পার্থ-অনুব্রতর গ্রেপ্তারির পর সতর্ক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রিসভার সদস্যদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দিলেন তিনি। রদবদলের পর বৃহস্পতিবার নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে মন্ত্রীদের পাইলট কার ব্যবহার করতে বারণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া কাগজপত্রে সই করার আগে ভাল করে দেখে নেওয়ার পরামর্শও দিলেন তিনি।
সাধারণ মানুুষের জন্য বারবার রাস্তায় নেমে কাজ করার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রিসভায় রদবদলের পর প্রথম বৈঠকেও সকলের জন্য কাজ করার বার্তা দেন তিনি। পাইলট কারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি জানান – পাইলট কার ব্যবহার করতে পারবেন না মন্ত্রীরা।
জেলা থেকে কলকাতায় আসলেও পাইলট কার ব্যবহার করা যাবে না।
এতদিন প্রতিমন্ত্রীদের তেমন কোনও কাজ থাকত না। এবার প্রতিমন্ত্রীদের জন্যে আলাদা কাজ ঠিক করে দেবে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর।
তবে উল্লেখযোগ্যভাবে এদিনের বৈঠকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে কিছুটা ধমক দেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকের শুরুতেই তাঁর দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, বালু তোমার নামে এত অভিযোগ শুনছি কেন? পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি রেখে চলো। কেন আমাকে অভিযোগ শুনতে হবে? এরপর নতুন মন্ত্রীদের একাধিক সতর্কবার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী।
তাঁর পরামর্শ- কাগজপত্র ভাল করে পড়তে হবে।
কাগজপত্র পড়ে স্বাক্ষর করতে হবে।
কাগজপত্র ভাল করে বোঝার পরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি’র জালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার অনুব্রত মণ্ডল। রাজনৈতিক মহলের মতে, পার্থ-অনুব্রতর গ্রেপ্তারিতে কার্যত কোণঠাসা শাসকদল। একের পর এক তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীর গ্রেপ্তারিই যেন অক্সিজেন জোগাচ্ছে বিরোধীদের। সে কারণে নতুন মন্ত্রীদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের।
এদিকে, এদিনের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। রাজ্যে শিল্পের প্রসারে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেই জানান তিনি। রাজ্যে ১৮টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইউনিট এবং ৫টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি করা হবে। তার মধ্যে চারটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইউনিটের নাম ঘোষণা করেন চন্দ্রিমা। সেগুলি হল- সিজি ফুডস প্রাইভেট লিমিটেড, বিদ্যাসাগর ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পার্ক, এস এস গ্লোবাস, বার্জার পেন্টস, জুবিলিয়ান ফুড ওয়ার্ক লিমিটেড। এস এস গ্লোবাস, বার্জার পেন্টসের কারখানা তৈরি হবে পানাগড়ে। জুবিলিয়ান ফুড ওয়ার্ক লিমিটেড তৈরি হবে নৈহাটির ঋষি বঙ্কিম শিল্পোদ্যানে। বাকি ১৪টির নাম এখনও ঘোষণা হয়নি। মোট ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। তার ফলে কমপক্ষে ৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
এছাড়া রাজ্যের ২১ হাজার রেশন ডিলারের জন্য এদিন বড়সড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুয়ারে রেশন প্রকল্প চালুর আগে কুইন্টাল পিছু ৯৫ টাকা কমিশন পেতেন রেশন ডিলাররা। তবে এবার অতিরিক্ত ৭৫ টাকা কমিশন দেওয়া হবে। এছাড়া প্রতি মাসে রেশন ডিলারদের ৫ হাজার টাকা ফিক্সড কমিশন দেওয়া হবে। উপভোক্তাদের বাড়িতে রেশন সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার সময় কিছু ক্ষতি হয়। সেই ক্ষতিপূরণ হিসাবে মোট বিক্রি হওয়া রেশন সামগ্রীর ০.২ শতাংশ হ্যান্ডলিং কস্ট দেওয়া হবে ডিলারদের। তবে এদিন ডিএ মামলা প্রসঙ্গ এড়ান চন্দ্রিমা।
Be the first to comment