রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বারবার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলা কখনও অসম হবে না। এই রাজ্যে কখনওই এনআরসি সিএএ চালু করতে দেবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমনটাই বারবার জানিয়েছিলেন। এ বার, বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেন রাজ্যে সিএএ চালু হবে। ২০২৪-এর আগেই রাজ্যে সিএএ চালু হবে বলেই এদিন দাবি করেন বিজেপি নেতা। ২০২৪-এই রয়েছে লোকসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকেই তৈরি হচ্ছে রাজনৈতিক শিবিরগুলি। তার আগে বিজেপি নেতার এই মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আবহেও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে হাতিয়ার করেছিল গেরুয়া শিবির।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে শমীক বলেন, “২০২৪-এর আগেই রাজ্যে সিএএ চালু হবে। সেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।” বিজেপি নেতার এই মন্তব্যে জল্পনা তুঙ্গে। বস্তুত, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে আগেই সরব হয়েছিল মতুয়া গড়। বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বারবারই সিএএ চালুর পথে জোর দিয়েছিলেন। বিধানসভা নির্বাচন আবহে, খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলেই সিএএ চালু হবে। পরে অবশ্য সেই ঘোষণা থেকে সরে আসে বিজেপি। দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছিলেন, সিএএ চালু করা যাবে না। এমনকী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই সিএএ চালু করা যাচ্ছে না এমনটাও অভিযোগ করেছিলেন তিনি।
এদিকে, সিএএ চালু না হওয়ায় মতুয়া গড়ে বেশ অসন্তোষ দেখা দেয়। খোদ বিজেপি সাংসদ শান্তনু দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছাড়া আর কেউই মতুয়াদের স্বার্থ নিয়ে চিন্তিত নন। এরমইমধ্যে পদ্মশিবিরের নতুন রাজ্য কমিটির তালিকা সামনে আসতেই দলের অন্দরের কোন্দল সামনে চলে আসে। একে সিএএ চালু না হওয়া, উপরন্তু নতুন রাজ্য কমিটিতে একজন মতুয়া প্রতিনিধির না থাকা, সব মিলিয়েই ক্ষোভে দলের হোয়াটস্যাপ গ্রুপ ত্যাগ করেন শান্তনু। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে দলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের নিয়ে বনভোজন থেকে শুরু করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়া একাধিক ক্ষেত্রে ঠাকুরনগরের সাংসদ স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন তাঁর ক্ষোভ যে রয়েছে।
এদিকে, নির্বাচনে বিজেপির জন্য একটা বড়ো মার্জিনের ভোট মতুয়াদের থেকে প্রাপ্ত হয়। লোকসভা নির্বাচন হোক বা বিধানসভা নির্বাচন, মতুয়া-গড়ে সিএএ ইস্যু ছিল বিজেপির তুরুপের তাস। যদিও, একুশের নির্বাচনেও সেই মতুয়া ভোটের কিছু অংশ গিয়েছে তৃণমূলের ঘরে। কিন্তু,তাতেও বিশ্লেষকরা বলেন, বিজেপির একচেটিয়া আধিপত্যে তাতে বিশেষ প্রভাব পড়েনি। অথচ, সিএএ চালু না হওয়ায় পদ্ম শিবিরের প্রতি কার্যত অনাস্থা দেখা দিয়েছে। খোদ দলের সাংসদই দলের উপর আস্থা রাখতে পারছেন না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
অন্যদিকে, বরাবরই সিএএ-এর বিরোধী তৃণমূল। খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের সাংসদ বিধায়কেরা বারবার দাবি করে এসেছেন, বাংলায় কোনওভাবেই সিএএ চালু করা যাবে না। কারণ, সকলেই বাংলার নাগরিক। তৃণমূল সুপ্রিমো একাধিকবার তাঁর নির্বাচনী জনসভা থেকে প্রচার করেছিলেন, বাংলায় তিনি সিএএ চালু করতে দেবেন না। এখন রাজ্যে পুরভোটের আবহ। তার আগে নাগরিকত্ব ইস্যুকে কেন্দ্র করে সিএএ নেতার এই মন্তব্য রাজনৈতিক কৌশল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
Be the first to comment