না, তা নিয়ে তিনি নিশ্চিত। তাঁর ব্যাখ্যা, “এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে আগেও। ১৯৯৪ সালে এস আর বোম্মাই বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়ার মামলা হয়। এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য হচ্ছে, রাজ্যগুলির আলাদা একটি সাংবিধানিক অবস্থান আছে। সেটা পুরোপুরি স্বাধীন। কোনও রাজ্যই কেন্দ্রের এজেন্ট নয়। তাই অফিসাররা কেন্দ্রের এক্তিয়ারে থাকতে পারেন না। এটা অসাংবিধানিক। এগুলো টিকবে না। জোর করে করা। ২০১৮ সালেরও একটা মামলা রয়েছে। বিভিন্ন মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রুলিং আছে।”

কেন্দ্রীয় সরকারের এমন পদক্ষেপে দেশের শাসন ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে বলে জানিয়ে তিনি বলেছেন, “এমনটা ইতিহাসে হয়নি। ৭৫ বছর ধরে একটা ঐতিহাসিক ব্যবস্থা রয়েছে। সেটাকে ভেঙে জোর করে একটা রুল এভাবে করা যাবে না, আইনি পথে গেলে রাজ্যের অবস্থানই এগিয়ে রয়েছে। রাজ্যের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করলে তো দেশের শাসন ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে।” জহরবাবুও জানান, “এটা ঠিক নয়। উনি (প্রধানমন্ত্রী) তো গায়ের জোরে করছেন। আইনে টিকবে কি না দেখা যাক।”

মণীশবাবু জানিয়েছেন, আইএএস ক্যাডারদের যদি দিল্লি যেতে হয়, তা হলে তাঁদের জানুয়ারি মাসে সার্টিফিকেট দিয়ে জানাতে হয় যে, তিনি রাজি রয়েছেন দিল্লিতে পোস্টিংয়ের জন্য। দিল্লিতে প্রতি বছর প্যানেল তৈরি হয় প্রতি ব্যাচের জন্য। সেই প্যানেলে নাম থাকলে তারপর সার্টিফিকেট দিলে তবে কেন্দ্র দেখে কোথায় তাঁর পোস্টিং দেবে। তাঁর কথায়, “এতে রাজ্য সরকারের একটা ছাড়পত্র লাগে। রাজ্য সরকারের যদি কোনও আপত্তি না থাকে তা হলে তাঁর দিল্লিতে পোস্টিং হতে পারে। তার মানে রাজ্য সরকারের একটা মতামত দরকার। এটা সংবিধানেই বলা রয়েছে।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*