সদ্যই সংসদে বাজেট পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। মঙ্গলে, পেশ করা এই অর্থবাজেট ভারতের জন্য কতটা মঙ্গলের তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে একাংশের মনে। সংশয়ও প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। সাধারণ মানুষের জন্য নয়, দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের জন্য এই বাজেট নয় বলেই তোপ দেগেছেন বিরোধীরা। তবে, কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এই বাজেটকে অরাজনৈতিক, সমতার বাজেট বলে উল্লেখ করলেন শমীক ভট্টাচার্য।
সাংবাদিক বৈঠকে শমীক বলেন, “করোনা পরিস্থিতিতে যখন বিপুল ব্যয়, তখন সেখানে এই বাজেট সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে। বর্তমান প্রজন্মের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এই বাজেট। কোথাও কোনও রাজনৈতিক কৌশল নেই। যখন ছোট শিল্পপতিদের অর্থ কমেছে তখন, পরিকাঠামোতে নজর দেওয়া হয়েছে। প্রান্তিক মানুষের কথা ভেবে এই বাজেট। এই বাজেটে স্বনির্ভর করার চেষ্টা চলছে। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমতা তৈরির চেষ্টা চলেছে। এ রাজ্যের সরকার কেবল অনুদান সরকারে পরিণত। গত ১০ বছরের ঋণের দায় মুক্ত হতে পারেনি বাংলা। আশা করি, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বুঝবেন।”
যদিও বিরোধীরা দাবি করেছেন, এই বাজেটের আদৌ সাধারণ মানুষের কোনও লাভ হবে না। বাজেট পেশের পর থেকেই সমালোচনায় সরব হয়েছেন একাধিক অর্থনীতিবিদ ও বিভিন্ন রাজনীতিবিদরা। এই আবহে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা তথা রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানিয়েছেন, বিভিন্ন মহল বিভিন্ন জিডিপি পরিসংখ্যানের কথা বলেছে। কোনটা ধরে এগোনো হবে তা নিয়ে বিভ্রান্তি হয়েছে।
তিনি বলেছেন, “ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলেছে এই অর্থবর্ষে জিডিপি হবে ৭.৮ শতাংশ বা তারও কম। কিন্তু বাজেট বলছে ভারতীয় অর্থনীতির ৯.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। তাঁরই প্রকাশিত আর্থিক সমীক্ষা বলছে প্রবৃদ্ধি হবে ৮-৮.৫ শতাংশ। স্বভাবতই এতে আমরা বিভ্রান্ত। তাই কোন পরিসংখ্যানটাকে আমরা বিবেচনা করব? বাজেটের পরিসংখ্যান নাকি মাননীয়ার মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টার প্রকাশিত আর্থিক সমীক্ষা নাকি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যানকে নেবেন।”
এদিকে বিরোধীদের সমস্ত মন্তব্যকে কার্যত নস্যাৎ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্য, “এই বাজেট দেশের জনগণের জন্য নতুন আশা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এসেছে। এই বাজেটে অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।” তিনি আরও বলেছেন, “প্রতিটি ক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। অনেক প্রযুক্তি এসেছে, যেমন-কৃষক ড্রোন, বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, ডিজিটাল মুদ্রা, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে ডিজিটাল ইউনিট, আর্থিক পরিষেবার রোল আউট, দেশের স্বাস্থ্যের জন্য ডিজিটাল ইকোসিস্টেম। এই সবকিছুতে উপকৃত হবে প্রান্তিক মানুষ, যুবক, দরিদ্র সকলে।”
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের বাজেট ঘিরে মানুষের প্রত্যাশা ছিল আকাশ ছোঁয়া। বিশেষত চাকুরিজীবীদের প্রত্যাশা ছিল করোনা মহামারীর সংকটের মধ্যে তাঁদের উপর করের ভার কমবে। কিন্তু বাজেট পেশ করতে গিয়ে নির্মলা এদিন জানিয়ে দেন আয়কর কাঠামোর এবারের বাজেটে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। যা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোজাসুজি মমতা বলে দেন, ‘এটা পেগাসাসে বিদ্ধ বাজেট!’ তাঁর মতে কেন্দ্রীয় বাজেটে সাধারণ মানুষের প্রাপ্তি শূন্য। যদিও, বিজেপির দাবি এই বাজেট আদপে পরিকাঠামোগত বাজেট। কোভিড পরিস্থিতিতে পরিকাঠামোতেই জোর দিচ্ছে মোদী সরকার এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
Be the first to comment