দলের মধ্যে যে অন্তর্কলহ রয়েছে, তা বুধবার কার্যত বকলমে স্বীকার করে নিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বললেন, কথা দিতে হবে – পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব হবে না। মঙ্গলবার তৃণমূলের সাংগঠনিক নির্বাচন ছিল। নেতাজি ইন্ডোরে তা নিয়ে সকাল থেকেই তৎপরতা ছিল তুঙ্গে। দলের সর্বস্তরের নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক-সাংসদদের ভিড় ছিল নেতাজি ইন্ডোরে। নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূলের চেয়ার পার্সন হিসেবে উঠে আসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল।
এরপর নেতাজি ইন্ডোরের মাঝে যে মূল মঞ্চ করা হয়েছিল, সেখান থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দিতে ওঠেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সামনেই পুরভোট। তারপর সর্বভারতীয় রাজনীতিতে দলকে মেলে ধরার চেষ্টা। সব মিলিয়ে দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে ঝাঝালো বক্তৃতা দিচ্ছিলেন মমতা। তিনি যে মৃত্য়ুকে ভয় করেন সেই কথাই বোঝাচ্ছিলেন সবাইকে। আর সেই সময়েই মমতার মুখে শোনা যায় – “আপনাদের আমাকে কথা দিতে হবে। কেউ কোনওভাবে পরস্পরের সঙ্গে কোনও দ্বন্দ্ব করবেন না।”
কিছুদিন আগে পর্যন্তও দলের মধ্যে অন্তর্কলহের এক চূড়ান্ত ছবি দেখা গিয়েছিল তৃণমূলে। এবার আর নিচু তলার কর্মীরা নন, একেবারে সামনের সারির নেতাদের মধ্যে কলহ। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুণাল ঘোষের মধ্যে সেই সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বের কথা এখনও বিরোধীদের মুখে মাঝে মধ্যেই শোনা যায়। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল, তাতে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছিলেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কামারহাটির বিধায়ক তথা মমতার অন্যতম প্রিয় পাত্র মদন মিত্রও সম্প্রতি দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটিকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কিছুদিন আগে। আর এরই মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতাজি ইন্ডোর থেকে এই বার্তা যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
https://www.facebook.com/MamataBanerjeeOfficial/videos/1099489264186324/
তৃণমূল সুপ্রিমো তাঁর প্রত্যেক ‘সৈনিককে’ স্মরণ করিয়ে দেন, “দল একটাই – তৃণমূল। মাথায় থাকবে? দল ছাড়া কিছু নেই। দল একটাই – তৃণমূল, চিহ্নটা জোড়াফুল।” সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, ” বাংলায় আরও বাড়তে হবে। আজ আমি যখন এখানে আসছিলাম, তখন আমার কাছে খবর আসছিল, সাত-আট জন বিজেপি বিধায়ক আরও আসতে চান। তাঁরা উন্নয়নে আমাদের সঙ্গে নিশ্চয়ই কাজ করতে পারেন। আরও অনেকেই আসতে চান। তাঁরা আসুন, উন্নয়নে কাজ করুন, সেটা আমরা নিশ্চয়ই চাই।” তবে জোর করে যে দলে কাউকে আনা হচ্ছে না, তাও স্পষ্ট করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে আগামী দিনে লড়াই আরও জোরদার হবে, সেই কথাও দলীয় নেতা ও কর্মীদের উদ্দেশে জানিয়ে রাখলেন তিনি।
উল্লেখ্য, মাঝে যখন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুণাল ঘোষের মধ্যে এক আক্রমণ, প্রতি আক্রমণের পালা চলছিল – তার কারণ হিসেবে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই মনে করছিলেন, তৃণমূলের মধ্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করে এক বিকল্প ‘পাওয়ার হাউজ়’ তৈরি হচ্ছে। যদিও সেই কথা তৃণমূল নেতৃত্ব কার্যত নস্যাৎ করে দিয়েছে। অভিষেক দলের আগামী প্রজন্মের মুখ সে কথা নেতারা স্বীকার করলেও, দলের রাশ যে মমতার হাতেই – তা বার বার বলতে শোনা গিয়েছিল কুণাল ঘোষদের মুখে। এবার সেই বার্তাটাই যেন আবারও দিয়ে রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Be the first to comment