দেবী কালী নিয়ে তাঁর মন্তব্যে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি ৷ বিজেপি অবিলম্বে তাঁর গ্রেফতারির দাবিতে এককাট্টা ৷ বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে অভিযোগ ৷ তাঁর নিজের দলও এই ইস্যুতে তাঁর পাশে নেই বরং আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর মন্তব্যের নিন্দা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ এতকিছুর পরও নিজের মন্তব্যে অনড় কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। পরের পর টুইটে আরও ঝাঁজালো হয়েছে তাঁর কণ্ঠস্বর। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে কোনও কিছুকেই তিনি ভয় পান না ৷ কেন নূপুর শর্মা আর তাঁকে এক গোত্রে ফেলা যাবে না, আইন তুলে ধরে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি ৷
বিজেপিকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, মৃত্যু পর্যন্ত তিনি নিজের বক্তব্যে অনড় থাকবেন ৷ মহুয়ার হুংকার, আপনাদের এফআইআর ফাইল করুন, দেশের সব আদালতে আপনার সঙ্গে দেখা করব ৷ প্রমাণ করুন যে আমি ভুল ৷ কালী নিয়ে মন্তব্যের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন থানায় এমনকী রাজ্যের বাইরেও থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ৷ তাঁর গ্রেফতারির দাবিতে সরব হয়েছে বঙ্গ বিজেপি ৷ তবে একের পর এক টুইটে নরেন্দ্র মোদির দলের বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দেগেছেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ।
তাঁর শেষ টুইটে তিনি লিখেছেন, আমি এমন ভারতে বাস করতে চাই না, যেখানে হিন্দুধর্মের প্রতি বিজেপির একচেটিয়া পিতৃতান্ত্রিক ব্রাহ্মণ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রাধান্য পাবে এবং আমাদের বাকিরা ধর্মের চারপাশে টোকা দিতে থাকবে। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজের বক্তব্যের পক্ষে থাকব ৷ আপনারা এফআইআর ফাইল করুন – দেশের প্রতিটি আদালতে আপনার সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
পয়গম্বর নিয়ে মন্তব্যের জন্য নূপুর শর্মাকে যখন গ্রেফতারির দাবি উঠেছে, তখন কালী নিয়ে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্যের পরও মহুয়াকে কেন ছাড় দেওয়া হবে এই প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য় বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ পদ্ম শিবিরের অন্যান্য সদস্যরা ৷ একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন মহুয়া ৷ রীতিমতো আইনের ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন কোথায় নূপুর শর্মা ও তাঁর ক্ষেত্রটি আলাদা ৷
তৃণমূল সাংসদের কথায়, নূপুর শর্মা পয়গম্বরকে নিন্দা করেছেন, আর আমি দেবীকে সেলিব্রেট করেছি ৷ বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি আরও বলেন, আমি যে ভুল সেটা প্রমাণ করে দেখাক, আমি চ্যালেঞ্জ করছি বিজেপিকে ৷ বাংলার যেখানেই তারা মামলা দায়ের করবে, সেখানেই ৫ কিলোমিটারের মধ্যে কালীমন্দির পাবে ৷ যেখানে কালী এভাবেই পুজিত হন ৷
মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীর কাল ভৈরব মন্দির এবং অসমের কামাক্ষ্যা মন্দিরের উল্লেখ করে, মহুয়া দুই রাজ্যের বিজেপি সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, সাহস থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে হলফনামা দিক তারা ৷ উল্লেখ্য, বুধবার ভোপালের একটি থানায় ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগে মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷
তিনি নিজের অবস্থান থেকে একচুল না সরলেও তাঁর দল এ বিষয়ে তাঁকে সঙ্গ দেয়নি ৷ এ বিষয়টি নিয়ে অবশ্য বিশেষ ভাবছেন না মহুয়া ৷ বরং আত্মবিশ্বাসের সুরে তিনি বলেছেন, “এটা আমার আর দলের মধ্যেকার ব্যাপার ৷ এটা আমি সংবাদমাধ্যমের সামনে আনব না ৷ আমি নিশ্চিত এই বিষয়টি আমরা যথাযথ ভাবে মিটিয়ে নেব ৷ আমি দল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃঢ় সৈনিক ৷ আমার মনে হয় না, দলের সঙ্গে আমার কিছু হয়েছে ৷ আর যা-ই হোক সেটা আমাদের নিজেদের মধ্যেই মিটে যাবে ৷”
Be the first to comment