পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

Spread the love

‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’, ‘মায়াবতী মেঘে এল তন্দ্রা’, ‘কী বৃষ্টি দেখো মিষ্টি কী বৃষ্টি এ সকাল’, ‘জানিনা ফুরোবে কবে এই পথচাওয়া’, ‘আকাশের অস্তরাগে’এর মতো একাধিক মনোমুগ্ধকর গান বেরিয়েছে তাঁর গলা থেকে। তিনি বাঙালির প্রিয় গায়িকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর ছাত্রী। পরে গান শিখেছেন বড়ে গুলাম আলি খাঁর কাছে।

উল্লেখ্য,পঞ্চাশের শতকে উত্তম-সুচিত্রা ছবিতে সুচিত্রা সেনের লিপে সন্ধ্যা দেবীর গান ছিল অপরিহার্য। তাঁর স্বামী প্রয়াত গীতিকার শ্যামল গুপ্ত। এবার মোদী সরকারের তরফে দেওয়া পদ্ম পুরস্কার-এর প্রস্তাব ফেরালেন প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীত শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।

বয়স পেরিয়ে গিয়েছে নব্বই। একাধিক ভাষায় গেয়েছেন অজস্র গান। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাঙালি শুনে এসেছে তাঁর গান। বহু বছর আগে একবার সংগীত প্রতিযোগিতায় তিনি ‘গীতশ্রী’ পুরস্কার পেয়েছিলেন। এরপর থেকেই তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে যায় ‘গীতশ্রী’ শব্দটি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দেওয়া বহু পুরস্কারই পেয়েছেন কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কোনও পুরস্কার পাননি। পদ্ম পুরস্কারের আগে যাঁকে দেওয়া হয় তাঁর অনুমতি নেওয়া হয়। এটাই দস্তুর। তা সেই ব্যাপা রে শিল্পীর লেক গার্ডেন্সের বাড়িতে ফোন আসে দিল্লির তরফে। জানানো হয় তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে সম্মানিত করা হবে। তবে ওপর প্রান্তের কথা শেষ হওয়ার আগেই স্পষ্টভাবে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি প্রত্যাখ্যান করছেন। 

কারণ হিসেবে প্রবাদপ্রতিম শিল্পী জানিয়েছেন তাঁর থেকে অনেক কম বয়সিরাও সম্মান পেয়ে গিয়েছেন। তাই ‘পদ্মশ্রী’র আর কোনও প্রয়োজন নেই তাঁর কাছে। শ্রোতাদের প্রশংসাই তাঁর কাছে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।

বাংলা সঙ্গীতজগতের উল্লেখযোগ্য নাম সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর জুটি বহু বছর বাঙালির মন জুড়ে ছিল। একসময় মহানায়িকা সুচিত্র সেনের কণ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাবড় সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ২০১১ সালে তাঁকে ‘বঙ্গ বিভূষণ’ সম্মানে সম্মানিত করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ১৯৭০ সালে ‘নিশিপদ্ম’ এবং ‘জয় জয়ন্তী’ ছবিতে গানের জন্য জাতীয় পুরস্কারও পান। 

এ দিন নামের তালিকা প্রকাশের আগে পর্যন্ত শিল্পীকে কিছু জানানো হয়নি বলেও অভিযোগ পরিবারের। তাঁদের দাবি, নামের তালিকা প্রকাশ করে দেওয়ার পর দায়সারা ভাবে ফোন করে জানানো হয়। তাই সম্মান প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত নেন শিল্পী। বেশ কিছু দিন ধরেই শরীর ভাল যাচ্ছে না সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ফোন এলে পরিবারের লোকজনই তাঁকে ফোন ধরান। কিন্তু সম্মান নিতে অপারগ বলে সরাসরি জানিয়ে দেন তিনি। 

শিল্পীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বয়স ৯০ পেরিয়েছে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। ১২ বছর বয়স থেকে গান গাইছেন। সঙ্গীতের পিছনে জীবনের ৭৫টি বঠর উৎসর্গ করে দিয়েছেন। অথচ এতদিনেও তাঁর মতো সঙ্গীতজ্ঞকে সম্মানের যোগ্য বলে মনে হয়নি। বরং তাঁর চেয়ে কম বয়সের শিল্পীদের সম্মান ধরানো হয়েছে। তাতেই সম্মান প্রত্যাখ্যান করেছেন শিল্পী।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*