ঠিক যেন কোনও অ্যাকশন থ্রিলার সিনেমার শুটিং। বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের সরিষাহাটে জাতীয় সড়কের উপর জোড়া খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুরভোটের আগে যুব তৃণমূল নেতার মৃত্যুতে রাজনীতির গন্ধ পাওয়া গেলেও পরে জানা যায়, রাজনীতি নয়, জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদ ও পারিবারিক আক্রোশের জেরেই এই খুন। ঘটনায় মারধরের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া অপর দুষ্কৃতী ও নিহত যুবনেতার ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুরু হয়েছে তদন্ত।
নিহত যুব তৃণমূল নেতার নাম নুর সালাম বেগ (৩৭)। বাগদা মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা নুর পাতড়া অঞ্চল যুব তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল সওয়া সাতটা নাগাদ ডায়মন্ড হারবার থানার সরিষাহাট থেকে মাছ কিনে বাড়ি যাওয়ার জন্য মোটরবাইকে উঠছিলেন নুর। তখনই মুখে কালো কাপড় বাঁধা বাইক আরোহী চার দুষ্কৃতী তাঁকে ঘিরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে শুরু করে। ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর একটি মিষ্টির দোকানের সামনে লুটিয়ে পড়েন যুব তৃণমূল নেতা। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ব্যবসায়ী ও পথচারী সাধারণ মানুষ।
কয়েক মুহূর্তের বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা আততায়ীদের তাড়া করে ঘটনাস্থল থেকে ২০০ মিটার দূরে দুই দুষ্কৃতীকে ধরে ফেলেন। সেখানেই গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় সরিফুদ্দিন মোল্লা (৩২) নামে এক দুষ্কৃতীর। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে অপর অভিযুক্ত মইনুল ওরফে রাজা মল্লিককে উদ্ধার করে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃত নিহত যুবনেতার ভাই নুরুদ্দিন বেগকেও। ধৃতদের শুক্রবার ডায়মন্ড হারবার এসিজেএম আদালতে তোলা হবে।
কিন্তু, কী কারণে প্রকাশ্যে এমন নৃশংসভাবে খুন? নিহত যুব তৃণমূল নেতা নুর সালাম বেগের স্ত্রী রেণুজা বিবি জানান, তাঁর বোন ঝুম্পার বিয়ে হয়ছিল দেওর নুরুদ্দিন বেগের শ্যালক সরিফুদ্দিনের সঙ্গে। কিন্তু সাংসারিক গণ্ডগোলে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তারপরও ঝামেলা থামেনি। তাছাড়াও প্রতিবেশী রফিক মোল্লা ও তাঁর ছেলে মইনুল ওরফে রাজার সঙ্গেও জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল নুর সালামের। দুই কারণেই এদিন তাঁর স্বামীকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পর ঝুম্পা বিবি তাঁর বছর পাঁচেকের পুত্রসন্তানকে নিয়ে একাই থাকতেন। শ্যালিকার সংসার চালাতে মীমাংসা বৈঠকে নুর সালামের চাপে পড়ে সরিফুদ্দিনকে দেড় লক্ষ টাকা স্ত্রীকে দিতে হয়েছিল। তা নিয়ে নুর সালামের উপর ক্ষোভ ছিল সরিফুদ্দিনের।
এদিকে, প্রতিবেশী রাজাদের সঙ্গেও জমিজমা নিয়ে বিবাদের বিষয়টি জানতে পেরে সরিফুদ্দিন ও রাজা মিলে নুর সালামকে খুনের ছক কষে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের দোকানে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখছে ডায়মন্ড হারবার থানার পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই পলাতক আরও দুই বাইক আরোহী দুষ্কৃতীর খোঁজে শুরু হয়েছে জোর তল্লাশি।
Be the first to comment