অবশেষে বাস্তবায়নের পথে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান। এতদিন বরাদ্দ টাকার অংশীদারিত্ব নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে টানাটানি চলছিল। এবার রাজ্যের দাবি মেনে কেন্দ্র এই প্রকল্পের মোট বরাদ্দ অর্থের ৬০ শতাংশ দিতে রাজি হয়েছে। শনিবার এমনটাই জানিয়েছেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। মন্ত্রীর এমন ঘোষণায় আশায় বুক বাঁধছে ঘাটালের বাসিন্দারা। এবার হয়তো বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে পশ্চিম মেদিনীপুরের এই ব্লকের গ্রামগুলি।
ঘাটার মাস্টার প্ল্যান প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী বলেন, “অনেকদিন ধরেই আমরা কেন্দ্রের কাছে ৬০ শতাংশ টাকার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। অবশেষে কেন্দ্র রাজি হয়েছে। তবে যতক্ষণ না অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে, ততক্ষণ বলা মুশকিল কবে থেকে এই প্রকল্প শুরু হবে।” একইসঙ্গে তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করতে মোট খরচ ১২৮০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে রাজ্য ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে।
গত কয়েক দশক ধরেই ঘাটালের বন্যা রাজ্য প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ। প্রতিবছর বর্ষায় বানভাসী হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের এই অংশ। গতবছর ঘাটালের দুরবস্থা দেখতে গিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জলে নেমে কথা বলেছিলেন স্থানীয়দের সঙ্গে। সেই সফরেই তিনি ফের ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের আবেদন কেন্দ্রের কাছে জমা করতে নির্দেশ দেন। গত বছর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে ফের নবান্ন চিঠি দেয় কেন্দ্রকে। নীতি আয়োগ এবং কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যের সাংসদ এবং মন্ত্রীরা। সেই প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন ঘাটালের সাংসদ অভিনেতা দেবও। দীর্ঘ দড়ি টানাটানির পর অবশেষে বরাদ্দ নিয়ে জট খুলল। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য আগেই জানিয়েছিলেন, কেন্দ্র টাকা দিক না দিক রাজ্য বাস্তবায়িত করবে এই প্রকল্প।
ঘাটাল এলাকায় মূলত শিলাবতী, কংসাবতী এবং দ্বারকেশ্বর নদের শাখা নদী ঝুমির লীলাভূমি হিসাবে পরিচিত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলস্বরূপ স্থানীয় ভূস্বামীরা এই নদীগুলির বন্যা প্রবণতা ঠেকাতে সার্কিট বাঁধ দিয়ে নিজেদের জমিদারীতে নিচু এলাকাগুলিকে বন্যা থেকে বাঁচিয়ে আবাদি জমি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। সেই জমিদার নেই। কিন্তু জমিদারি বাঁধগুলি আজও রয়ে গিয়েছে। এই জমিদারি বাঁধগুলি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। তার ফলে বাঁধগুলি ভেঙেই মূলত ঘাটাল এলাকায় বন্যা দেখা দেয় ফি বছর। উলটোদিকে জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি নদী বাঁধ উপচে ছড়িয়ে পড়তে না পেরে নদীতেই জমতে থাকে পলি মাটি। ফলে নদীর জল ধারণ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আর ফি বছর বন্যা প্রবণতাও বাড়তে থাকে। এবার সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন ঘাটালবাসী।
Be the first to comment