মঙ্গলবারের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেটে নেই চাহিদা বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ এবং তাই এই বাজেট দিশাহীন। বাজেট পেশের পর এই মন্তব্য করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এবং রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তিনি বলেন, এই অতিমারিকালে ইংল্যান্ড বা জার্মানির মতো দেশ মানুষের হাতে টাকা দিচ্ছে, যাতে বাজারে চাহিদা বাড়ে। ব্রিটিশ সরকার অতিমারিকালে যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের আগেকার প্রাপ্ত বেতনের ৮০ শতাংশ দিচ্ছে। জার্মানিতে ভাড়া বাড়িতে যাঁরা থাকেন, তাঁদের ভাড়া মকুব করে দিয়েছে সেই দেশের সরকার। ভারতবর্ষে অতিমারিকালে ১.২ কোটি চাকুরীজীবী মানুষ তাঁদের চাকরি হারিয়েছেন। অথচ তাঁদের জন্য বাজেটে কিছুই বলা নেই। তাই এই বাজেট দিশাহীন এবং মিথ্যার স্বপ্নফেরিতে ভরা।
কর্পোরেট কর মকুব নিয়েও অমিতবাবু একহাত নেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে। তাঁর কথায়, গতবছরও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কর্পোরেট কর মকুব করেছিলেন। উনি ভেবেছিলেন যে এই কর মকুবের ফলে কর্পোরেট সংস্থাগুলি উদ্বৃত্ত টাকা বিনিয়োগ করবে এবং অর্থনৈতিক অবস্থা চাঙ্গা হবে। কিন্তু কর্পোরেট সংস্থাগুলি তা না করে সেই উদ্বৃত্ত টাকা তাঁদের বুকস অফ প্রফিটে দেখালেন এবং সেই কারণেই এই অতিমারিকালেও কর্পোরেট সংস্থাগুলি রেকর্ড মুনাফা দেখতে পেরেছে ৷
এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘‘মানুষের হাতে সরাসরি টাকা তুলে দেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন মমতা বন্দোপাধ্যায় । সেই টাকা সরাসরি মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার ফলে বাজারে একটা চাহিদা বজায় থেকেছে । তাই অতিমারিকালে সারা দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি যখন ৭.৭ শতাংশ নেতিবাচক ছিল, তখন পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি ১.২ শতাংশ ইতিবাচক ছিল।’’
কেন একে দিশেহারা বলছেন তার ব্যাখ্যায় এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বলেছেন, কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা না করে শুধু সরকারি সম্পত্তিকে বিক্রি করে দিতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। এভাবে আর যাই হোক অর্থনীতির হাল ফেরানো যায় না। অমিত মিত্রের ভাষায়, ইতিমধ্যেই রেল বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কয়েকটি বিমানবন্দর বিক্রি হয়ে গিয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়াও বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে। ছটি পোর্টকে বলা হয়েছে পিপিপি মডেল চালানো হবে অর্থাৎ এগুলিকেও বেচে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই এই সরকার দু‘টি পিএসইউ ব্যাঙ্ক বেচে দিয়েছে। ইনসিওরেন্স বিক্রি করে দেয়ার প্রয়াস চলছে, এলআইসির আইপিও বিক্রি করে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই পিএসইউ সংস্থাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। যেগুলি হয়নি সেগুলো আরও জোর দিয়ে বিক্রির চেষ্টা হবে। এক্ষেত্রে ডিমান্ড স্টিমুলেশন না করেই ক্রেডিট জোগাড় করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি অমিত মিত্রের।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদী সরকারকে আক্রমণ করেন। এক টুইট বার্তায় তিনি জানিয়ে দেন, সাধারণ মানুষের জন্য এই বাজেটে কিছুই করা হয়নি বরং এই বাজেট কোভিডকালে যারা সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে তাদের স্বস্তি দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষায়, ‘সাধারণ মানুষের জন্য এই বাজেট শূন্য, যাঁরা বেকারত্ব এবং মুদ্রাস্ফীতির দ্বারা পিষ্ট হচ্ছেন। সরকার বড় বড় কথায় হারিয়ে গিয়েছে, কিছুই বোঝাতে পারেনি তারা। এটি পেগাসাস স্পিন বাজেট।’
Be the first to comment