বাড়ছে ড্রপআউট, শিক্ষার হাল ফেরাতে এবার ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’

Spread the love

করোনা আবহে চলছে সবই। মেলা হোক বা  অনুষ্ঠান। রেস্তোরাঁ হোক বা সিনেমা হল। শর্তসাপেক্ষে খোলা রাখার ছাড়পত্রও মিলেছে। কেবল বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়। সবই যখন খুলছে তখন কেন বন্ধ স্কুল কলেজ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। স্কুল খোলার পক্ষে সওয়াল করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকেরাও। এদিকে, একটানা স্কুল বন্ধের জেরে ক্রমেই বাড়ছে ড্রপআউটের সংখ্যা। শিশুদের পড়াশোনায় ফিরিয়ে আনতে এ বার বিশেষ পদক্ষেপ শিক্ষা দফতরের।

সূত্রের খবর, অধিক সংখ্যক ছাত্রের কাছে পৌঁছতে তৎপর রাজ্য শিক্ষা দফতর। তাই এ বার পাড়ায় পৌঁছবে স্কুল। শুরু হতে চলেছে ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’। প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদেরও এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সোমবারই এই নিয়ে বৈঠক করতে চলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।

ইতিমধ্যেই, পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে ওয়েবিনার শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিকাশ ভবন। রাজ্য শিক্ষা দফতরের উদ্যোগে এই কাউন্সেলিং সেশনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘উজ্জীবন’। রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে এই ওয়েবিনার। আলোচনায় থাকবেন বিশিষ্ট মনোবিদরা। রাজ্য উচ্চ শিক্ষা দফতর ও স্কুল শিক্ষা দফতর উভয়ের উদ্যোগেই এটি চালু হচ্ছে। জুম কলের মাধ্যমে এই ওয়েবিনারে যোগ দেওয়া যাবে। এর পাশাপাশি, যাঁরা জুম কলে যোগ দিতে পারবেন না, তাঁদের জন্য ফেসবুক ও ইউটিউব লাইভেও এই ওয়েবিনারগুলি দেখানোর ব্যবস্থা করেছে বিকাশ ভবন।

স্কুল খোলার প্রস্তাব দিয়ে নবান্নে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা দফতর। সূত্রের খবর, শুক্রবার শিক্ষা দফতরের তরফে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অফলাইন পঠনপাঠন শুরু করার বিষয়ে আলোচনা হয়। এরপর প্রস্তাবের চিঠি গিয়েছে মুখ্যসচিবের কাছে। যেহেতু ১৫ বছর থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত ছেলে মেয়েদের টিকাকরণ প্রক্রিয়া অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে, সে ক্ষেত্রে পুনরায় নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল খোলার ক্ষেত্রে স্কুল শিক্ষা দফতরের কোনও সমস্যা নেই বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে বলেই সূত্রের দাবি। যদিও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার দুপুর পর্যন্ত এই চিঠি সম্পর্কে কোনও প্রতিক্রিয়া নবান্নের তরফে মেলেনি।

প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ স্কুল-কলেজ। বন্ধ অফলাইন ক্লাস ও পঠনপাঠন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব মিটতেই ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছিল সবকিছু। কিন্তু, তৃতীয় ঢেউয়ের দাপটে কার্যত ফের পড়াশোনায় গতিরুদ্ধ। এদিকে, অনলাইন ক্লাস করে হাঁফিয়ে উঠছে পড়ুয়ারা। এ বার স্কুল-কলেজ খোলার পক্ষে সওয়াল করেছেন বিরোধীরা।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর মন্তব্য, “খেলা-মেলা কিছুই তো বাদ নেই। সবই চলছে পালা করে। তাহলে স্কুল বন্ধ থাকবে কেন? কতদিন বাচ্চারা আর এভাবে ঘরে আটকা পড়ে থাকবে?”

অন্যদিকে, বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, “দেশের সর্বত্র নিয়ম মেনে কোভিড বিধি মেনে স্কুল খুলছে। মহারাষ্ট্রেও স্কুল খুলে  গেল। বাংলা তো সবদিক থেকেই এগিয়ে। তাই একেবারে দরজা বন্ধ করে রেখেছে! এখানে স্কুল খোলার নাম নেই।”

শুধু বিরোধীরাই নন, স্কুল খোলার পক্ষে মত দিয়েছেন চিকিৎসকেরাও। চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষের কথায়, “প্রথম যখন করোনা এসেছিল, তখন জানা ছিল না এর মোকাবিলা কীভাবে করা সম্ভব। এখন পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রিত। সেক্ষেত্রে, স্কুল কলেজ বিধি মেনে খোলা যেতেই পারে।”

করোনাকালে প্রায় ৮০ শতাংশ পরিবার তাঁদের সন্তানকে অনলাইন শিক্ষার পরিকাঠামোয় আনতে সক্ষম হননি। ১৫ শতাংশের অধিক বাংলার। এই ১৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে দলিত আদিবাসী ও মুসলিম সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারা। এমনকী, হকের ‘মিড-ডে মিল’-ও জোটেনি পড়ুয়াদের। মোট ৮ শতাংশ পড়ুয়া গোটা দেশে তৈরি করা খাবার পেয়েছে। বেশিরভাগই পেয়েছে কাচামাল। বাংলায়  মিড-ডে মিল-এও কারচুপির খতিয়ান উঠে এসেছিল।

লকডাউন পরবর্তী সময়ে বাচ্চাদের স্কুলমুখী করতেও সমস্যা দেখা গিয়েছে। অনেকেই আর স্কুলে ভর্তি হয়নি।  হার কমেছে ভর্তির। স্কুলের পরিকাঠামোগত দিক থেকে প্রাথমিক স্তরে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অবনমনও হয়েছে। অনেক স্কুলেই কম্পিউটারের প্রাথমিক শিক্ষা নেই। কোথাও বা থাকলেও নামমাত্র। শুধু তাই নয়, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে পাঠ্যবই কিনে পড়ার ক্ষমতা রয়েছে আনুমানিক ২০ শতাংশের। সেদিক থেকে করোনাকালে আরও কমেছে পড়ার জিগিরও। তাই চিন্তা থাকছেই।

অভিভাবকদের মধ্যে ৯০ শতাংশই চাইছেন, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে। কোভিডবিধি মেনে স্কুল চালু করতে। পড়ুয়াদের মধ্যে অধিকাংশই স্কুলে যেতে আগ্রহী। মনোবিদরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্রমেই বিপদ বাড়ছে বাচ্চাদের। ক্ষতি হচ্ছে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের। মনোবিদ উর্মি চট্টোপাধ্যায়ের মতে, বাইরে বেরোনোর ইচ্ছে কমে যাচ্ছে – নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে যাচ্ছে পড়ুয়ারা। একটু উচু ক্লাসের পড়ুয়াদের মধ্যে আবার অন্য চিন্তা। কবে পরীক্ষা হবে, কবে চাকরি পাব – তাদের এই অবসাদ – অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতা ভুগছে তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে সরকার ব্যবস্থা নিক এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*