বঙ্গ বিজেপিতে আদি-নব্য দ্বন্দ্বের মাঝেই এবার বোমা ফাটালেন দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের প্রতি কার্যত অনাস্থা প্রকাশ করলেন দিলীপ। দলের মধ্যে শুরু হয়েছে মুষলপর্ব। পুরনো নেতা-কর্মীদের বিদ্রোহ, ক্ষোভ-বিক্ষোভ অব্যাহত। আর সেজন্য পরোক্ষে বর্তমানকেই এদিন দায়ী করলেন প্রাক্তন। প্রকাশ্যেই দিলীপবাবুর মন্তব্য, সুকান্তর অভিজ্ঞতা কম, দলের যোগ্য লোকেদের বাদ দিলে হবে না। বিক্ষুব্ধ শিবির এতদিন যে অভিযোগে সরব, তা এবার সরাসরি শোনা গেল দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতির মুখে।
বৃহস্পতিবার দিলীপ ঘোষ বলেন, “সুকান্ত সবে দায়িত্ব পেয়েছেন। ওঁর অভিজ্ঞতা কম। দলে পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। যাঁরা এতদিন আন্দোলন করেছেন তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যাঁদের বিশ্বাস করে মানুষ রাস্তায় নেমেছেন তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যোগ্য লোকেদের গুরুত্ব দিতে হবে।” এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। পরে সংবাদমাধ্যমে আরও বিস্ফোরক কথা বলেছেন মেদিনীপুরের সাংসদ। দলের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “খামতি তো আছেই। তাই ফলাফল ঠিকমতো আসছে না। পার্টির নেতৃত্বে যখন আমি ছিলাম বলেছিলাম ভাল হোক, মন্দ হোক আমার দায়িত্ব। দায়িত্বে যাঁরা আছেন তাঁদের বুঝতে হবে। পুরনো লোকেদের বাদ দিলে শূন্যস্থান পূরণ হয় সেটাই হয়েছে।”
নির্বাচনে সাফল্য না আসায় দলের কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ছে। এদিন বিজেপির (BJP) রাজ্য সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভও দেখায় দলীয় কর্মী-সমর্থকরা। দলের গ্রাফ নামছে, একথা স্বীকার করে নিয়েই দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যে অস্বস্তিতে বঙ্গ বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবির। দলের বর্তমান সমস্যা সমাধানের অধিকার তাঁর নেই, সেকথা বলে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি বলেছেন, “উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েছি। রাজ্য নেতৃত্বকে ভুল ধরিয়ে দিয়েছি। বোঝাতে চেয়েছি। তাঁরা বলেছেন সময় লাগবে। কিন্তু সেটা অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।” সুকান্ত, অমিতাভ ও শুভেন্দু শিবিরকে নিশানা করে দিলীপবাবুর আরও অভিযোগ, যাঁদের বাদ দেওয়া হচ্ছে সবার সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। পুরনো কর্মীদের কথা শোনা হচ্ছে না। তাই হতাশ হয়েই তারা এসব কাজ করছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অবশ্য দিলীপ ঘোষের মন্তব্য নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। সুকান্তর বক্তব্য, বিজেপি নেতৃত্বের কথার কোনও প্রতিক্রিয়া দেব না। এদিকে, দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যের পর বিজেপির অন্তর্কলহ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। কুণাল বলেন, “আমরা তো আদি বিজেপি বনাম তৎকাল বিজেপি বনাম পরিযায়ী বিজেপি, এটা তো আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে এসেছি। দিলীপবাবুকে যেভাবে সরিয়ে দিয়ে সুকান্তবাবুরা ক্ষমতা দখল করেছেন এবং ক্রমাগত হেরেই চলেছেন। তাই দলের মধ্যে থেকে আওয়াজ উঠছে নতুন নেতাদের সঙ্গে সংগঠনের সম্পর্ক নেই। তাদের নেতৃত্বের যোগত্যা, অভিজ্ঞতাই নেই। এখন সুকান্তর উচিত দিলীপবাবুর পাঠশালায় গিয়ে রাজনীতির পাঠ শেখা।”
Be the first to comment