পিয়ালি আচার্য –
১২ জানুয়ারি, স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন। সারা দেশেই এই দিনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসেও দিনটির আলাদা তাৎপর্য আছে। বীর বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের জীবনাবসান হয় এই দিনে। বাংলা মায়ের তথা ভারতমাতার এই দুই সন্তানের প্রাসঙ্গিকতা চিরকালের।
স্বামী বিবেকানন্দ- নামের মধ্যেই আছে বিবেক ও আনন্দ। অন্ধকারের ঘন চাদর সরিয়ে জাগ্রত ‘বিবেক’ নিয়ে যায় আনন্দের পথে। সারা বিশ্বে হিন্দু ধর্মের প্রচার করেছিলেন তিনি। কিন্তু তা নিয়ে গোঁড়ামির কোনও জায়গা ছিল না। নর নারায়ণের সেবাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন সবার আগে। তাই শিবজ্ঞানে জীবের প্রেমের কথা বলেন তিনি। এই মহামানব বিবেকানন্দই বেলুড় মঠে দুর্গাপুজো শুরু করার পাশাপাশি শুরু করেছিলেন কুমারী পুজো। দুর্গতিনাশিনী মা যেমন তমসা থেকে জ্যোতির পথ দেখায়, তেমনই রক্ত মাংসের কন্যারাও দেবীর মানবী রূপ সেই বিষয়টি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছেন তিনি। আজ সারা দেশে তথা বিশ্বে মেয়েদের এগিয়ে চলা ভবিষ্যৎদ্রষ্টা এই মনীষী তাঁর দিব্যচক্ষু দিয়ে অনুভব করেছিলেন। তিনি যে হিন্দুধর্মের কথা বলেছিলেন তা যেমন নিজ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলে তেমনই সম্মান জানাতে বলেন অপর ধর্মকে। তাঁর গুরু শ্রী রামকৃষ্ণ তাই তো বলেন যত মত তত পথ। বর্তমান দিনের পরিস্থিতিতে অস্থিরতা, ধর্মান্ধতা, হিংসা, লোভ, লালসা, ক্রোধ, কাম, মোহ, মাৎসর্য যতই জাল বিস্তার করুক, এই ১২ জানুয়ারির পুণ্য তিথিতে বিবেকানন্দকে অনুসরণ করে শপথ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। ‘হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী’-তে বিবেক জাগ্রত হোক সকলের, এই কামনাই রইলো।
মাস্টারদা সূর্য সেন- স্বাধীনতা আন্দোলনের বীর সৈনিক মাস্টারদা সূর্য সেন বাধ্য হয়েছিলেন চরম পন্থা অবলম্বন করতে। গান্ধীজি যেমন একসময় বলেছিলেন, ডু অর ডাই তেমনই ভারতমাতাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত করতে সূর্য সেন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন করেন।
দুজনেই খুব অল্প বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। কিন্তু তাঁদের স্বপ্ন সফল হয়েছে এক অর্থে। সেই স্বপ্নকে পরিপূর্ণ করার দায় আমাদের সবার।
Be the first to comment