জীবনের বড় বড় পরীক্ষা দেওয়ার আগেই নানা ধরনের দুশ্চিন্তায় ভোগে পড়ুয়ারা। কখনও আত্মবিশ্বাসের অভাব, কখনও আবার দুশ্চিন্তার জেরে ভাল ফল করা সম্ভব হয় না। পরীক্ষার আগে পড়ুয়াদের এই সংক্রান্ত যাবতীয় দুশ্চিতা দূর করতেই সরাসরি পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রতি বছরই তিনি ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ নামক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন, যেখানে পড়ুয়া, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যার কথা জানতে চান এবং প্রয়োজনে উপযুক্ত পরামর্শও দেন।
‘পরীক্ষা পে চর্চা’র অনুষ্ঠানের পঞ্চম বর্ষে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী পড়ুয়াদের উদ্দেশে বলেন তারা যেন পরীক্ষাকে জীবনের একটি অঙ্গ হিসাবেই গণ্য করে। একইসঙ্গে অভিভাবকদেরও সতর্ক করেন তারা যেন সন্তানদের উপরে নিজেদের আশা-প্রত্যাশা চাপিয়ে না দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তালকাটোরা স্টেডিয়ামে পড়ুয়াদের তৈরি করা প্রকল্পগুলি ঘুরে ঘুরে দেখেন। পড়ুয়াদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার শুরুতেই তিনি পরামর্শ দেন, পরীক্ষার সময় পড়ুয়ারা যেন সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকেন। তিনি বলেন, “পরীক্ষার প্রস্তুতির মাঝে সারাদিনে যেন এমন একটা সময় থাকে, যখন তোমরা না অনলাইন থাকবে, না অফলাইন। বরং ইন-লাইন বা সঠিক পথে থাকবে। অফলাইনে পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যমকেও ব্যবহার করে নিজের ভিত মজবুত করো। অনলাইন মাধ্যম তোমাদের পড়াশোনার পরিধি বাড়াবে, কিন্তু তোমরা যদি বিভ্রান্ত হতে থাকো বা পড়াশোনায় মন না বসে, তবে নিজেকে শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতে মোবাইলে বিভিন্ন টুল ব্যবহার করো।”
কয়েকজন পড়ুয়া জানতে চান যে, পড়ার মাঝে তাদের যে মনোযোগ বিঘ্নিত হয়, তা কীভাবে দূর করবেন। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার একটা প্রশ্ন রয়েছে। যখন তোমরা অনলাইনে পড়াশোনা করো, তখন কী তোমরা পড়ো নাকি রিল দেখ? আমার মনে হয় তোমরা বুঝতে পেরে গিয়েছ যে তোমাদের হাতেনাতে ধরে ফেলেছি আমি।”
তিনি আরও যোগ করে বলেন, “এটা অনলাইন বা অফলাইনের প্রশ্ন নয়। অনেক সময়ই শরীর ক্লাসরুমে থাকে, চোখ শিক্ষকের দিকে থাকে, কিন্তু কোনও কিছুই কানে ঢোকে না। কারণ আমাদের মন অন্য কোথাও থাকে। কোন মাধ্যমে পড়াশোনা করছি, সেটা সমস্যা নয়, আমাদের মনোযোগই আসল বিষয়।”
গুরুকুলের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গুরুকুলে তো ছাপানো কোনও পাতা ছিল না। শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র শুনেই পাঠ নিতেন, মৌখিকভাবে তাদের পঠনপাঠন চলত। এখন কেবল বিবর্ত়ন হয়ে অনলাইন মাধ্যম এসেছে। পড়ুয়াদের উচিত অনলাইন শিক্ষাকে সমস্যা নয়, একটা সুযোগ হিসাবে গণ্য করা।”নারীশিক্ষার উপরে বিশেষ জোর দিয়ে নমো বলেন, “আমি দেখেছি যে অনেক মা-বাবাকেই বৃদ্ধাশ্রমে রেখে ছেলেরা সুখেশান্তিতে রয়েছে। আবার এটাও দেখেছি যে অনেক মেয়েরাই তাঁর মা-বাবার দেখভাল করার জন্য বিয়ে করছেন না। ছেলে ও মেয়েকে সমাজে সম গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।”
পরীক্ষার্থীদের মনোবল বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী পরীক্ষাকে জীবনের একটি অংশ হিসাবেই গণ্য় করার পরামর্শ দেন। পরীক্ষার সময় যে অভিজ্ঞতা হয় আমাদের, তা পরবর্তী সময়ে কাজে আসে বলেও জানান তিনি। পরীক্ষা এলেই নিজেদের গোটা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন না করে দিয়ে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মেলামেশা করার এবং আত্মবিশ্বাস ও আনন্দের সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
Be the first to comment