স্কুল খুলতে জোড়া আন্দোলনে উত্তপ্ত বিকাশভবন চত্বর

Spread the love

মিছিল, পথ আটকানো, পুলিশি বাধা, ব্যারিকেড ভেঙে এগনোর চেষ্টা, রাস্তায় শুয়ে বিক্ষোভ, চ্যাঙদোলা করে বিক্ষোভকারীদের গাড়িতে তোলা, আটক- এই সমস্ত প্রত্যাশিত খণ্ডচিত্রই ধরা পড়ল সোমবার বিকাশ ভবনের সামনে। একই ছবি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেও। স্কুল খোলার দাবি নিয়ে ‘সরকারকে ব্যতিব্যস্ত’ করে তুলতে বদ্ধপরিকর এসএফআই। সোমবার জেলা থেকে শহর-সর্বত্র ধরা পড়ল তারই প্রমাণ।

সরকারের ওপর আরও চাপ বাড়াতে ক্রমাগত জোরালো হচ্ছে সওয়াল। সোমবার স্কুল খোলার দাবিতে কর্মসূচি ছিল তিন ছাত্র সংগঠনের। কলেজ স্কোয়ারে বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই-এর একটি দল। প্রধান শিক্ষকদের একাংশের ছিল বিকাশ ভবন অভিযান। দুপুরে বিকাশ ভবনে অভিযান করে ছাত্র পরিষদ। বিকাশ ভবনে ডেপুটেশন কর্মসূচি ছিল এবিভিপি-রও। সেই মোতাবেক প্রস্তুত ছিল পুলিশও।

বেলা ১টা। নির্দিষ্ট সময়েই মিছিল করে বিকাশ ভবনের দিকে এগোতে থাকে এসএফআই-এর মিছিল। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আগে থেকেই মোতায়েন ছিল বাহিনী। মিছিল এগোতেই পথ আটকায় পুলিশ। প্রথমে বচসা। তারপর পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। বিক্ষোভকারীদের একাংশ রাস্তার ওপর শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।

পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, ঠিক সেই সময়ই বিকাশ ভবনের সামনে এসে পৌঁছয় এবিভিপির মিছিল। দাবি একটাই। দুই ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভ, স্লোগান, হাততালিতে আরও জোরাল হতে থাকে দাবি। স্কুল খোলার দাবি নিয়ে হাতে স্মারকলিপির প্রতিলিপি নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, স্কুল না খুললে বাড়ছে স্কুলছুটের সংখ্যা। সরকার আসলে শিক্ষাব্যবস্থার বেসরকারিকরণ করতে চাইছে। সুর চড়তে থাকে ‘ধিক ধিক ধিক্কার…’

পুলিশ গোটা এলাকা ঘিরে রেখেছে। এদিকে এসএফআই-এর একাধিক বিক্ষোভকারীকে জোর করে চ্যাঙদোলা করে এলাকা থেকে সরাতে দেখা যায় পুলিশকে।

একই দাবিতে বারাসত জেলা শাসকদের দফতরে আইন অমান্য কর্মসূচি নেয় এসএফআই। এদিন সকালে বারাসত রেল স্টেশন থেকে মিছিল করে জেলাশাসকদের দফতরের সামনে যান বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু আগে থেকে সেখানে কোনও পুলিশ মোতায়েন ছিল না। জেলাশাসকের দফতরে সর্বদাই ১৪৪ ধারা জারি থাকে। তা অমান্য করেই রীতিমতো দফতরের সিঁড়ি ধরে মিছিল করে ওপরে উঠে যেতে থাকেন। নিরাপত্তারক্ষীরা এগিয়ে আসেন। কিন্তু তাঁদেরকে টপকেই একেবারে জেলাশাসকের চেম্বার পর্যন্ত পৌঁছে যান বিক্ষোভকারীরা। খবর পেয়ে অন্য গেট দিয়ে ঢোকে পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। সেক্ষেত্রে বেশ কিছুক্ষণের জন্য এলাকায় উত্তেজনাময় পরিস্থিতি তৈরি হয়। ছাত্রদেরকে ঠেলে দফতরের বাইরে বের করতে থাকেন পুলিশ কর্মীরা। পরে রাস্তার ওপর বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। হাততালি, স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। সেখান থেকেও বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দিতে থাকে পুলিশ।

এসএফআই নেতা বলেন, “পানশালা খোলা। কিন্তু পাঠশালা খোলা নেই কেন? প্রশ্ন করতে গিয়েছিলাম ডিএম অফিসে। কিন্তু পুলিশ গুণ্ডাদের মতো আচরণ করছে। আমাদেরকে ঠেলে বার করে দিল। আমাদের দোষ কী? আমাদেরকে লাথি মেরে সিঁড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে পুলিশ।”

স্কুল খোলার দাবিতে উত্তেজনা ছড়ায় দমদম বিমানবন্দর ১ নম্বর গেটের সামনেও। এসএফআই-এর মিছিল ঘিরে উত্তজেনা। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বিক্ষোভকারীদের। বেশ কয়েকজন এসএফআই কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। জোর করে তাঁদেরকে গাড়িতে তোলা হয়েছে।

এসএফআই-এর মিছিল ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় মুর্শিদাবাদেও। এসএফআই-এর মিছিলে পুলিশের বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি হয়ে ওঠে উত্তপ্ত। পুলিশের সঙ্গে বাগ বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন পড়ুয়ারা।

এসএফআইয়ের আইন অমান্য আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা পূর্ব বর্ধমান জেলাশাসকের অফিস চত্বরে। জেলাশাসক দেখা না করায় তাঁর অফিসের মূল গেটের তালা ভাঙার চেষ্টা। পুলিশের সঙ্গে বচসা। কাছারি রোড অবরোধ এসএফআইয়ের।

স্কুল কলেজ খোলার দাবিতে পশ্চিম মেদিনীপুরের একাধিক জায়গায় অবরোধ অবস্থান করে বাম ছাত্র যুব সংগঠন এসএফআই। এদিন শহরের কেন্দ্রস্থল পঞ্চুর চকে তিন রাস্তার মোড়ে অবরোধ করেন তাঁরা। এই অবরোধের জেরে ঘণ্টা খানেক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে গোটা শহর।

স্কুল কলেজ খোলার দাবিতে এসএফআই-এর পথ অবরোধে উত্তেজনা ছড়ায় শ্রীরামপুর বটতলায়। প্রথমে রাস্তায় বসে পড়াশোনা শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ এলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রথমে তর্কাতর্কি, পরে ধস্তাধস্তি। ৬ জনকে আটক করে পুলিশ।

এসএফআই সাধারণ সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের প্রতিবাদের ভাষা আরও জোরাল হবে। নিরপরাধ ছাত্রদের পেটানোর জন্য যে পরিমাণ এনার্জি খরচ করছে সরকার, সেই পরিমাণ উদ্যোগ যদি স্কুল-কলেজ খুলতে দেখাত, তাহলে ভালো হত। পুলিশকে এটা বুঝতে হবে, লড়াই তাদের বিরুদ্ধে নয়, তাদের ঘরের সন্তানরাও সাফার করছে। আমরা স্কুল খোলার দাবি নিয়ে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলব।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*