সবুজে ঘেরা ঝাউবন আর নীল আকাশ মাথায় নিয়ে বঙ্গোপসাগরের বুকে পশ্চিমবঙ্গের যমজ সী বিচ- বকখালি ও ফ্রেজারগঞ্জ। এখানকার মিঠে রোদ যেন সোনালি পাতে মোড়া। এর শান্ত-স্নিগ্ধ-সুমধুর পরিবেশ সমুদ্র বিলাসীদের পুলকিত করে। সারাবছর যাত্রী এলেও অক্টোবর থেকে মার্চ মাস বকখালি ও ফ্রেজারগঞ্জ যাওয়ার জন্য আদর্শ সময়। সপ্তাহের শেষে ছুটি কাটাবার এ এক আদর্শ জায়গা। মকরবাহিনী গঙ্গা, ব্যাঘ্রবাহিনী দেবী, বিশালক্ষী ও বনবিবির মন্দির আছে বকখালির অমরাবতী গ্রামে। তেমনই বকখালি বাস স্ট্যান্ডের পিছনে সাঁকো পেরিয়ে বা বীচ ধরে দেখে নেওয়া যায় সংরক্ষিত বন, ইঞ্জিন খাল, ম্যানগ্রোভ অরণ্য বকখালিতে। হেতাল, গরান ও সুন্দরী গাছের অরণ্যে হরিণ, বাঁদর, দাঁতাল শুয়োর ছাড়াও সুন্দরবনের সুন্দরী গাছের সঙ্গে ডিয়ার পার্ক, কুমির প্রকল্প, কচ্ছপ প্রকল্পও দেখে নেওয়া যায়। এখানে সকালে এসে কুমিরদের প্রাতরাশ করার দৃশ্য দেখলেও চোখ জুড়িয়ে যায়।
ফ্রেজারগঞ্জ
বকখালির কাছাকাছি বাসপথেই আরও এক সী বিচ ফ্রেজারগঞ্জ। বাংলার ছোটলাট এনড্রু ফ্রেজার প্রেমে পড়ে যান অতীতের নারায়ণীতলার। পরে সাহেবের নামেই এলাকার নাম হয়ে যায় ফ্রেজারগঞ্জ। সাহেবের উদ্যোগেই গড়ে ওঠে সৈকতনগরী। সবচেয়ে ভালো হবে বাসে না গিয়ে বকখালি বিচ ধরে মাত্র হাফ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে লাল কাঁকড়ার সঙ্গে খেলতে খেলতে ফ্রেজারগঞ্জ পৌঁছে যাওয়া। বকখালি-নামখানার বাসও যাচ্ছে ফ্রেজারগঞ্জ হয়ে। তবে দোকানপাট খুব একটা বেশী নেই ফ্রেজারগঞ্জে। তবুও ফ্রেজারগঞ্জ যেন বড় বেশী মোহময়। তবে এখানকার অন্যতম আকর্ষণ ফিশিং হারবার। সঙ্গে জেলেদের সারাদিন আনাগোনা একটা বাড়তি মাত্রা দেয়।
জম্বুদ্বীপ
শীতের সকালে ঘন্টাখানেকের ভুটভুটিতে সমুদ্র বিহারের স্বাদ নিতে ঘুরেই আসতে পারেন কাছের জম্বুদীপে। নীলজল আর নীল আকাশ দুয়ের অপূর্ব মেলবন্ধন জম্বুদীপ। ম্যানগ্রোভ অরণ্যে বুনো শুয়োর, চিতল, শম্বর, চৌশিঙার দেখা মেলে। পাশাপাশি দেখা মেলে শাঁখামুটি, করাটিয়া, গোখরো, কেউটে, বালিবোড়া ও পাইথনের মতো বিষধর সাপের। এখানে দেখতে পাওয়া যায় অনেক ধরনের পাখিও। লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণভূমি জম্বুদীপ। নীরব, নির্জন, অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ছোট্ট জম্বুদীপ। বিশালক্ষী ও বনবিবির মন্দিরও বেশ দর্শণীয়। কাছেই আছে পরিত্যক্ত লাইট হাউজ।
হেনরী আইল্যান্ড
নামখানা-বকখালি পথে জেটিঘাটের বাঁ দিকের রাস্তায় মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য নিগমের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে প্রায় ২০০ হেক্টরের হেনরি আইল্যান্ড। পর্যটন কেন্দ্রের ১১০টি ভেড়িতে ট্যাংরা, চিংড়ি, ভেটকি, কাঁকড়ার চাষ হচ্ছে। নৌকাও চলছে জলাশয়ে।
কীভাব যাবেন?
কলকাতা থেকে সরিষা- ডায়মন্ড হারবার-কাকদ্বীপ হয়ে নামখানা পৌঁছে হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদী পেরিয়ে প্রাইভেট বাসে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় সমুদ্র সৈকত বকখালি চলুন। শহীদ মিনার থেকে প্রচুর বাস যাচ্ছে নামখানায়। এছাড়াও শিয়ালদহ- লক্ষীকান্তপুর-কাকদ্বীপ- নামখানা লোকাল ট্রেনে চড়ে নামখানা স্টেশনে নেমে সেখান থেকে নদী পেরিয়ে বাসে চড়ে মাত্র ৪৫ মিনিটে পৌঁছে যাওয়া যায় বকখালি।
কোথায় থাকবেন?
থাকার জন্য বকখালিতে আছে ডব্লুবিটিডিসির বকখালি ট্যুরিস্ট লজ। এছাড়াও রাজবালা ট্যুরিস্ট, সাহানা ট্যুরিস্ট, হোটেল অমরাবতী, হোটেল সংযোগ, ওয়েসিস, সাগরকন্যার মতো প্রচুর হোটেল আছে বকখালিতে।
এছাড়াও যদি মনে করেন ফ্রেজারগঞ্জ বা জম্বুদীপে রাত কাটাবেন তাহলেও কোনও সমস্যা নেই। ফ্রেজারগঞ্জে থাকার জন্য বেনফিসের সাগরী ও সাগরকন্যা হোটেল রয়েছে। আর বাস রাস্তায় রয়েছে হোটেল দীপক, সাগরবেলা ছাড়াও বহু হোটেল।
পাশাপাশি জম্বুদীপে থাকার জন্যও হোটেল পাওয়া যায়।
Be the first to comment