চার পুরনিগমের নির্বাচনে কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি। সম্পূর্ণ নিরুপ্রদ্রব নির্ঝঞ্জাট নির্বাচন হয়েছে। শনিবার রাতে, বিধাননগর, আসানসোল, চন্দননগর ও শিলিগুড়ির পুরভোট নিয়ে স্ক্রুটিনির পর রাজ্য নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট জানায়, কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি। কোনও রক্তপাত বা হিংসার ঘটনাও ঘটেনি। তাই চারপুরনিগমে কোনও পুননির্বাচন হচ্ছে না। সিদ্ধান্ত কমিশনের। সোমবার সকাল আটটা থেকে ভোট গণনা শুরু হবে।
শনিবার দিনভর চারপুরনিগমে নির্বাচন চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর সামনে এসেছে। বুথে বুথে দেদার ছাপ্পাভোটের অভিযোগ তো উঠেছেই, এমনকী, বিরোধী প্রার্থীদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগও উঠেছে। আসানসোলেই দুটি ওয়ার্ডে গুলি চলেছে। বিজেপি প্রার্থীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। আসানসোলেই দুটি ইভিএম ড্যামেজ হয়েছে বলে জানিয়েছিল কমিশন। কিন্তু, শনিবার রাতে স্ক্রুটিনির পর রাতারাতি কমিশন জানায় কোথাও কোনও গোলযোগ হয়নি।
কমিশনের যুক্তি, গুলি চালানোর যে অভিযোগ উঠে এসেছিল তা ভ্রান্ত। কারণ, পুলিশ কোনও গুলির খোল বা কার্তুজ খুঁজে পায়নি। কোথাও কোনও প্রাণঘাতী হিংসার খবরও আসেনি। অন্যদিকে, আসানসোলের ১৩ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে যে বুথে ইভিএম ড্যামেজের কথা সামনে এসেছিল, কমিশন দাবি করেছে, ইভিএম ড্যামেজ হয়েছে জেনেই সঙ্গে সঙ্গে ইভিএম বদলে দেওয়া হয়। তাতে, পুরনো ইভিএমে যে ভোট পড়েছে তা নষ্ট হয়নি। ফলে, সেই ভোটগুলিও গণ্য হবে।
এখানেই শেষ নয়, হাইকোর্ট কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিল, ১০৮টি পুরসভা ও ৪ টি পুরনিগমের ভোট গণনা একদিনেই সেরে ফেলতে। কিন্তু, কমিশন জানায় সেই গণনা একদিনে করা সম্ভব নয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি গণনার দিন নির্ধারিত হয়েছিল। পরে অবশ্য হাইকোর্টের সওয়ালে কমিশন জানিয়ে দেয় পৃথকভাবেই গণনা করতে হবে। সেই মোতাবেক ১৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার অর্থাৎ আগামিকালই চার পুরনিগমের ভোট গণনার দিন নির্ধারিত হয়।
বস্তুত, শনিবারের পুরভোটে প্রথম থেকেই কড়া নজর রেখেছিল কমিশন। কোথাও কোনও অশান্তির খবর এলেই তৎক্ষণাৎ রিপোর্ট তলব করা থেকে শুরু করে পুলিশকে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিও গ্রহণ করতে বলে কমিশন। শুধু তাই নয়, বিধাননগরও বিশেষ পর্যবেক্ষণে ছিল। তারপরেও বিক্ষিপ্ত অশান্তি এড়ানো যায়নি। প্রতিক্ষেত্রেই অভিযোগ ওঠে, পুলিশ কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। কোনও পদক্ষেপ করেনি।
বিরোধীরা বারবার কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর আর্জি জানিয়েছিল। কিন্তু, রাজ্য পুলিশ দিয়েই ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এদিকে, কমিশের ভূমিকায় প্রথম থেকেই অসন্তুষ্ট হাইকোর্ট। এই পরিস্থিতিতে যদি কোনওরকম কোনও বড় বিক্ষোভ বা অশান্তি হয়, তাহলে কমিশনকে দায়বদ্ধ থাকতেই হবে। নয়ত, রাজ্যের বাকি পুরভোটগুলিতে কমিশনের হাত থেকে ক্ষমতার রাশ চলে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে রাজ্যপুলিশের বদলে পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েও নির্বাচন করানো হতে পারে। তাই আগেভাগেই কড়া কমিশন। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতেই পুলিশকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে কমিশন এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
ভোট শেষে কার্যত সেই ‘গুডবয় ইমেজ’ই ধরে রাখতে সচেষ্ট কমিশন। বিরোধীরা অভিযোগ তুললেও পুরভোটে কোনও অশান্তি হয়নি এমনই রিপোর্ট কমিশনের। ফলে ইতিমধ্যেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে আরম্ভ করেছে। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, “পুলিশ তো কেবল দাঁড়িয়েছিল। ওদের তো কিনে নিয়েছে! ওটাকে ভোট বলে নাকি! উত্তর প্রদেশেও দিনদুয়েক আগে ভোট হয়েছে। কোথায় ক’টা রিগিং হয়েছে, গুলি চলেছে কেউ দেখাক তো! এটাই আসলে তৃণমূলের কালচার।”
শনিবারের ভোটে চার পুরনিগমের জন্য ৯ হাজার বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এর মধ্যে সাড়ে আট হাজার ছিল বুথের দায়িত্বে। বাকি ৫০০ বাহিনী ছিল কুইক রেসপন্স টিম, নাকা চেকিং ইত্যাদির জন্য। কমিশনের তরফে জানানো হয় চার পুরনিগমের নির্বাচনের জন্য সশস্ত্র বাহিনী ছিল, ছিল লাঠিধারীও। ১০০ শতাংশ বুথেই ছিল সিসিটিভি।
Be the first to comment