তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে ফের অভিষিক্ত হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের নবনির্মিত জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এককভাবেই সর্বভারতীয় সাধাপণ সম্পাদকের দায়িত্ব সামলাবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে বৃত্তের বাইরে রাখা হবে না, এমন খবর সকাল থেকেই একাধিক সূত্র মারফত পাওয়া যাচ্ছিল।
শেষ পর্যন্ত তৃণমূলে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক শেষে হলও তাই। পদ ফিরে পেলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে যেমনটা শোনা যাচ্ছিল, একাধিক সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাখা হতে পারে, সেই পথে শেষ পর্যন্ত হাঁটলেন না মমতা। অভিষেক একাই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করবেন।
দেখে নেওয়া যাক কে কোন দায়িত্বে থাকছেন –
সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে থাকছেন – অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
দলের সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতির দায়িত্বে থাকছেন – যশোবন্ত সিনহা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও সুব্রত বক্সি।
কোষাধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে – অরূপ বিশ্বাসকে।
সমন্বয়কারী – ফিরহাদ হাকিম।
আর্থিক ও বিদেশ নীতি নির্ধারক – যশোবন্ত সিনহা, অমিত মিত্র সহ অন্যান্যরা।
জাতীয় মুখপাত্র – সুখেন্দু শেখর রায়।
রাজ্যসভায় মুখপাত্র – সুখেন্দু শেখর রায়।
লোকসভায় মুখপাত্র – কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তাঁকে সাহায্য করবেন মহুয়া মৈত্র।
উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতে সংগঠনের দায়িত্বে – সুষ্মিতা দেব, মুকুল সাংমা, সুবল ভৌমিক।
এছাড়া সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি যশবন্ত সিনহা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সুব্রত বক্সী। দলের কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন অরূপ বিশ্বাস। এছাড়াও সমন্বয়কারী হিসাবে ফিরহাদ হাকিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলের আর্থিক নীতি নির্ধারণ করবেন অমিত মিত্র এবং যশবন্ত সিনহা-সহ কয়েকজন। দলের জাতীয় মুখপাত্র হচ্ছেন সুখেন্দুশেখর রায়। রাজ্যসভার মুখপাত্রও হচ্ছেন সুখেন্দুবাবু। তাৎপর্যপূর্ণভাবে লোকসভায় দলের মুখপাত্র হচ্ছেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার। শুক্রবার জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে দলের এই দায়িত্ববণ্টন ছাড়া বাকি তিন পুরনিগমের মেয়রের নাম ঘোষণা করল ঘাসফুল শিবির। সবথেকে বেশি জল্পনা ছিল বিধাননগর নিয়ে। কৃষ্ণা চক্রবর্তী ও সব্যসাচী দত্তের নাম ঘোরাফেরা করছিল। অবশেষে কৃষ্ণাকেই মেয়র হিসেবে বেছে নিলেন মমতা। আর এক প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচী দত্তের নাম ঘোষণা হল চেয়ারম্যান হিসেবে। ডেপুটি মেয়র অনিতা মণ্ডল।
নাম ঘোষণা হওয়ার পরই আবেগে ভাসলেন কৃষ্ণা। জল, আলো, রাস্তা সহ সব কাজে নজর দিতে হবে বলে উল্লেখ করলেন তিনি। বললেন, ‘দিদির সঙ্গে দেখা করবই। দিদি ছাড়া আমার আর কে আছে!’
অন্যদিকে, আসানসোল পুরনিগমের মেয়র হলেন বিধান উপাধ্যায়, ডেপুটি মেয়র হিসেবে নাম ঘোষণা হল ওয়াসিমুল হক ও অভিজিৎ ঘটকের আর চেয়ারম্যান হলেন অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়। সাধারণত পুরনিগমে একজন ডেপুটি মেয়রই থাকেন। তবে আসানসোলে দু’জনের নাম চূড়ান্ত হওয়ায় বিধানসভায় পুর আইনে সংশোধনী আনা হবে বলেই জানান ফিরহাদ হাকিম।
চন্দননগরের মেয়র হচ্ছেন রাম চক্রবর্তী। চেয়ারম্যানের নাম এখনও চূড়ান্ত নয়। তবে শিলিগুড়ি পুরনিগমের মেয়র হিসেবে গৌতম দেবের নাম আগেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পাশাপাশি উত্তরপূর্বের রাজ্যেগুলিতে দলের সংগঠন দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুস্মিতা দেবকে। এদিনের বৈঠকে ভিনরাজ্য থেকেও নেতারা এসেছিলেন। ডাকা হয়েছিল মেঘালয়ের মুকুল সাংমা, উত্তরপ্রদেশের রাজেশপতি ত্রিপাঠী, ত্রিপুরার সুবল ভৌমিক, গোয়ার লুইজিনহো ফ্যালেইরো, হরিয়ানার অশোক তানোয়ারকে। এরাই ওই রাজ্যগুলিতে তৃণমূলের সংগঠন বৃদ্ধির দায়িত্ব পেয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি নতুন কর্মসমিতির সদস্যদের নাম ঘোষণা করলেও কোনও পদাধিকারীর নাম ঘোষণা করেনি তৃণমূল। কর্মসমিতির সদস্যরা পদাধিকারী নির্ধারণের ভার দলনেত্রীর উপরেই ছেড়েছিলেন। তারপর থেকেই তৃণমূলে অভিষেকের অবস্থান নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। দলের বর্ষীয়ান নেতাদের সঙ্গে অভিষেকের সম্পর্ক নিয়েও বহু লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত সব জল্পনা-গুজব উড়িয়ে কার্যত আগের মতোই কমিটি গড়ে দিলেন মমতা। যাতে নবীন এবং প্রবীণদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করা হয়েছে। অভিষেককে যেমন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল করা হল, তেমনি দলের সিনিয়র নেতা সুব্রত বক্সিকে করা হল সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। সর্বভারতীয় স্তরে গ্রহণযোগ্য মুখ হিসাবে সহ-সভাপতি করা হয়েছে যশবন্ত সিনহাকে। মহিলা মুখ হিসাবে সহ-সভপতি হয়েছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এছাড়াও অরূপ বিশ্বাস এবং ফিরহাদ হাকিমরাও গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।
সূত্রের খবর, এদিন কর্মসমিতির বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাইকে একসঙ্গে চলার বার্তা দিয়েছেন। কর্মসমিতির সদস্যদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিন কর্মসমিতির বৈঠকের আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন তৃণমূলে নেত্রী। পরে অভিষেক এবং মমতা পৃথকভাবে বৈঠক করেন ফিরহাদ হাকিম, মলয় ঘটকদের সঙ্গেও।
Be the first to comment