প্রস্তুত একুশের মঞ্চ, ৪৮ ঘণ্টা আগেই সমাবেশ নিয়ে ঘাসফুল শিবিরে বাড়ছে আগ্রহ

Spread the love

একুশে জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবস নিয়ে ধর্মতলায় প্রস্তুতি তুঙ্গে। সমাবেশের ৪৮ ঘণ্টা আগে মঙ্গলবার সেখানে চলছে শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি। মূল সমাবেশ মঞ্চ হিসাবে তিনটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে। একদিকে মঞ্চ বাঁধার কাজ চলছে, অন্যদিকে বাইরের জেলা থেকে আগত কর্মী সমর্থকদের দেখভাল করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এদিন ছিল তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের ব্যস্ততার দিন। যেহেতু দু’বছর পরে ধর্মতলায় ফিরেছে শহিদ দিবস উদযাপন তাই মঞ্চ প্রস্তুতি থেকে সব ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে চমক।

মূল সমাবেশের জন্য যে তিনটি মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে, সেটি অন্যান্য বাড়ির তুলনায় আকারে অনেক বড়। তৃণমূল সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেস যেহেতু সর্বভারতীয় দল, তাই সর্বভারতীয় নেতাদের নিয়ে প্রায় ৫০০ জন বসতে পারেন, এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। মূল মঞ্চটি মাটি থেকে ৪৩ ফুট উঁচু। দৈর্ঘ্য-প্রস্থ যথাক্রমে ৮০ ও ৪৬ ফুট। একুশে জুলাইয়ের দিন আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও খোলা মঞ্চই তৈরি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর এই মঞ্চ ঘেরা হয়েছে দলীয় পতাকা তেরঙ্গার রঙে ৷

তিনটি মঞ্চের একটিতে থাকবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা দলের প্রথম সারির শীর্ষ নেতৃত্ব। দ্বিতীয় মঞ্চে থাকবেন শহিদ পরিবারের সদস্যরা। তৃতীয় মঞ্চে থাকবেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। এবার মঞ্চ তৈরির ক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যাতে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের একটি মলের কাছ থেকে শুরু করে পার্ক স্ট্রিট ফ্লাইওভারের নিচে দাঁড়িয়েও যাতে তৃণমূল সমর্থকরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে পান। ঢাকা মঞ্চ দৃষ্টিপথে বাধার তৈরি করতে পারে। সেই কারণে খোলা মঞ্চের ব্যবস্থা। অতীতেও খোলা মঞ্চে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বক্তব্য রেখেছেন তৃণমূল নেত্রী। এবার বৃষ্টি হলে তার ব্যতিক্রম হবে না।

এবার একুশে জুলাই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে চোখে পড়ার মতো। ধর্মতলা এলাকাকে এ, বি, সি, ডি-এই চারটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। মূল মঞ্চে ভিআইপি থাকবেন যেখানে, সেটি এ জোন। মঞ্চের পেছনে সিইএসই-র দফতর পড়ে যাচ্ছে বি জোনে। এরপর তার পরবর্তী অংশ এবং সাংবাদিকদের বসার জায়গা যথাক্রমে সি এবং ডি জোনে ভাগ করা হয়েছে।

প্রত্যেকজনেই আলাদা করে একজন ডিসি ব়্যাঙ্কের অফিসার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। এছাড়া কেসি দাস, ভিক্টোরিয়া হাউজ এবং টিপু সুলতান মসজিদের ছাদ থেকে চলবে নজরদারি। এখন থেকেই গোটা ধর্মতলা চত্বর নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার চাদরে মোড়া হয়েছে।

জানা গিয়েছে, মূল সমাবেশের দিন এই কর্মসূচি সামলাতে ধৰ্মতলা-সহ শহর জুড়ে থাকবে হাজার তিনেকের বেশি পুলিশ। একই সঙ্গে প্রস্তুত রাখা হয়েছে হাই রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড, রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড, কুইক রেসপন্স টিম, মোবাইল পেট্রোলিং ভ্যান৷ সামগ্রিকভাবে একুশে জুলাইয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন ডিসি পদমর্যাদা অফিসার, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার-সহ লালবাজারের শীর্ষকর্তারা দায়িত্বে থাকছেন।

মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হাফিজুলের প্রবেশের পর সর্বত্রই মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, খুব স্বাভাবিকভাবেই এবার একুশে জুলাই কর্মসূচির ক্ষেত্রেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে পুলিশ-প্রশাসন । আজ কলকাতার পুলিশ কমিশনার স্বয়ং নিজে এসে একুশে জুলাইয়ের সমাবেশ মঞ্চ পরিদর্শন করে তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে মিটিং করেছেন । দিনের শেষে সামগ্রিক প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে ঘুরে গিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি, দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

এদিন একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দু’বছর ২১ শে জুলাইয়ের কোনও সমাবেশ করা যায়নি করোনার কারণে। শুধু তাই নয়, একুশে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর কোনও বিজয় উৎসবও করেনি তৃণমূল কংগ্রেস। আর এ বছর শাসকদলের প্রথম সমাবেশ তাই সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও উদ্দীপনা রয়েছে। স্বভাবতই শহিদ তর্পণকে কেন্দ্র করেই তাঁরা আবেগে ভাসছেন। একুশে জুলাইয়ের শহিদ মঞ্চে যেমন তর্পণও হবে একই ভাবে আগামিদিনে এই রাজ্য এই দেশ কোনও পথে চলবে সবাই মিলে দলীয় কর্মী শুভানুধ্যায়ীদের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার দিক নির্দেশ দেবেন।

তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের বক্তব্য, একুশের সমাবেশ যে ঐতিহাসিক হতে চলেছে তা এখন থেকেই আঁচ পাওয়া যাচ্ছে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*