অখিলেশের প্রার্থী বাছাইয়ে জাঠ ভোটব্যাংকে ফাটল! ফায়দা তুলতে আসরে বিজেপি

Spread the love

উত্তরপ্রদেশের ভোট ঘোষণার পরে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি (সপা)-র সঙ্গে রাষ্ট্রীয় লোকদলের জোট ঘোষণা হতেই সেখানকার রাজনৈতিক আবহাওয়া পালটাতে শুরু করেছিল। একদিকে সপার সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক , অন্যদিকে আরএলডির জাঠ ভোটব্যাঙ্ক, এই দুইয়ের জুটিতে সেখানে বিজেপি ধাক্কা খাবে বলেই মনে করা হচ্ছিল।

সপ্তাহখানেক আগে পর্যন্ত পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে বিজেপি বিরোধী হাওয়া একপ্রকার তুঙ্গে ছিল। কিন্তু ভোটের প্রার্থী তালিকা সামনে আসতেই হিসেবনিকেশ উলটে যেতে শুরু করেছে। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের বেশ কিছু জেলায় ভোট রয়েছে প্রথম দফায়। শুরু থেকেই সপা সেখানে এগিয়ে গেলে সেই হাওয়ার সুফল ভোটের বাকি পর্বগুলিতেও মিলত বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সপার প্রধান অখিলেশ যাদবের প্রার্থী নির্বাচনের জন্যই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে, বিশেষ করে মেরঠের মতো জেলায় জাঠ-মুসলিম ভোটের সমীকরণ বিগড়ে গিয়েছে। মেরঠের আওতায় থাকা সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে চারটিতে মুসলিম প্রার্থী দেওয়ার পর থেকেই সেখানকার জাঠদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। পুরনো জাঠ নেতাদের টিকিট না দেওয়ায় তারা সপার প্রতি বিরূপ হয়েছে। যার প্রভাব জাঠদের নিজস্ব দল বলে পরিচিত আরএলডির ভোটব্যাংকে পুরোপুরি প্রভাবিত করার সম্ভাবনা প্রবল।

পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের প্রচলিত প্রবাদ, ‘জিসকে সাথ জাঠ হ্যায়, উসিকা ঠাট হ্যায়’ অর্থাৎ জাঠরা যাদের সঙ্গে থাকবে তাদেরই ঠাটবাট বজায় থাকবে। রাজ্যে ক্ষমতায় তারাই থাকবে। সেখানে মুসলিম এবং জাঠরা একত্রিত হয়ে ভোট দিলে প্রায় দু’ডজনেরও বেশি আসনে সপা-আরএলডি জোটের জয় প্রায় নিশ্চিত ছিল। কিন্তু জাঠ প্রধান এলাকাগুলিতেও মুসলিম প্রার্থী দেওয়ায় পরিস্থিতি জোটের প্রতিকূলে চলে গিয়েছে। আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে মেরঠ জেলার বাগপত লোকসভা আসনের অন্তর্গত সিওয়ালখাস কেন্দ্র, যা আরএলডি প্রধান জয়ন্ত চৌধুরির পরিবারের ঘাঁটি সেখান থেকেও সপার গোলাম মহম্মদকে জোটের প্রার্থী করা হয়েছে। যা নিয়ে জাঠদের মধ্যে অসন্তোষের জেরে স্বয়ং জয়ন্তকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে। দলের নেতা নিজেদের পারিবারিক আসন অবধি ধরে রাখতে পারছেন না, তারপরে কীভাবে আমরা ভরসা করব, প্রশ্ন তুলেছেন জাঠ যুবক প্রভাত চৌধুরি।

মেরঠের চায়ের দোকানে বসে প্রভাতের সাফ জবাব, “এইসা ক্যায়েসে চল সকতা হ্যায় আপ হি বোলো? হামারা লিডার হি পার্টি কো দুসরে কে হাত মে সঁপ দিয়া।” দীর্ঘ কথোপকথনে প্রভাতের মোদ্দা কথা, “এখন জাঠ ভোটের সাহায্য নিয়ে আসন জিতে যাবে। পরে হয়তো সরকারও গঠন করে ফেলবে। তারপরে তো জাঠদের চায়ের মধ্যে মাছি পড়লে যেভাবে তুলে ফেলে দেওয়া হয় সেভাবেই আমাদেরও ছুড়ে ফেলে দেবে। এখন যারা আমাদের নিজেদের আসনই দিচ্ছে না তারা পরে আমাদের কথা ভাববে এমনটা হতেই পারে না।”
প্রবীণ জাঠ নেতা-কর্মীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছেন। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী চৌধুরি চরণ সিংয়ের খাস তালুক থেকে জাঠ প্রার্থী থাকার বিষয়টি কিছুতেই তারা মেনে নিতে পারছেন না। জাঠ মহাসভার তরফ থেকে ইতিমধ্যেই সিওয়ালখাস থেকে প্রার্থী পরিবর্তন না করা হলে জাঠরা সেই আসন তো বটেই বাকি আসনেও সপার প্রার্থীকে ভোট দেবে না বলে তারা ঘোষণা অবধি করে দিয়েছে।

জাঠদের অসন্তোষের আঁচ পেয়ে কোমর বেঁধে আসরে নেমে পড়েছে বিজেপি। জাঠ ভোটকে গতবারের বিধানসভার মতোই এবারই বিজেপির ঝুলিতে নিয়ে আসার জন্য তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে বিজেপির অন্দরে। সেই রণকৌশলকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শনিবার মেরঠে বিশিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা কর্মসূচিতে আমন্ত্রিতদের তালিকায় জাঠদের সংখ্যায় সর্বাধিক রাখা হয়েছিল।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*